Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

প্রচলিত তাবলীগ জামা’আতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা



প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ জামা’আত প্রায় অর্ধশত বছরের কিছুদিন বেশি হলো যা কোর’আন ও হাদিসের খেলাফ তথা শরিয়ত পরিপন্থী, ইসলাম ধর্মের বহির্ভুত বিদ’আতে সাইয়্যেহাহ। তাবলীগীরা এটাকে বিদ’আতে হাসানা বলে মান্য করে। মনে করে এটা বিদ’আত হলেও দ্বীনের কাজে খুব সহায়ক।

অথচ, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বানী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মোহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্র্যত্যেক বিষয় বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত হলো ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম” (মুসলিম, ১৫৩৫; সুনান আন নাসায়ী, ১৫৬০)।

দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন হলো বিদ’আত। তাবলীগীরা এটাকে বিদ’আতে হাসানা বলে মনে করে। ওরা মনে করে, এটা বিদ’আত হলেও দ্বীনের কাজে খুব সহায়ক। অথচ নবীজী (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক বিদ’আতই ভ্রষ্টতা, ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম”। এখানে নবীজী (সাঃ) ‘প্রত্যেক’ কথাটি দ্বারা ‘সব’ বিদ’আতকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ভালো বিদ’আত, মন্দ বিদ’আত বলে কিছু নেই, সবই বিদ’আত।

রাসুল (সাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণী কোনো ব্যক্তির ভূলে যাওয়া ঠিক হবেনা, “আমার এ নির্দেশের মাঝে যে ব্যক্তি এমন কিছু নব আবিষ্কার করবে যা তার অন্তর্ভূক্ত ছিলোনা, তা পরিত্যাজ্য” (বুখারী, ২৬৯৭; মুসলিম, ৩২৪২; আবু দাঊদ, ৩৯৯০; ইবনে মাজাহ, ১৪)।

মহানবী (সাঃ) আরো বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করলো যার উপর আমার কোনো নির্দেশ (অনুমোদন) নেই সে আমলটি অগ্রহণযোগ্য” (মুত্তাফাকুন আলাইহি, ৩২৪৩)।

সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা বলেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে রাজী হয়ে গেলাম” (সুরা মায়েদা, ৩)।

কোর’আন ও সুন্নাহর বাইরে এমন কিছু নেই যা দ্বিনের পরিপূর্ণতার জন্য সহায়ক হতে পারে। মোটকথা ইসলাম এমন এক সুশৃঙ্খল কর্মপন্থা যা ব্যতীরেকে অন্য কোনো পথ অনুকরণ ও অবলম্বনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা অসম্ভব। আফসোস! ঐ সমস্ত মানুষের উপর যারা দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কারকে ভালো বিষয় মনে করে একে ভালো কাজ মনে করে। আর তারা দ্বীনের পরিপূর্ণতাকে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অন্ধকারময় বিদ’আত কাজের মধ্য দিয়ে আল্লাহর হিদায়াত অনুসন্ধান করে। তাহলে কি নবীজীর (সাঃ) সময় আল্লাহর দ্বীন পূর্ণাঙ্গ হয়নি? (নাউযুবিল্লাহ) আর নবিজী (সাঃ) দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি বলেই কি নতুন সংযোজন করা হচ্ছে তার এই দ্বীনের মধ্যে? আল্লাহপাকের (সুরা মায়েদা, ৩) এই ঘোষণা কি তাহলে মিথ্যে? (আসতাগফিরুল্লাহ)

যাইহোক, ভারতে অবস্থিত দেওবন্দ মাদ্রাসা এদের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উক্ত দেওবন্দ মাদ্রাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত দিল্লির মাওলানা ইলিয়াস সাহেব স্বপনের মাধ্যমে প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ জামা’আত ও চিল্লাহ গাশতের নিয়ম পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। (দেখুনঃ মলফুজাতে ইলিয়াস, উর্দূ ৫০ পৃঃ)।

