এর উত্তর মাওলানা যাকারিয়া সাহেবের নিজের
মুখ থেকে শুনুন। তিনি তার ‘ফাজায়েল আমল’ বইয়ের ভুমিকার শুরুতেই লিখেছেন,
“আল্লাহতায়ালার তারীফ এবং নবীয়ে করীম (ছঃ) এর উপর দরূদ শরিফ পড়ার পর, ওলামায়ে
কেরাম ও সছুফীকুল শিরোমণি, মোজাদ্দেদ দ্বীন, হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) আমাকে আদেশ
করেন যে তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজন অনুসারে কোর’আন ও হাদিস অবলম্বনে যেন একটা
সংক্ষিপ্ত বই লিখি। এতবড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার পরকালে নাজাতের উছিলা
হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই।”
এখানে প্রথমেই একটি কথা বলে রাখি, আল্লাহর
কোর’আন ব্যতীত যেকোনো কিতাবের মধ্যেই ভূল থাকতে পারে। কিন্তু সেটা বড়জোর বানান,
চলিত ভাষা ও সাধু ভাষার মিশ্রণ, সাজানো গোছানো ইত্যাদি। কিন্তু যে কথাটি লিখতে
যাচ্ছি সেটা যদি ঠিকভাবেই লিখিত হয় তাহলে সেটার মধ্যে ভূল নেই নেই ধরে নিতে হয়।
এখানে লক্ষ্যণীয়ঃ
১। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বইটি
লিখেন নি। তিনি লিখেছেন তার উস্তাদ মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের সন্তুষ্টি লাভের জন্য।
অথচ কোর’আন ও হাদিস অনুযায়ী আমরা জানতে পারি, যেকোনো কাজ একমাত্র আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্যই করতে হয়।
২। যতটা বিশেষণ (গুণাবলী) তিনি আল্লাহ ও
রাসুল (সাঃ)-এর পরিচয়ে দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি তার উস্তাদ মাওলানা ইলিয়াসের পরিচয়ে
দিয়েছেন।
৩। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করেই
পরকালে নাজাত পাওয়া যাবে, এটাই মূল শর্ত। এমনকি নবী রাসুলদের সন্তুষ্টির জন্যও
কোনো ইবাদত করা যাবেনা। কিন্তু তিনি তার উস্তাদের সন্তুষ্টিকে নাজাতের উসিলাহ
বলেছেন। আর এটা একটা স্পষ্ট শিরক যা ইহুদী নাসারারা করে। (শিরক অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।
আল্লাহপাক বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا
لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ
وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ
الْقَيِّمَةِ
“তাদেরকে এছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে,
তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহর (সন্তুষ্টির জন্য) ইবাদত করবে, নামাজ
কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম” (আল বায়েনাহ, ৫)।
আল্লাহপাক আরো আল কোর’আনে বলেন,
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ
وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا
أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ
لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ سُبْحَانَهُ عَمَّا
يُشْرِكُونَ
“তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আলেম, আবেদদেরকে
(পীর, দরবেশ, ধর্মগুরু) তাদের প্রভূ বানিয়ে নিয়েছে এবং মরিয়ম পুত্র মসীহকেও। অথচ
তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে তারা শুধুমাত্র এক মা’বুদের ইবাদত করবে যিনি ছাড়া
আর কোনো সত্য মা’বুদ নেই। তিনি তাদের অংশী স্থির করা হতে কতইনা পবিত্র” (সুরা
তাওবা, ৩১)।
এখন তাবলীগী ভাইদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে,
ফাজায়েলে আমল বইয়ের ভূমিকার কথাটি যদি শিরক নাহয় তাহলে এটি কোন পর্যায়ের কথা?
[বিঃদ্রঃ এখনকার সংস্করণের কোনো কোনো বইয়ে
উক্ত কথাটিকে সামান্যত্ম পরিবর্তন করে নিয়েছে। কথা হলো, এখনকার যে কেউ নাহয়
পরিবর্তন করে দিয়েছেন কিন্তু উনি (যাকারিয়া সাহেব) তো পরিবর্তন করেননি। উনি শিরকের
শিরকের মাধ্যমে ‘ফাজায়েল আমল’ বইটি শুরু করেছিলেন এটা তো সত্য? আল্লাহপাক তার অশেষ
করূণার মাধ্যমে আমাদেরকে সেই ভূলটি ধরে দিয়েছেন, যাতে আমরা এর থেকে বিরত থাকতে
পারি। কেননা শুরুতেই লেখকের শিরক, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।]