আমাদের জ্ঞাত অজ্ঞাতসারে অগণিত শিরক করা হয়ে যাচ্ছে। অথচ একবার ভেবেও দেখিনা না যে, শিরককারীর শেষ পরিণতি বা ফলাফল কি। পাপসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ হছে শিরক। মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করলো সে গুরুতর পাপে পাপী হলো” (আন নিসা, ৪৮)। লোকমান হাকিম তার সন্তানকে বলেছিলেন, “হে বতস! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, নিশ্চয়ই শিরক বড় ধরণের যুলুম” (সুরা লোকমান, ১৩)। শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। বান্দার যতো গুনাহ রয়েছে তিনি চাইলে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু শিরকের গুনাহ তিনি ক্ষমা করবেন না (সুরা নিসা, ৪৮, ১১৬)। শিরক এমনই এক অপরাধ যে, শিরক করলে পূর্বের সকল আমল নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, “আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, যদি আপনি আল্লাহর শরিক স্থাপন করেন, তাহলে আপনার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। আর আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের একজন হবেন (সুরা যুমার, ৬৫)। আল্লাহ আরও বলেন, “যদি তারা শিরক করতো তবে তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যেত” (সুরা আন’আম ৮৮)। শিরক এমন এক গুরুতর অপরাধ যে, তা শিরককারীর জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেয় এবং জাহান্নাম অপরিহার্য করে দেয়। এমর্মে আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ
فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ
وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার
স্থাপন আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর
অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই” (আল মায়েদা, ৭২)।
একই মর্মে হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি
আল্লাহর সাথে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি
তার সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে” (মুসলিম,
২৬৬৩)।
শিরক হচ্ছে ধ্বংস ও বিপর্যয়ের কারণ। এ
সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার রাসুল মুশরিকদের থেকে দায়মুক্ত” (আত
তাওবা, ৩)। অন্যত্র তিনি বলেন। “যে আল্লাহর সাথে শরীক করে যে যেন আকাশ থেকে ছিটকে
পড়ে আর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী স্থানে
নিক্ষেপ করে” (সুরা হজ্জ, ৩১)। শিরক এমন এক জঘন্য অপরাধ যে অপরাধের কারণে উক্ত
অপরাধীর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাও যাবে না। আল্লাহ বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ
وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي
قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
“নবী ও মুমিনদের জন্য উচিৎ নয় যে, তারা
মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তারা আত্মীয়ই হোক না কেন। বিষয়টি সুস্পষ্ট
হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী” (আত তাওবা, ১১৩)।
শিরকের ভয়াবহতা তার শেষ পরিণতি দেখলেই
স্পষ্ট হয়ে যায়। যা কল্পনা করাও কঠিন। তাই শিরক সম্পর্কে আমাদেরকে কতটুকু সচেতন
হওয়া প্রয়োজন সে কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহপাক কতই না সুন্দর বলেছেন,
وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِّ
وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ كَذَٰلِكَ ۗ
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ۗ
إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ
“অনুরূপভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, জন্তু,
চতুষ্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাকে ভয় করে।
নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ও ক্ষমাময়” (সুরা ফাতির, ২৮)।
পরিশেষে
বলা যায়, শিরক মানব জাতির ক্ষতি সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। অন্যান্য
অপরাধ মানুষকে যতটা অপরাধে নিক্ষেপ করবে শিরকের অপরাধ তার চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশী
ভয়ংকর। অথচ এই শিরক বর্তমান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। মানুষের বাস্তব
জীবনের সাথে মিশে গেছে গভীরভাবে। বর্তমান সমাজের সভ্যতা সংস্কৃতি, অনুষ্ঠানাদি,
কৃষ্টি কালচারের সাথে মিশে একাকার বিলীন হয়ে গেছে যা থেকে শিরককে পৃথক করা বড়
দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরই প্রেক্ষিতে মানুষ হরহামেশা অজস্র শিরকি কর্মকান্ড করেও
নিজেকে সভ্যতার চরম শিখরে উন্নীত বলে প্রমাণ করার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। অগণিত শিরক
কেবল সভ্যতার দোহাই দিয়ে বর্তমান সমাজে সগৌরবে চালু আছে। এমনকি এই শিরক যে মহা
অপরাধের তা তারা স্বীকারও করে না। যারা এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অবস্থান নিতে চায়
তাদেরকে সম্মুখীন হতে হয় বাঁধা বিপত্তির মধ্যে। দুঃখের বিষয় এমনিতে মুসলিমরাও
বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে আছে। হে বর্তমান সময়ের শিক্ষিত সমাজ! আর কতদিন
গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে মেকি সুখের নেশায় বিভোর থাকবে। এখন সময়ের দাবী গা
ঝাড়া দিয়ে ওঠা। আসুন! আমরা সবাই হিংসা
দ্বন্দ্ব, ভূল বোঝাবুঝি, সর্ব প্রকার গোঁড়ামি পরিহার করে শিরকমুক্ত জীবন গড়ার শপথ
গ্রহণ করি। আসমান ও যমীনের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের
সার্বভৌমত্বের জয়গান জীবনের সর্বক্ষেত্রে, পৃথীবির সর্বত্র ছড়িয়ে দেই। আল্লাহ
আমাদের সে তৌফিক দান করুন। (আমীন)।