সেখানে ইলিয়াস সাহেব বলেন, “প্রচলিত তাবলীগ জামা’আতের নিয়ম পদ্ধতি আমি স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছি” তাহলে বোঝা গেলো এটা কোর’আন, সুন্নাহ, ইজমা (বিজ্ঞ আলেমদের ঐক্যমত) বা কিয়াছ সম্মত নয়। বরং মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের কথায় প্রমাণিত যে, প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ জামা’আতের মূল উতস হচ্ছে তার স্বপ্ন। (নাউযুবিল্লাহ)

“কুনতুম খাইরা উম্মাতীন উখরিজাত লিন্নাছে তামুরুনা বিল মারুফে ওয়া তানহাওনা আনিল মুনকারে ও ইয়া তুমিনুনা বিল্লাহ” কি তাফসীর খাব মে ইয়ে এলকা হুয়ে কেহ তুম মিছলে আম্বিয়া আলাইহে ওয়া সাল্লামকে লুগুকে ওয়াস্তে জাহির কি গাইয়ে হূ। (দেখুন মলফুজাতে ইলিয়াস, উর্দূ)

মাওলানা ইলিয়াস সাহেব বলেন, “কুন্তুম খাইরা উম্মাতীন” এ আয়াতের তাফসীর স্বপ্নযোগে আমার উপর এরূপ এলকা (এলহাম) হয়ে যে, “হে ইলিয়াস, তুমি নবীদের মতোই মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছো”। তিনি নবুয়্যতের দাবী করেননি তবে এখানে ‘মিছলে আম্বিয়া’ দ্বারা মাওলানা ইলিয়াস সাহেব নবুয়্যতের মতোই দাবী করেছেন। কেননা আরবীতে ‘মিছল’ শব্দটি সমকক্ষতা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই মাওলানা ইলিয়াস সাহেব ‘মিছলে আম্বিয়া’ অর্থাৎ নবীদের সমকক্ষ হওয়ার দাবী করেছে। (নাউযুবিল্লাহ)। এছাড়া ‘মলফুজাতে ইলিয়াস’ বইয়ের ১২৫ পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে, মাওলানা ইলিয়াস সাহেব লেখেন, “আমি উত্তরাধিকার সূত্রে নবুয়্যতের তোহফা প্রাপ্ত হয়েছি”(নাউযুবিল্লাহ)

অবশ্য এট নতুন কিছু ঘটনা নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার উম্মতকে ভন্ড নবীদের আবির্ভাবের ব্যাপারে আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমার পরে ত্রিশের মতো মিথ্যুক, দাজ্জাল বা প্রতারক লোকের উদ্ভব না ঘটা পর্যন্ত কিয়ামত আসবে না, যাদের প্রত্যেকেই ধারণা করবে যে, সে আল্লাহর রাসুল” (বুখারী, প্রাঃ হা/৩৪১৩, ৬৫৩৬; মুসলিম, প্রাঃ হা/১৫৭)।

রাসুলুল্লাহর (সাঃ) ভবিষ্যতবাণী প্রমাণিত হয়েছে। যুগে যুগে ভন্ড নবীদের আবির্ভাব ঘটেছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই ভন্ড নবীদের আবির্ভাব শুরু হয়। সর্ব প্রথম যে সমস্ত ভন্ড নবীদের আবির্ভাব হয়েছিলো তারা হলো, আল আসওয়াদ আল আনাসী, তুলাইহা ইবনে খুয়াইলিদ ইত্যাদি। বর্তমান যুগে তাদের মধ্যে গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী মির্যাও অন্যতম।

মাওলানা ইলিয়াস নিজেকে নবী দাবী না করলেও নবীর সমকক্ষতা দাবী করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এজন্যই হয়তো বলেছেন, “আমি আমার উম্মতের জন্য বিপথগামীকারী ইমাম ও নেতৃবর্গের আশংকা করছি” (সহিহ তিরমিজী)

