Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আগ্রহ নেই সিরাতুল মুস্তাকিম বুঝার



মহান আল্লাহতায়ালা চান, ঈমানদারগণ তার পবিত্র কোর’আন বোঝায় আত্মনিয়োগ করুক। কারণ আল্লাহর এ কিতাবটি এ জীবনে পথচলার একমাত্র রোডম্যাপ। আল্লাহতায়ালা মানুষের কল্যাণ চান। আর সে কল্যাণ আসতে পারে এ রোডম্যাপের নির্ভূল অনুসরণের মধ্য দিয়ে। তাই এটি শুধু নিছক তেলাওয়াতের কিতাব নয়, গভীর অনুধাবনের কিতাবও। অর্থ না বুঝে তেলাওয়াত হলে কখনোই সে কিতাবের অনুসরণ হয় না। অনুধাবনের আগ্রহ বাড়াতে মহান আল্লাহতায়ালা তাই “আফালা তাফাক্কারুন”, “আফালা তাদাব্বারুন”, “আফালা তা’ক্বিলুন” এই প্রশ্নগুলো পবিত্রে কোর’আনে রেখেছেন। এর অর্থ হলো কোর’আনকে নিয়ে তোমরা “কেন চিন্তাভাবনা করোনা?”, “কেন গভীর মনোনিবেশ করোনা?”, “কেন বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগাও না?”। যেকোনো কিতাবের ন্যায় কোর’আনের অনুসরণের জন্যও চাই কোর’আনের জ্ঞান। এ জ্ঞানার্জন ছাড়া আল্লাহর হিদায়েত লাভ অসম্ভব হয়। তাই মুসলমান হওয়ার অর্থই হলো, কোর’আন বোঝার সামর্থ অর্জন। এটি ঠিক, আরবী ভাষায় জ্ঞানশুন্য ব্যক্তির সে সামর্থ থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সে সামর্থ বাড়ানোর প্রচেষ্টা কোথায়? সে লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানো তো ফরজ। এটি পবিত্র ইবাদত। বুঝার সামর্থ নাই বলে শুধু তেলাওয়াত নিয়ে খুশি থাকাতে সওয়াব লাভের চেয়ে ফরজ আদায় না করার গুনাহই বেশি। হাশরের দিনে কি এই গাফিলতির হিসেব দিতে হবে না?

সামর্থ বাড়ানোর জন্য মিশর, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, মরক্কো, লিবিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া, আলজিরিয়াসহ বহু অনারব দেশের মানুষ তাদের মাতৃভাষা ভূলে কোর’আনের ভাষাকে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাবলীগী জামা’আতের কর্মীদের মাঝে সে সামর্থ বাড়ানোর আগ্রহ কোথায়? কোর’আন বোঝা আর ফাজায়েলে আমল থেকে পাঠ করা কি এক জিনিস? কোর’আনের বিকল্প একমাত্র কোর’আনই। ফাজায়েলে আমল তো থাক, এমনকি হাদিসের কিতাব পড়েও কোর’আন বোঝার কাজ চলে না। মুসলমানদের মাঝে প্রায় দুই’শত বছর যাবত একমাত্র কোর’আন ছাড়া আর কোনো কিতাব ছিলো না। হাদিসের কিতাব এসেছে কোর’আনের অনেক পরে। ফিকাহর কিতাব এসেছে আরও পরে। প্রাথমিক যুগের মুসলমানগণ তখন একমাত্র কোর’আন থেকেই হিদায়েত লাভ করতেন, একই সুরাকে তারা বারবার পড়তেন যতক্ষণ না সেটির পূর্ণ উপলদ্ধি ও জ্ঞান তাদের মধ্যে সৃষ্টি না হতো। নামাজের মধ্যে ও বাইরে এ কিতাব থেকে তেলাওয়াতে তারা দীর্ঘক্ষণ কাটিয়ে দিতেন। একে অপরের সাক্ষাতে তারা কোর’আনের আয়াত শুনিয়ে দিতেন। আল্লাহর এ কিতাব তারা এতো বেশি বেশি পড়তেন যে বিপুল সংখ্যক সাহাবা কোর’আনী হাফিজে পরিণত হয়েছিলেন। পূরো কোর’আনী হাফিজ না হলেও শত শত আয়াত মুখস্থ ছিলো অধিকাংশ সাহাবার। মুসলিম ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষগুলো তৈরি হয়েছে বস্তুত সে সময়েই। আর সেই মানুষগুলো একেকজন নক্ষত্রের মতো। তাদের জীবনে নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ যেমন ছিলো তেমনি ছিলো অমুসলমানদের মাঝে দ্বীনের তাবলীগ। ছিলো ইসলামি আন্দোলনইসলামি শরীয়তী বিধান ছাড়া অন্য কোনো বিধানের কথা তখন কল্পনাও করা যেত না। আজ আল্লাহর সেই কিতাবের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কোর’আনের উপর তাফসীরের সংখ্যাও। বেড়েছে ‘ফাজায়েলে আমল’-এর ন্যায় নানা বইয়ের চর্চাও। কিন্তু সে সাথে বেড়েছে ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ থেকে ভয়ানক বিচ্যুতি। সে সময় ইসলামের বিজয় এসেছিলো দেশে দেশে। আর আজ ইসলামি বিধান পরাজিত খোদ মুসলিম দেশগুলিতে। পবিত্র কোর’আনের জ্ঞানলাভের বিষয়টি অবহেলিত হলে মুসলমানদের বিচ্যুতি ও পতন যে কতটা ভয়ংকর হয় আজকের মুসলমানগণ হলো তারই নমুনা।

এমন বিচ্যুতির উদাহরণ দিতে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোর’আনে বনী ইসরাঈলের কাহিনী বারবার তুলে ধরেছেন। কিন্তু আজ মুসলমানরা নিজেরাই বড় উদাহরণ। অতীতে ইতিহাসেও মুসলিমদের বহু বিচ্যুতি ঘটেছে। কিন্তু এখন সে পুরনো বিচ্যুতির স্থলে এসেছে নতুন বিচ্যুতি ও ভ্রষ্টতা। আর এরূপ নতুন ভ্রষ্টতা যখন বাজার পায় তখন মুসলমানদের গৌরব বাড়েনা বরং পরাজয়ই গভীরতর হয়। তাবলীগ জামা’আতও তাই নতুন কোনো বিজয় বা গৌরব আনতে পারেনি। অথচ বিভিন্ন ইজতেমায় প্রতিবছর লোকের সমাগম বেড়েই চলেছে। কিন্তু তাতে কি আমাদের দেশে ইসলামের প্রতিষ্ঠা বেড়েছে?

Facebook Comment