সমাজের সবার সামগ্রীক দায়িত্ব হলো ন্যায্য প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করা, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করা, অন্যায়কে দূর করা, শান্তি সমৃদ্ধি, ধর্মের সমস্যা দূর করা বা স্রষ্টার বিধানের কথা জানা। কোর’আন ও হাদিস অনুযায়ী ইসলামি আন্দোলনের তিনটি রূপ হতে পারে। ক) পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য নিজের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম, খ) মুসলিম সমাজকে উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম এবং গ) যুদ্ধক্ষেত্রে সংগ্রাম। তবে যেকোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করে সংগ্রাম বা আন্দোলন করা উচিৎ।
যাইহোক, ঈমান বাড়লে আল্লাহর শরীয়তী বিধান
প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টাও শুরু হয়। উনানের আগুন ও তার তাপ একসাথে বাড়ে। যেখানে উত্তাপ
নেই সেখানে আগুনও যে নেই সেটি প্রমাণের জন্য গবেষণা লাগে না। ঈমানের সাথে তেমনি
সংগ্রামি শক্তিও বাড়ে। ঈমান ও সংগ্রাম একে অপরের অবিচ্ছেদ অঙ্গ; ঈমান হলো বীজ আর
সংগ্রাম হলো তার বৃক্ষ। বৃক্ষের মাঝে বীজ যেমন একাকার তেমনি আন্দোলন বা সংগ্রামের
মাঝেও ঈমান একাকার। উভয়কে পৃথক করা অসম্ভব। এজন্যই ইসলামের আরকানগুলির মাঝে
সংগ্রামকে পৃথক রুকন বা খুঁটি রূপে দেখানোর প্রয়োজন পড়েনি। যে জীবনে সংগ্রামী
চেতনা নেই, বুঝতে হবে সে জীবনে ঈমানও মজবুত নেই। তাই নবীজী (সাঃ) –এর যুগে এমন
কোনো মুসলমান ছিলোনা যার মধ্যে সংগ্রামী চেতনা বা আন্দোলনী মনোভাব ছিলোনা। তখনকার
সেই আন্দোলনে হাজার হাজার সাহাবায়ে কেরাম জানমালের কোরবানি দিয়েছিলেন। মদীনার
ন্যায় এক গ্রাম থেকে যতোজন সাহাবা সেদিন শহীদ হয়েছেন আমাদের দেশের কোটি কোটি
মুসলিম মানুষ বিগত এক হাজার বছরেও ততোটা শহীদ হয়নি। যারা যুদ্ধক্ষেত্রে সেদিন শহীদ
হওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সেটি ঘটেছিলো মহান আল্লাহপাকের ইচ্ছায়, শাহাদাৎ
লাভে তাদের প্রস্তুতির কমতির কারণে নয়। তাদের সে কোরবানিতে সেদিন মানবজাতির ইতিহাস
পালটে গিয়েছিলো। আমাদের দেশের কোটি কোটি মুসলমানের হাতে আজ অবধি ইসলামের কোনো বিজয়
না এলেও আরবের কয়েক হাজার মুসলমানদের হাতে বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে ইসলাম বিজয়ী হয়েছিলো।
তখন মুসলমানগন পরিণত হয়েছিলো বিশ্বশক্তিতে। শহীদগণ এবং মুজাহীদগণই তো আল্লাহর
সাহায্য নামিয়ে আনে। তখন তাদের সাথে এমনকি ফেরেস্তারাও যোগ দেয়। নবীজি (সাঃ)
বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তার একজন মুমিন বান্দাহর অন্যায়ভাবে নিহত হওয়াটি সমগ্র
পৃথীবি মুছে যাওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ” (ইবনে মাজাহ)।
আল্লাহতায়ালার কাছে তার পথে আন্দোলনকারী
সংগ্রামী মুমিনরা যে কতো প্রিয় উক্ত হাদিসটি হলো তার নমুনা। কিন্তু সমস্যা হলো,
তাবলীগী জামা’আতের নেতাকর্মীগণ সাহাবাগণের দীর্ঘ নামাজ, রোজা ও দোয়া দরূদ নিয়ে
বিষদ আলোচনা করলেও আন্দোলন সংগ্রাম বিষয়ক কোর’আনের আয়াত এবং নবীজীর (সাঃ) হাদিস
তেমন আলোচনা করেন না। সাহাবাদের জানমালের কোরবানির ইতিহাস নিয়েও তেমন আলোচনা করেন
না।
আল্লাহপাক বলেন, “তোমরা কি তাদেরকেও দেখেছো,
যাদের বলা হয়েছিলো, তোমাদের হাতকে সংযত রাখো এবং নামাজ কায়েম করো ও যাকাত দাও? এখন
তাদেরকে যুদ্ধের হুকুম দেওয়ায়তাদের একটি দলের অবস্থা এই দাড়িয়েছে যে, তারা মানুষকে
এমন ভয় করেছে যেমন ভয় আল্লাহকে করা উচিৎ অথবা তার চেয়েও বেশি। তারা বলছে, ‘হে
আমাদের রব! আমাদের জন্য এই যুদ্ধের হুকুমনামা কেন লিখে দিলে? আমাদের আরো কিছু
অবকাশ দিলেনা কেন?’ (হে রাসুল), তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখিরাত
পরহেজগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সুতা পরিমাণও খর্ব করা হবেনা”
(সুরা নিসা, ৭৭)।