Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

একজন দাঈর আবশ্যিক গুণাবলি



দাওয়াতি ময়দানে সফল হবার জন্য একজন দাওয়াত কর্মীর যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন  আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোর’আনে সেগুলো উল্লেখ করেছেন। নিম্নে তার কিছুটা আলোকপাত করা হলো।

১। ইলমঃ দাওয়াত হতে হবে জ্ঞানভিত্তিক। যে বিষয়ে আপনি দাওয়াত দেবেন সে বিষয়ে আপনার পূর্ন ধারণা থাকা উচিৎ। সে সম্পর্কে আপনার অজানা থাকা চলবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন,
قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي
“তুমি বলো, এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি আহ্বান করি সজ্ঞানে” (সুরা ইউসুফ, ১০৮)।

একজন শিক্ষার্থী ও দাওয়াত কর্মীর প্রথম কর্তব্য হচ্ছে, যে বিষয়ে দাওয়াত দিচ্ছে তা নিরীক্ষণ করা, বিষয়বস্তু ও দলীলের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা। যদি বিষয়বস্তুর সত্যতা সুস্পষ্ট ও বোধগম্য বলে অনুভূত হয় তবেই কেবল দাওয়াত দেবে।

অতএব, জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ইসলামে জ্ঞান অর্জনকে ফরজ করা হয়েছে। অজানা বিষয়ে কথা বলা থেকে সাবধান থাকতে হবে। অজ্ঞ মূর্খরা বিনাশ করে, গঠন করতে পারেনা; নষ্ট করে, সংশোধন করতে পারেনা। আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে কথা বলা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। একটি বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা না নিয়ে অপরকে দাওয়াত দেবেন না। আর প্রকৃত জ্ঞানতো সেটিই যা আল্লাহ ও তার রাসুল বলেছেন। সুতরাং সচেতন ও জ্ঞানবান হওয়া জরুরী।

২। ইখলাসঃ একজন দাঈর জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিষয় হচ্ছে আল্লাহর জন্য আন্তরিক হওয়া। লোক দেখানো, খ্যাতি লাভ, প্রশংসা কুড়ানোর মনোবৃত্তি তার উদ্দেশ্য হওয়া কাম্য নয়। দাঈ মানুশকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করবে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য।

সহি বুখারীতে ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক আমলের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী হয়ে থাকে।”

তাই দাঈ হিসেবে আপনার কর্তব্য হচ্ছে দাওয়াত কর্মে আন্তরিক হওয়া। এটাই হচ্ছে বড় চরিত্র, এটাই বড় গুণ, দাওয়াতের ক্ষেত্রে যার প্রয়োজন সর্বাধিক। সুতরাং দাওয়াতি কাজে আপনার কামনা হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের সফলতা।

৩। ধৈর্য্য ও সহনশীলতাঃ দাওয়াত কর্মী হিসেবে আপনাকে অতিমাত্রায় সহনশীল হতে হবে। হতে হবে পরম সহিষ্ণু ও ধৈর্য্যশীল। যেমন ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। দাওয়াতি ময়দানে তাকে অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনো বিচলিত হননি বরং ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করেছেন। অতএব তাড়াহুড়ো ও কঠোর নীতি গ্রহণ করা হতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কঠিনভাবে।

৪। নম্রতাঃ আল্লাহতায়ালা মুসা ও হারুণ (আঃ)-কে যখন ফেরাঊনের কাছে দাওয়াত নিয়ে পাঠালেন তখন তাদেরকে ফেরাঊনের সাথে নম্রতা বজায় রেখে কথা বলার আদেশ করেছেন। অথচ সে ছিলো সবচেয়ে বড় সীমালংঘনকারী। আল্লাহ বলেন,
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ
“তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা সে ভয় করবে” (সুরা ত্বহা, ৪৪)।

৫। সদয় আচরণঃ নবী মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছে, পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে ও কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোনো কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহতায়ালার উপর ভরসা করুন, আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন” (আল ইমরান, ১৫৯)।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “হে আল্লাহ, যার উপর আমার কোনো দায়িত্ব অর্পিত হলো এবং সে তাদের উপর সদয় আচরণ করলো তার প্রতি তুমি সদয় ব্যবহার কর; আর যার উপর আমার উম্মতের কোনো দায়িত্ব অর্পিত হলো এবং সে তাদের প্রতি নির্দয় আচরণ করলো, তুমি তার প্রতি নির্দয় আচরণ কর” (মুসলিম)