যাইহোক, ইলিয়াস সাহেব নিজেই বলেন, প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ জামা’আত ও তার নিয়ম পদ্ধতি আমি স্বপ্নে প্রাপ্ত হয়েছি। এখানে জিজ্ঞাস্য, স্বপন কি শরিয়তের দলীল হতে পারে? স্বপ্নে মানুষ টাকা পায়, রাজা বাদশাহ হয়, রেলগাড়িতে চড়ে, বিবাহ করে, বোম্বাই আমেরিকা যায়, মিষ্টি খায়। জাগ্রত হলেই সব শুন্য হয়ে যায় (শয়তানও স্বপ্ন দেখায়ে থাকে)। স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা বিশেষজ্ঞ ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সীরিন (রঃ) বলেছেন, “স্বপ্ন তিন ধরণের হয়ে থাকে। মনের কল্পনা ও অভিজ্ঞতা। শয়তানের ভয় প্রদর্শন ও কূমন্ত্রণা এবং আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সুসংবাদ” (বর্ণনায়ঃ বুখারী)। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকেও এসেছে, ঈমানদারের স্বপ্ন নবুয়্যতের ‘ছেচল্লিশ’ ভাগের ‘একভাগ’।(বুখারী, মুসলিম)। অর্থাৎ নবীগণের স্বপ্ন সত্য ছিলো, কিন্তু ঈমানদারের স্বপ্ন ববীদের চেয়ে ‘ছেচল্লিশ’ ভাগের ‘একভাগ’ সত্য হতে পারে। তাই যদি ধরেও নেওয়া যায় স্বপ্নটি ‘ছেচল্লিশ’ ভাগের ‘একভাগ’ সত্য। তারপরেও কি স্বপ্ন শরিয়তের দলীল হতে পারে? ইলিয়াস সাহেবের স্বপ্ন যে শয়তানী স্বপ্ন নয় তার গ্যারান্টি কি আছে? কারণ, শয়তানও চায় এমনভাবে দ্বিন ইসলামকে বিকৃত করে দিতে যাতে সবাই আস্তে আস্তে দ্বীন ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় অথচ তারা টেরও পাবেনা। যেভাবে শয়তান খৃষ্টান, ইহুদীদের এমনকি শিয়া সম্প্রদায়কে দ্বীন ইসলাম থেকে বিচ্যুত করে দিয়েছে। আল কোর’আনে তা অনেকবার উল্লেখ রয়েছে।

মনে করুন, স্বপ্নে এক ব্যক্তি বিবাহ করলো, পরের দিন ঐ স্বপ্নের মহিলাকে তার স্ত্রী ঘরে আনতে পারবে কি? মোটেও পারবে না বরং ঝাটা মেরে তাড়িয়ে দেবে। যেহেতু স্বপ্ন শরীয়ত নয় সেহেতু ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে এই বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে। স্বপনে কেউ তার স্ত্রীকে তালাক দিলেও সেটা তালাক হবেনা। কারণ স্বপ্ন শরীয়ত নয়। তাই স্বপ্নের বিবাহ ও তালাক শরীয়তের দৃষ্টিতে বাতিল। কেননা একমাত্র নবীগণের স্বপ্ন ব্যতীত অন্য কারো স্বপ্ন দ্বারা শরীয়তের কোনো হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে কি করে ইলিয়াস সাহেবের স্বপ্নের তাবলীগ শরীয়ত সম্মত হবে?

উপরন্তু এরা বলে থাকে যে, প্রচলিত তাবলীগ “নারী পুরুষ প্রত্যেকের উপর ফরজে আইন” (দেখুনঃ ‘দাওয়াতে তাবলীগ’ ২য় খন্ড, ৩৭ পৃঃ)। লেখক মাওলানা আম্বর আলী বলেন, “বর্তমানে আমরা তাবলীগ শুধু আলেমদের জন্য খাছ করিয়া দিয়াছি অথচ তাবলীগ প্রত্যেকের উপর ফরজে আইন”। প্রচলিত তাবলীগ যদি প্রত্যেকের উপর ফরজে আইন বলে গণ্য হয় তাহলে ইলিয়াস সাহেবের পূর্ববর্তী জামানার মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, গাউছ কুতুব, ইমাম, ফিকাহ, আউলিয়ায়ে কিরাম ও সকল মুসলমানগণ যারা এই ছয় উছুলী তাবলীগ, চিল্লাহ, গাশত করেননি তারা কি ফরজে আইনকে তরক করে দিয়েছেন? তাদের উপায় কি হবে? পবিত্র কোর’আনের কোথাও এই ছয় উছুলী তাবলীগের কথা নেই।

