Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার


"কন্যাসন্তান বাঁচাও" স্লোগানটি আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগেই বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) করেছিলেন। একমাত্র ইসলামই নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা। রাসুলের (সাঃ) আগমনের আগে সামাজিকভাবে নারীদের কোনো মর্যাদাই ছিল না। নারীদের প্রতি করা হতো অমানবিক আচরণ। সেসময়ের জাহেলিয়াত যুগের দিকে তাকালেই তা অনুধাবন করা যায় যে, নারীর মর্যাদা প্রদানে ইসলামের অবদান কত বেশি। বর্তমান সময়ের মতো নারীদের পক্ষে যখন আন্দোলন বা অধিকার অধিকার বলে চিৎকার করার মতো কোনো মানুষ ছিল না; তখন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। সে সময় নারীদেরকে শুধুমাত্র ভোগের সামগ্রী হিসেবেই হেয় তথা অপমানকর দৃষ্টিতে দেখা হত। নারীদের কেনাবেচা করা হত এবং উলঙ্গ করে নাঁচগান করানো হত। সমাজে বিন্দুমাত্র তাদের মর্যাদা ছিল না। ছোট্ট একটি কথাতেই তা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে আর তা হলো ‘অপমান বা পাপ মনে করে কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া ছিল তৎকালীন সময়ের নিত্য দিনের ঘটনা।’

কন্যা হিসাবে জাহেলিয়াত যুগে তার কোন মর্যাদাই ছিল না। কন্যা শিশু জন্মদানকে পাপ বা অপমান মনে করা হতো। যে কারণে কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার পর সে শিশুটির বেঁচে থাকার কোনো অধিকার ছিল না। কন্যা সন্তান হলে লজ্জা-শরমে, মনের কষ্টে কন্যা শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো, বুকে পাথর চাপা দিয়ে হত্যা করা হত। তাছাড়া পৃথিবীর সর্বত্রই কন্যাসন্তান হলে পরিবারের সকলের মুখ কালো হয়ে যেত। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, “যখন তাদের কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফায়সালা খুবই নিকৃষ্ট।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত ৫৮-৫৯)।

কন্যা সন্তান মহান আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে মাতা-পিতার জন্য একটি বিশেষ শ্রেষ্ট নেয়ামত। কন্যা সন্তানকে অপছন্দ করা খাটি মুমিনের পরিচায়ক নয়। কন্যা সন্তান অশুভ নয়, অকল্যানকরও নয়। বরং কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া খোশ কিসমতী ও সৌভাগ্যের নিদর্শন। হজরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ঐ পিতামাতা অধিক বরকতময়, যার প্রথম সন্তান হয় মেয়ে।”

রাসুল (সাঃ) বললেন, কন্যা সন্তান যে ঘরে প্রথমে জন্মগ্রহণ করবে সেই ঘরে আল্লাহ তায়ালা রহমত নাজিল করবেন। ঘোষণা করে দিলেন যার একটি কন্যা সন্তান আছে সে একটি জান্নাতের মালিক। তিনি নিজে তার কন্যা সন্তানকে ভালবেসে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন কিভাবে ভালবাসতে হয় তাদের। কোথাও গেলে মেয়ে ফাতিমাকে বলে যেতেন আবার ফিরে আসলে প্রথমে মেয়ের সাথেই দেখা করতেন।

কন্যা সন্তান জন্ম হওয়াটাকে আজও আমাদের সমাজে জরিমানা মনে করা হয়। অযত্নে-অবহেলায় রাখা হয় কন্যা সন্তানকে। খাবার সহ জামাকাপড়ে দেওয়া হয় তাকে কষ্ট অথচ কন্যার কারণে আল্লাহ তায়ালা পিতামাতাকে জান্নাত দেবেন বলেছেন। হজরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেন, এমন স্ত্রী উত্তম ও বরকতময় যার মোহরের পরিমাণ কম। এমন স্ত্রী উত্তম ও বরকতময় যার প্রথম সন্তান কন্যা। আবার রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে, অতপর সে তাকে কষ্ট দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্টও  হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারণে আল্লাহ তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। (মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ শরীফ)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেন, তোমরা কন্যা সন্তানকে গালী দিও না কারণ আমি নিজেই কন্যা সন্তানের পিতা।

ইসলাম এ অমানবিক সামাজিক বিপর্যয় থেকে প্রথমেই নারীর বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মর্যাদা প্রদান করেছে। জীবন্ত কবর দেয়ার মহামারী থেকে নারী জাতির লালন-পালনের ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে আর সে তাদের লালন-পালনের কষ্ট সহ্য করবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরণ-পোষণ দেবে; কেয়ামতের দিন ওই কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের পথে প্রতিবন্ধক তথা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’ (ইবনে মাজাহ)

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তোমাদের গুরুত্বের সঙ্গে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, তোমরা নারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। তোমরা আমার এ নির্দেশ গ্রহণ কর।’ (বুখারি)

প্রিয়নবি (সাঃ) অন্ধকার যুগের অজ্ঞ ও বর্বর মানুষের কাছে নারীদের সর্বোত্তম মর্যাদা ও সম্মানের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন নারীরা হচ্ছে মায়ের জাতি। মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত।” যাতে কোনো মানুষ এ মায়ের জাতি নারীদের সঙ্গে খারাপ বা অন্যায়মূলক কোনো আচরণ করতে না পারে।

রাসূলে করিম (সাঃ) আগমনের পূর্বে ধন-সম্পত্তিতেও নারীদের কোন উত্তরাধিকার স্বীকৃত ছিল না। ইসলামই মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির হকদার পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও অংশিদার করেছিলেন। পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, “পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে। অল্প হোক কিংবা বেশি হোক, এ অংশ নির্ধারিত।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৭)।

ইসলাম নারী জাতিকে এক করুণ অমানবিক অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য অধিকার এবং সম্মানজনক মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। পবিত্র কোরানে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের ওপর অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২২৮)।

এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহকে (সাঃ) জিজ্ঞাসা করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার নিকট থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে অধিক যোগ্য কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে আবার বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা।" (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৭১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৪৮)

এই হাদিস থেকেও বোঝা যায় মাকে বাবার চেয়ে তিনগুণ বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ নারীজাতিকে বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

এভাবেই ইসলামে আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) কোরান ও হাদিসে সমগ্র নারী জাতিকে অধিক মর্যাদায় ভূষিত করেছেন এবং সকলকে নারীজাতির প্রতি সম্মান ও অধিকার দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন।।

Facebook Comment