Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ইসলামের সহজসাধ্যতা ও সরলতা



সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। দরুদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর এবং তার পরিবারবর্গ ও তার সঙ্গিসাথীদের উপর। লেখার শুরুতেই একটি বিষয় খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেয়া দরকার। এখানে ইসলাম মেনে চলা কতটা সহজ এবং বাস্তবধর্মী তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে যদিও দেখানো হয়েছে যে ইসলাম অতিসহজ ও নির্ঝঞ্ঝাট এক জীবন ব্যবস্থার নাম তথাপি এমনটি ভাবার কোন অবকাশ নেই যে ইসলাম পালনকারী একজন মুসলিমের জীবনে কোন বাধাবিঘ্ন কিছুই থাকবে না। বরং সত্য হলো তার উল্টোটি। কারন, ইসলাম পালনকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকেই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পরীক্ষা করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং যদিও কেউ ইসলাম মেনে চলার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় এবং তা মেনে চলে, তারপরও তিনি ইসলাম মেনে চলার ব্যাপারে কতটুকু বদ্ধপরিকর তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরীক্ষা করে ছাড়বেন।

অনেক মানুষের মধ্যে একটা ভূল ধারণা আছে যে ইসলাম মেনে চলা খুবই কঠিন এবং ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলা খুবই ঝামেলার কাজ। মানুষের মধ্যে এই ধরনের ভূল ধারণা থাকার সম্ভাব্য কারন হল তারা ইসলাম সম্পর্কে মোটেই জ্ঞান রাখেনা এবং তাদের এতটুকু বোধশক্তি নেই যে তারা বুঝবে ইসলাম মেনে চলা কতটা সহজ। ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা তথা মূলনীতিগুলো বিবেচনা করলেই বুঝা যায় ইসলাম কত সহজ একটা জীবন ব্যবস্থার নাম, এটা মেনে চলা কতটা সহজ এবং কতটা বাস্তবধর্মী।

ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের সকলেই এ বিষয়ে একমত যে, পৃথিবীতে সমস্ত বিষয়াবলীই ইসলামে অনুমোদিত যদি না কোনকিছুকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, কোনকিছুকে নিষিদ্ধ বলতে চাইলে তার স্বপক্ষে দলীল হাজির করা লাগবে নতুবা সেটা নিষিদ্ধ হবে না। নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে দলীল প্রমাণ না থাকলে সেটা ইসলামে অনুমোদীত। পার্থিব সকল ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে, যেমনটি হবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে। আর সে কারনেই ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনকিছু করার সুস্পষ্ট অনুমোদন না থাকা সত্বেও সেটা করা হলে তা বিদা’আত বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে প্রমাণস্বরুপ নিম্নোক্ত আয়াত দুটো উল্লেখ করা যায়ঃ

“... তোমাদের পক্ষে যা সহজ আল্লাহ তাই চান ও তোমাদের পক্ষে যা কষ্টকর তা তিনি চান না...” (সুরা বাকারাহ, ১৮৫)।
“... তিনি (আল্লাহ রাব্বুল আলামীন) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নাই...” (সুরা হজ্জ, ৭৮)।

নিম্নোক্ত হাদিসটিও উপরোক্ত আয়াত দুটির স্বপক্ষের দলীলঃ “দ্বীন সহজ এবং যে কেউ দ্বীনকে নিজের জন্যে কঠিন করে ফেললে সে তা আর পালন করতে পারবে না। সুতরাং তোমাদের উচিৎ হবেনা চরমপন্থী হওয়া। বরং সাধ্যমত নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা কর এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর যে তোমরা প্রতিদান প্রাপ্ত হবে; এবং সকালে ও রাতে ইবাদতের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় কর” (সহীহ আল বুখারী; ১::৩৮)।

এমনকি ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) তার সহীহ আল বুখারীতে ইসলাম কত সহজ একটি জীবন ব্যবস্থা তা তুলে ধরার জন্য “দ্বীন (ইসলাম) সহজ” নামে একটি অধ্যায় রচনা করে সেখানে তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।

প্রথমত, ইসলাম মেনে চলা যে কঠিন নয় তার প্রমাণ হল, ইসলামে পার্থিব সকল কিছুই অনুমোদিত যদি না কোনকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কিতাব এবং রাসুল (সাঃ)এর হাদিসে অথবা সেগুলোর উপর ভিত্তি করে উপনীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ হয়ে থাকে। আল্লাহর দুনিয়ায় অসংখ্য বিষয় আছে তার মধ্যে মাত্র হাতেগোনা কিছু বিষয় আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। ইসলাম কোন দুনিয়া বিমুখ জীবন ব্যবস্থা নয় যা তার অনুসারীদের দুনিয়ার কাজকর্ম বাদ দিয়ে পাহাড়ের গুহায় বসে আল্লাহর ধ্যান করতে শিক্ষা দেয়। বরং ইসলাম এধরনের চর্চার ঘোর বিরোধী। ইসলাম মানুষকে এক স্বাভাবিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের পথে উৎসাহিত করে যেখানে একজন ব্যক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্ধারিত সীমারেখার ভিতরে থেকে সামাজিক জীবনযাপন করবে, তার প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যে হক তা আদায় করে নিজের প্রতি নিজের হক ও অন্যান্য সৃষ্টিকূলের প্রতি তার হক আদায় করবে।

ইসলাম সকল সৃষ্টিকূলের অধিকার নিশ্চিত করেছে; অন্যায়ভাবে কোন মানুষ বা জীবজন্তু বা গাছপালা এমনকি নিজের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না। ইসলামের শিক্ষা হল আমাদেরকে যেকোন মূল্যে সকল প্রকার অন্যায় ও অপকর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে। এমনকি যেসব কাজকর্ম মন্দের পথে চালিত করে সেগুলো থেকেও বিরত থাকতে হবে। একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের কিছু মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে সেগুলো পালন করতে হবে। যদি উক্ত কাজগুলো ঠিকঠাক সম্পন্ন করতে পারি তাহলে আমরা ইসলাম অনুমোদিত অন্যান্য বিষয়গুলো প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবো।