তাই আপনাকে একজন দাঈ হিসেবে নবী আদর্শের অনুবর্তিতায় দাওয়াত কর্মে কোমল হতে হবে। সর্বাবস্থায় মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহার বজায় রাখতে হবে, কোনোভাবেই মানুষের ওপর কঠোর হওয়া যাবেনা। অশোভন, রূঢ় ও কষ্টদায়ক আচরণ করে তাদেরকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া যাবেনা। আপনাকে ধৈর্য্য ও সহনশীল হতে হবে। হতে হবে নেতৃত্বে সাবলীল, কথা ও আচরণে কোমল। এতে তাদের অন্তরে প্রভাব পড়বে, আপনার কথা শুনতে চাইবে, আপনার প্রতি নমনীয় হবে, আপনার প্রশংসা করবে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। সর্বোপরি আপনার দাওয়াত কবুল হবে। মনে রাখবেন রূঢ়তা অপরকে নিজ হতে বিচ্ছিন্ন করে দূরে ঠেলে দেয়, কাছে আনেনা। হৃদ্যতার পরিবর্তে ঘৃণা সৃষ্টি করে।

৬। প্রথমে নিজে আমল করাঃ দাঈর জন্য বাঞ্ছনীয় এবং আবশ্যক গুণাবলীর মধ্যে এটিও একটি যে লোকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দেবে নিজের মধ্যে আগে তা বাস্তবায়ন করবে। তাকে সে বিষয়ে আদর্শ হতে হবে। এমন হওয়া চলবে না যে, অপ্রকে হকের দাওয়াত দিলো, ভালো কাজ করতে বললো, আর নিজে তা থেকে দূরে সরে রইলো অথবা কোনো বিষয়ে অন্যকে নিষেধ করলো, এরপর নিজে তাতে জড়িয়ে পড়লো। এটা অবশ্যই ক্ষতিকর।

মূলত সফল মুমিন ও সার্থক দাঈ তারাই যারা আহ্বানকৃত বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেরা আমল করে এবং অন্যদের চেয়ে অগ্রসর থাকে আর নিষিদ্ধ বিষয়াদি হতে নিজেরা দূরে থাকে এবং বর্জনের দিক দিয়ে অন্য সবার থেকে এগিয়ে থাকে। আল্লাহতায়ালা এ বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ [٦١:٢]كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ
“হে মুমিনগণ! তোমরা যা করোনা তা তোমরা বলো কেন? তোমরা যা করোনা তোমাদের তা বলা, আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক” (সুরা সাফফ, ২-৩)।

আল্লাহতায়ালা ইহুদিদের এমর্মে ভর্তসনা করেছেন যে, তারা মানুষকে কল্যাণের কথা বলে অথচ নিজেদের ভুলে থাকে। আল্লাহ বলেন,
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
“তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করো? তবুও কি তোমরা চিন্তা করোনা?” (বাকারাহ, ৪৪)।

৭। শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর আশ্রয়ঃ অবশেষে বলা হয়েছে,
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ
“তোমরা যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার প্ররোচনা অনুভব কড়ো, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো” (সুরা ফুসসিলাত, ৩৬)।

শয়তান যখন দেখে হক ও বাতিলের দ্বন্দ্বে হীনতার মোকাবিলায় ভদ্র ও শালীন আচরণ এবং অন্যায় ও বদীর মোকাবিলায় ন্যায় ও নেকির আচরণ গ্রহণ করা হচ্ছে তখন সে কঠিন দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। সে চায় একবার হলেও কোনক্রমে দাঈ বা সত্য পথের মুজাহিদরা, বিশেষ করে তাদের নেতৃস্থানীয় লোকেরা এমন কিছু ভূল করে বসুক, যার জন্য দাওয়াতি কাজটি সম্পূর্ণভাবে অসফল হয়। কখনো এমনও ধারণা করা যাবে না যে, ‘আমি আমার উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। শয়তান আমাকে দিয়ে কোনো ভূল পদক্ষেপ গ্রহণ করাতে পারবে না।’ নিজের এরূপ বিচার ক্ষমতা এবং সংকল্পশক্তির ধারণা শয়তানের আরেকটা অতি ভয়ানক ধোঁকা। এসবের পরিবর্তে আপনাকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। কারণ আল্লাহ যদি হেফাজত করেন এবং তৌফিক দেন তবেই মানুষ ভূলভ্রান্তি থেকে রক্ষা পেতে পারেন

Facebook Comment