Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

তাকওয়া যেখানে বিচ্যুতির ভয়


সিরাতুল মুস্তাকিমের পথটি শুধু কলেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজ্জ –এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তেমন সীমাবদ্ধ নয় মসজিদের চার দেয়ালের মাঝেও। বরং এ দীর্ঘ পথটি দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী মঞ্জিল থেকে জান্নাত অবধি বিস্তৃত। ঈমানদারের জীবনে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে পথ চলাটি কলেমা শাহাদাৎ পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয়, এরপর আসে নামাজ, রোজা ও যাকাত হজ্জ। আসে কোর’আনের জ্ঞানলাভ, আসে হিজরত, আসে ইসলামি আন্দোলনআসে সে আন্দোলনে শ্রম, সময়, অর্থ ও রক্তের কোরবানি। সে জিহাদের পথ ধরে ঘটে ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, আসে সে ইসলামি রাষ্ট্রে শরীয়তের প্রতিষ্ঠা। এগুলো হলো সিরাতুল মুস্তাকিমের বিভিন্ন পর্যায় ও বিভিন্ন মাইল ফলক। ইসলামের পথে পথচলা কতটা সঠিক হচ্ছে সেটি বিচারের জন্য প্রতিক্ষণে পথচারীকে সে মাইল ফলকগুলোকে কোর’আনের সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়। গাড়ি চালনায় চালককে যেমন প্রতিক্ষণ পথের দিকে চেয়ে গাড়ি চালাতে হয় তেমনি মুমিন ব্যক্তিকে সারাক্ষণ নজর রাখতে হয় সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে। ঈমানদারের জীবনে বস্তুত সেটিই হলো প্রকৃত তাকওয়া। তাকওয়ার অর্থ ভয়এখানে ভয় সিরাতুল মুস্তাকিম হারানোর। তবে সুরা ফাতিহাতে শুধু সিরাতুল মুস্তাকিমের জন্যই দোয়া করতে শেখানো হয়নি, শেখানো হয়েছে পথহারানো থেকে বাঁচার দোয়াও। বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতার পথ মানুষকে জাহান্নামে টানে এবং সেটি আসে তাকওয়ার অভাবে। সিরাতুল মুস্তাকিমে যিনি উদাসীন তার কাছে তখন প্রকৃত অর্থ না বুঝে কোর’আন তেলাওয়াতও বিশাল ধর্মকর্ম বলে মনে হয়। অথচ কোনো শিশুও অর্থ না বুঝে কোনো বই পড়েনা।

সঠিক পথে চলা নিয়ে যার কোনো আগ্রহ নেই, তার কাছে কি রোড ম্যাপ বোঝার প্রয়োজন পড়ে? পবিত্র কোর’আনের সাথে এমন উদ্ভট আচরণের কারণ এটাই। এমন মানুষ তো পথ চলে পীর, হুজুর, মুর্শেদ, গুরু ও রাজনৈতিক নেতাদের বাতলানো পথ দিয়ে। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভরে গেছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে। ফলে তারা যে পথ বেয়ে চলছে সে পথে কোর’আনী জ্ঞান নেই; নেই হিজরত, নেই ইসলামি আন্দোলন এবং নেই ইসলামের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ। নবীজী (সাঃ) ও তার সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ হলো এক ভিন্নতর জীবন। ফলে এ পথকে কি সিরাতুল মুস্তাকিম বলা যায়? সিরাতুল মুস্তাকিমে চলার সামর্থ একমাত্র সত্যিকার ঈমানদারগণেরই থাকে। সে সামর্থ যেমন কাফের ও মুনাফিকদের থাকেনা তেমনি তেমনি কোর’আনের জ্ঞানে যারা অজ্ঞ তাদেরও থাকেনা। কারণ কোর’আন হাদিসের জ্ঞান ছাড়া সে পথ চেনা যেমন অসম্ভব তেমনি সেপথে টিকে থাকাও অসম্ভব। তাই ইস্লামে শুধু নামাজ রোজা ফরজ নয়, ফরজ জ্ঞান অর্জনেও। জ্ঞানার্জন, নামাজ রোজা, যাকাত হজ্জের পাশাপাশি জানমালের কোররানিও দরকার। কিন্তু যেপথে কোর’আনী জ্ঞান নেই, যেপথে ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশত্যাগের কথা নেই, নেই ইসলামি আন্দোলন, নেই শরীয়তের প্রতিষ্ঠা এবং জানমালের কোরবানি। সেপথে মিথ্যাবাদী, রাজনীতিবিদ, ঘূষখোর কর্মচারী, দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসী ব্যক্তিরাও বিপুল সংখ্যায় হাজির হয়। তাই দেখা যায়, আমাদের দেশে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার পক্ষে বা সে দাবী নিয়ে রাস্তায় নামার লোক না থাকলে কি হবে, তাবলীগী জামা’আতের ইজতেমায় হাজির হয় হাজার হাজার মানুষ।