প্রচলিত তাবলীগ কেবলমাত্র ইলিয়াস সাহেবের স্বপ্ন ও তার মনগড়া বানানো (দেখুনঃ ‘তাবলীগের পথে’ ২৪ পৃঃ)। সেখানে লেখক মাওলানা বছিরউদ্দিন দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৬০ ইং, হজরত ইলিয়াস প্রবর্তিত তাবলীগের নিয়ম হজরত ইলিয়াস তার কৃত মলফুজাত কিতাবে বলেন, “এই তাবলীগের নিয়ম আমার উপর স্বপ্নে প্রদত্ত হইয়াছে। খোদাতায়ালার এরশাদ ‘কুনতুম খাইরা উম্মাতীন’ –এর পরিপ্রেক্ষিতে এই হুকুম হইলো যে, ‘হে ইলিয়াস, তুমি পয়গাম্বরদের মতোই মানুষের জন্য প্রেরিত হইযাছো।”

তাবলীগওয়ালারা শুধুমাত্র মুসলমানদেরকেই দ্বীনের দাওয়াত দেয়। এজন্যই শুধুমাত্র মুসলমানদের নিকট কলেমার দাওয়াত নিয়ে আসে। যার প্রমাণ, (‘মলফুজাতে ইলিয়াস’, উর্দু, ৪৬ পৃঃ), “মুছলমান দুহি কিছিমকে হুছেক্তে হেয়, তিছরি কই কিছিম নেহি, ইয়া আল্লাহকে রাস্তে মে খুদ নিকালনে ওয়ালেহ ইয়া নিকালনে ওয়ালুকু মদদ করনেওয়ালেহু।” অর্থঃ মুসলমান দুই প্রকারের হতে পারে, ৩য় প্রকার কোনো মুসলমান নেই, যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হয় (চিল্লাহ) এবং যারা এদেরকে সাহায্য করে।

মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের ফতোয়া অনুসারে অনেকেই মুসলমান নয়। কারণ আমরা যারা তাবলীগের চিল্লাহয় যাইনা বা যারা এদের তেমন সাহায্যও করিনা। ইলিয়াস সাহেবের পূর্ববর্তী জামানার কেউই তো এই ছয় উছুলী তাবলীগের চিল্লাহ, নেসাব, গাশত করেননি, তবে তারা কি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত নন? (নাউযুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ)।

মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের বাপ দাদাগণও তো এই তাবলীগের চিল্লাহ নেসাব গাশত করেননি, তাদের উপায় কি হবে?

এরা প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বের মদীনার ইসলামকে ৭০/৮০ বছর পূর্বের দিল্লীর স্বপ্নে পাওয়া ইসলাম দ্বারা বদলিয়ে ফেলেছে। (দেখুনঃ ‘আল আছরে’, মাওলানা হাছান আলী, ঢাকা)। তিনি বলেন, “আজকাল আমাদের ব্যবস্থা দিয়া নবী সাহেবের ব্যবস্থা বদল করা হইয়াছে”। (নাউযুবিল্লাহ মিন জালিক)উক্ত চটি বইয়ের ৩য় পৃষ্ঠায় লিখেছে, “ওয়াছ ও নছিয়ত দ্বারা মানুষ তৈয়ার হয়, তাবলীগ জামা’আত দ্বারা রূহ তৈয়ার হয়, শুধু নাছ দ্বারা সত্যিকার প্রচার বাকি থাকিবে এবং জাহান্নামে যাইতে হইবে”। (নাউযুবিল্লাহ)

এখানে লেখক জোর দিয়া বলেন, যারা তাবলীগের মাধ্যমে সত্যিকার প্রচার করবে না তাদেরকে জাহান্নামে যেতেই হবে। আমার প্রশ্ন, যারা এই প্রচলিত তাবলীগের জামানা পান নি, তারা কি সকলেই জাহান্নামী?