ইসলাম হল “দ্বীনুল ফিতর” তথা প্রাকৃতিক বা স্বভাব ধর্ম; ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যা মানুষের মেজাজ মর্জির সাথে একশত ভাগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এমন কিছু করতে বলে না যা তার মানবীয় প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায়। পুরো কোর’আন এবং রাসুল (সাঃ) এর হাদিস খুঁজে ইসলামের এমন একটি বিধান দেখান যা মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমন কোনকিছুই আপনি খুঁজে পাবেন না

ইসলাম কখনোই আমাদের জন্য বোঝাস্বরূপ নয়। আর ইসলাম কখনো আমাদেরকে তা করতে বলেনা যা করার ক্ষমতা মানুষ হিসেবে আমাদের নেই। ইসলাম কখনোই এমন কিছু করতে বলেনা যাতে করে আমাদেরকে নিজেদের ব্যক্তিত্ব, টাকা পয়সা, সামাজিক জীবন সবকিছুকে বিলিয়ে দিতে হয়। এমনও নয় যে ইসলাম মানতে হলে আমাদেরকে দিনরাত সালাত আদায় করতে হবে আর রোজা রাখতে হবে। বরং এমনটি করা নিষিদ্ধ। আমাদের কাছে ইসলামের দাবী হলো এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যেখানে আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করার পাশাপাশি অন্যান্য মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে পারি আবার নিজের দিকেও খেয়াল রাখি। ইসলাম নির্ধারিত পন্থায় অন্যান্য মানুষদের প্রতি দায়িত্ব পালন করলে সেটাও ইবাদতের মধ্যেই পড়ে। আপনি ইসলামের এমন একটি বিধানও দেখাতে পারবেন না যা মেনে চলা আমাদের মানবীয় ক্ষমতার বাইরে।

মানুষের কাছে ইসলাম মেনে চলা এত কঠিন মনে হওয়ার একটি কারণ হল শয়তান তাদের কাছে খারাপ এবং মন্দ কাজগুলোকে অত্যন্ত মোহনীয় করে উপস্থাপন করে এবং সৎকর্মগুলোকে কঠিন ও বিরক্তিকর করে উপস্থাপন করে। ফলে তারা সৎকর্ম সম্পাদনের ব্যাপারে অনীহা ও অনাগ্রহ বোধ করে। এতদসত্বেও কেউ যদি শয়তানী ওয়াস ওয়াসাকে জয় করে ইসলাম পালনের ব্যাপারে সচেষ্ট হয় তাহলে ইসলাম যে সমস্ত কাজগুলোকে ভাল বলে সেগুলো করা তার জন্য কোন কঠিন কিছু মনে হবে না এবং কাজগুলো করে সে মনের ভিতর এক অকৃত্রিম সুখ অনুভব করবে। ফলে মন্দ আর পাপের কাজগুলো তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। আপনি নিজেই একবার পরখ করে দেখুন ভাল কাজ করে মনে কি সুখ অনুভূত হয়।

ইসলাম তার অনুসারীদের যা শিক্ষা দেয় তা হল একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করা অর্থাৎ তার সাথে ইবাদতের ক্ষেত্রে কাউকে শরীক না করা, দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, বছরে মাত্র একটি মাস সাওম বা রোজা রাখা, বছরান্তে একবার উদ্বৃত্ত সম্পদের শতকরা আড়াইভাগ যাকাত হিসেবে দান করা, সম্ভব হলে জীবনে একরার হজ্জ করা এবং সাধারনভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সমস্ত সৃষ্টিকূলের প্রতি সদয় আচরণ করা, নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং সৎচরিত্র বজায় রেখে জীবন যাপন করা। উল্লেখিত বিষয়গুলোর কোন একটিও মেনে চলার জন্য একজন মানুষের সামর্থের বাইরে নয় বা অসম্ভব কিছু নয়। এমন একটি বস্তুও ইসলাম আমাদের জন্য নিষিদ্ধ করেনি যা আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়। বরং লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে ইসলাম যা কিছু নিষিদ্ধ করেছে তার প্রত্যেকটিই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মনে রাখতে হবে তা হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হলেন “রহমান” এবং “গফুর” অর্থাৎ তিনি হলেন পরম করুণাময় এবং পরম ক্ষমাশীল। আমরা ইসলাম মেনে চলার ক্ষেত্রে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্বেও যদি কোন প্রকার মানবিক ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েই যায় তাহলে আমাদের জন্য তার তাওবার দরজা সর্বদায় উন্মুক্ত।

ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো উপলদ্ধি করা খুবই সহজ এবং মেনে চলার ক্ষেত্রে চরম বাস্তবধর্মী। ইসলামের সারল্য মাধুর্য এবং বাস্তবধর্মীতা এই জীবন ব্যবস্থাকে দিয়েছে একটি বিশ্বজনীন জীবন ব্যবস্থার সুমহান মর্যাদা যা শারীরিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা নির্বিশেষে পৃথীবির প্রতিটি মানুষ মেনে চলতে সক্ষম। ইসলামের এই মাধুর্যময় সারল্য এবং বিশ্বজনীন আবেদনের কারনেই সারা পৃথীবির ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা আজ দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে সঠিকভাবে ইসলামকে উপলদ্ধি করার ও মেনে চলার তৌফিক দান করুন। (আমীন)।

Facebook Comment