সুস্থ মানুষ মাত্রই চেতনায় একটি স্পষ্ট মানচিত্র ও রোডম্যাপ নিয়ে পথে নামে। পাগলের সেটি থাকেনা বলেই সে পাগল। চলার পথ দেখেই বোঝা যায় সে মানুষের গন্তব্যটি কোনমুখি। নাস্তিক ও আস্তিক, কাফের ও মুমিন, সেক্যুলারিষ্ট ও ইসলামিষ্টদের পথ চলা তাই একই পথে হয় না। তাছাড়া নিজ মনে যে শহরে যাওয়ার ভাবনা নেই, সে শহরের রাস্তা নিয়ে কেউ ভাবেনা। তাবলীগী জামা’আত তো জান্নাতে যাওয়ার কথা বলে। ফলে সেখানে পৌছার রাস্তা নিয়ে চিন্তাভাবনাটিও তাদের কাছে গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু তাদের অনুসৃত সে পথে সিরাতুল মুস্তাকিমের পরিচিত আলামতগুলি কোথায়? তাবলীগী জামা’আতের কর্মসূচীতে আছে গাশত, আছে চিল্লাহ, আছে ফাফায়েলে আমল পাঠ, আছে ইজতেমা, আছে তাবলীগের নামে বিদেশ গমন।

প্রশ্ন হলো নবীজীর (সাঃ) ইসলামে কি এসব ছিলো? তিনি কোথায় গাশত বা চিল্লাহতে বেরিয়েছিলেন? তিনি কি এভাবে বেরিয়েছিলেন? বেরোলে হাদিসে তার প্রমাণ কোথায়? নিজ দেশে কাফের শক্তির নির্মূল এবং ইসলামের পূর্ণ বিজয়ের পূর্বে নবীজী (সাঃ) কখনোই বিদেশে ইসলামের প্রচারে লোক পাঠাননি। অন্য দেশে যখন গিয়েছেন তখন গেছেন সেনাবাহিনী নিয়ে। লক্ষ্য ছিলো সে দেশে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী শক্তির নির্মূল এবং স্ত্যের পথ থেকে সকল প্রকার বাঁধা সরিয়ে দেয়া। সেটিও নবুয়্যত লাভের তেরো বছর পরঅমুসলিম দেশে যাওয়ার আগে যেটি গুরুত্ব পেয়েছিলো সেটি মুসলিম দেশে পরিপূর্ণ ইসলামি বিপ্লব। একমাত্র সেটি সমাধা হওয়ার পরই তিনি বিদেশের দিকে নজর দিয়েছেন। কিন্তু তাবলীগী নেতাগণ নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের সে নীতি থেকে কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করেনি। নিজ দেশের জনগণ দুর্বৃত্তি তথা নানারূপ পাপাচারে যখন বিশ্বরেকর্ড গড়ছে, তখন দেশের তাবলীগীগণ লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিদেশে বিশাল বিশাল জামা’আত নিয়ে যাচ্ছেন। যে বাতি তার নিজ ঘরে অন্ধকার সরাতে পারেনা, সেটি কি হাজার হাজার মাইল দূরে অন্য এক মহাদেশে আলো দিতে পারে? বিদেশীদের কাছে এটি কি বিদ্রূপ ও হাসির খোরাকরূপে গণ্য হয় না? নিজ দেশের মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, দর্শন ও চারিত্রিক রোগের সাথে যেরূপ পরিচিতি, সেটি কি বিদেশীদের সাথে থাকে? তাই নিজ দেশে দাওয়াতের সামর্থ কি অধিক থাকা স্বাভাবিক নয়? দূরের দেশে গিয়ে কি সেটি সম্ভব?

Facebook Comment