Time & Date:: 07:30:01 AM Friday 11-04-2025
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

প্রচলিত তাবলীগ জামা’আতের শুরু



তাবলীগী জামা’আত শুরু হয় ১৯২৬ সালে (ইং) উত্তর ভারতের মেওয়াত নামক এলাকা থেকে। মেওয়াত হলো দিল্লীর দক্ষিণে হরিয়াণার একটি এলাকা। পূর্বে এলাকাটি পূর্ব পাঞ্জাবের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। তাবলীগী জামা’আতের ধারণা, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি রচনা করেন মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস (রঃ)। ইনি ছিলেন উত্তর ভারতের শাওরানপুরের মাযহারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন দেওবন্দ মাদ্রাসায়। এদিক দিয়ে বলা যায়, তাবলীগী জামা’আত হলো দেওবন্দী আন্দোলনের একটি শাখা। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানোর পর মুসলমানগণ শুধু শক্তিহীনই হয়নি, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রাণহীনও হয়ে পড়ে। লোপ পায় তাদের আত্মবিশ্বাস; চেপে বসে নিদারুন হতাশা, বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলা। অপরদিকে প্রাণশক্তির নবজোয়ার শুরু হয় হিন্দুদের মধ্যে। ব্রিটিশ শাসকদের অংশিদাররূপে তারা শাসকশক্তির কাছাকাছি পৌছার সুযোগ পায়। ফলে শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনৈতিক ও প্রশাসনে তারা দ্রুত এগিয়ে যায়। পায় নবশক্তি।

হিন্দুরা তখন এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ে যে তাদের মাঝে প্রবলতর হয় মুসলমানদেরকে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহ। সে লক্ষ্যে হিন্দুদের মাঝে ‘শুদ্ধি’ ও ‘সংগঠন’ নামে দু’টি আন্দোলন শুরু হয়। বিশেষ করে সেসব এলাকায় যেখানে ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ততটাভাবে মজবুত ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেনি। ‘শুদ্ধি’ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিলো ভারতীয়দের মাঝে হিন্দু ধর্মের পূনর্জাগরণ এবং যারা অহিন্দু বিশেষ করে যারা হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম কবুল করেছে তাদেরকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা। আর ‘সংগঠন’ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিলো হিন্দুদের মাঝে আত্মবিশ্বাস, আত্মশক্তি ও আভ্যন্তরীন বন্ধঙ্কে আরও মজবুত করা। সে সময় ভারতের নানা অঞ্চলে এমন অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস ছিলো যারা হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করেছিলো বটে কিন্তু ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা লাভের তেমন সুযোগ তাদের জীবনে ঘটেনি ব্রং হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির অনেক প্রথাই তাদের মাঝে রয়ে গিয়েছিলো। মেওয়াতে মিওয়ো নামক এক রাজপুত সম্প্রদায় ছিলো যাদের অনেকেই মুসলমান হয়েছিলো। কিন্তু ‘শুদ্ধি’ আন্দোলনের ফলে তাদের অনেকেই আবার হিন্দুধর্মে ফিরে যায়। এতে হিন্দুদের মাঝে আরো বেশি বেশি মুসলমানদের হিন্দু বানানোর ইচ্ছাটি আরও প্রকটতর হয়। মুসলমানদের জন্য এ ছিলো এক বিপদজনক অবস্থা। সে সাথে চলছিলো ইংরেজ পাদ্রীদের ব্যাপক তৎপরতা। ইংরেজদের হাতে রাজ্য হারানোর পর এবার ঘনিয়ে আসে ধর্ম হারানোর ভয়। হিন্দু ও খৃষ্টান হওয়া থেকে মুসলমানদের বাঁচানোর তাগিদেই মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস ১৯২৬ সালে হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর “তাহরিকে ঈমান” নামে এক আন্দোলন শুরু করেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে তিনি সে আন্দোলনকে মেওয়াত থেকে দিল্লীর নিযামুদ্দিন এলাকায় স্থানান্তর করেন। তখন থেকে আজও দিল্লীই তাবলীগী জামা’আতের প্রাণকেন্দ্র। শুরুতে তাদের শ্লোগান ছিলো, “অ্যায় মুসলমান, মুসলমান বনো” অর্থঃ “হে মুসলমানেরা, মুসলমান হও”। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তাবলীগী জামা’আতের প্রসার ঘটে অতি দ্রুত, মাত্র ১৫ বছর পর ১৯৪১ সালের নভেম্বরে এক ইজতেমায় যোগ দেয় ২৫ হাজারেরও বেশি লোক। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে আজ এ সংখ্যাটা ছিলো অতি বিশাল। (তাবলীগী জামা’আতের অন্যান্য বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত পরে আলোচনা করা হয়েছে)।

Facebook Comment