ইসলাম ধর্মের মূল স্তম্ভ (উছুল বা বেণা) হলো ৫ টি (পাঁচটি) যথা কলেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজ্জ। ইলিয়াস সাহেব এই পাঁচটি স্তম্ভকে মনগড়াভাবে ছয় উছুলে রূপান্তর করে নিয়েছে। যথা কলেমা, নামাজ, একরামূল মুছলেমিন, এলেম ও জিকির, তাছহি নিয়্যত ও নফর ফি ছাবিলিল্লাহ বা তাবলীগ। ইসলামে পাঁচটি স্তম্ভকেই ফরজ করা হয়েছে। এগুলোর কোনোটিকে অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যেতে হবে বা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। নবীয়ে দোজাহার শরীয়তের উপর কারও কর্তৃত্ব চলেনা। শরীয়তের হুকুম বাড়ানো বা কমানো নবীদের কাজ, এতে উম্মতের কোনো অধিকার নেই।

ইলিয়াসসাহেব আমাদের নবী করীম (সাঃ)-এর পাঁচটি স্তম্ভকে ভেঙ্গে তার ইচ্ছামতো ছয় উছুলি ইসলাম বানিয়ে নিয়েছে। এখানে প্রশ্ন, ছয় উছুলি পদ্ধতি কি নবীর আমলে ছিলো? তিনি কি এভাবে দাওয়াত দিতেন?নাকি তার এই পদ্ধতির কথা জানা ছিলোনা? নাকি নবীজী (সাঃ) দ্বীনের দাওয়াতের পদ্ধতিটি ঠিকমতো  বিদায় হজ্জের ভাষণের দিনেও কি ইসলাম পরিপূর্ন ছিলো না? নাকি আল্লাহতায়ালাই তাকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেননি? তাকে এমনি এমনিই আল্লাহপাক বলেছিলেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম”। (নাউযুবিল্লাহ)

তাবলীগওয়ালাদের অনেকেই বলে থাকেন, এইগুলো ইসলামের স্তম্ভ বা বেণা নয়, এইগুলো তাবলীগের উছুল। স্তম্ভ বা বেণা এক জিনিস ও উছুল ভিন্ন জিনিস। এভাবে এরা সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে এবং নিজেরাও ধোঁকায় পতিত আছে। অথচ স্তম্ভ বা বেণা ও উছুলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আরবী ব্যাকরণ মতে এরুপ শব্দকে ‘মুরাদেফ লফজ’ বলে। উছুল শব্দটি ‘আছল’ এর বহুবচন, আছল শব্দের অর্থ মূল, শিকড়, স্তম্ভ ইত্যাদি। তাই উছুল বা স্তম্ভ বা বেণার মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো পার্থক্য নেই। অন্ন আর ভাত বা নুন আর লবন যেমন একই কথা, তেমন উছুল বা স্তম্ভ বা বেণা একই কথা।

এখন তাবলীগ সমর্থকেরা যদি বলেন, এই ছয়টা ইসলামের উছুল নয়, তাবলীগের উছুল তবে তারা ইসলামকে বিকৃত করা হবে। কেননা, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ থেকে দু’টি (কলেমা ও নামাজ) নিয়ে ছয় উছুল গঠন করা হয়েছে। তারমধ্যে বাকি চারটি ইলিয়াস সাহেবের তৈরি। আর দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন মানেই বিদ’আত। যদি এবার জোড় দিয়ে বলে এই ছয়টি উছুল (স্তম্ভ) ইসলামের নয় বরং তাবলীগের উছুল তাহলেও ঈমান থাকবে না। আর থাকার কথাও না, কেননা এক্ষেত্রে কলেমা ও নামাজকে নিয়ে এবং বাকি তিনটিকে (রোজা, জাকাত, হজ্জ) অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। আবার যেহেতু বলছে এগুলো ইসলামের উছুল নয় অর্থাৎ একথা বলার অর্থই হচ্ছে কলেমা, নামাজ ইসলামের উছুল (স্তম্ভ) নয়। সেক্ষেত্রে এটা কুফরি করা ছাড়া উপায় নেই। আবার যদি কোনো তাবলীগ সমর্থক পন্ডিত ভাই বলেন, এগুলো সবই ইসলামের উছুল তাহলে ঈমান থাকার তো কোনো কথাই নেই। কেননা একরামূল মুছলেমিন, এলেম ও যিকির, তাছহি নিয়্যত ও নফর ফি ছাবিলিল্লাহ এগুলো কোনোটিই ইসলামের মূল স্তম্ভ নয়। গাইরে উছুলকে ইসলামের উছুল হিসেবে মান্য করা কুফরি। (এখানে ভালো করে একটু পড়ে দেখবেন)।

Facebook Comment