Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

মা-বাবার মৃত্যুর পর সন্তানের করণীয় আমলসমূহ



পৃথিবীতে মা বাবা একটি ছোট্ট শব্দ কিন্তু শব্দ দুটির সাথে কত যে আদর, স্নেহ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা রয়েছে তা বিশ্বের কোনো মাপযন্ত্র দিয়ে মাপা যাবে না। মা বাবা আমাদের জন্য কত না দুঃখ কষ্ট করেছে, সন্তানকে ঠিকমতো খাইয়ে নিজে না খেয়ে থেকেছেন, নিজে ভালো পোষাক না পড়ে সন্তানকে পড়িয়েছেন, কত সময় সন্তানের অপেক্ষায় থাকতেন, আরও কত কি। যাদের মা বাবা চলে গিয়েছে, তারাই বোঝেন মা বাবা কত বড় সম্পদ। তারাই বোঝেন যেদিন থেকে মা বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন সেদিন থেকে মনে হয় কি যেনো একটা হারিয়ে গেলো, তখন বুকটা কেঁপে ওঠে, চোখ দিয়ে পানি পরে। কি শান্তনাই বা তাদেরকে দেওয়া যায়। সেই মা বাবা যাদের চলে গেছে তারা কি মা বাবার জন্য কিছুই করবে না? এত কষ্ট করে আমাদেরকে যে মা বাবা লালনপালন করেছেন তাদের জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? অনেকে বলেন, চল্লিশা চেহলামও যদি না করা যায়, মিলাদও যদি না করা যায় তাহলে মা বাবার জন্য করবো টা কি? তাই আলোচ্য প্রবন্ধে কোর’আন ও সুন্নাহর আলোকে মৃত মা বাবার জন্য কি ধরণের আমল করা যাবে এবং যে আমলের সওয়াব তাদের নিকট সরাসরি পৌছে যাবে তা উল্লেখ করা হলোঃ

১। বেশি বেশি দোয়া করাঃ মা বা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর তার সন্তানরা মা বাবার জন্য বেশি বেশি দোয়া করবে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দয়া করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে এবং কি দোয়া করতে হতে তাও শিখিয়ে দিয়েছেন। আল কোর’আনে এসেছে,
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
“হে আমার রব! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালনপালন করেছেন” (সুরা বানী ইসরাঈল, ২৪)।

আরেকটি দোয়া আল্লাহপাক শিখিয়ে দিয়েছেন,
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
“হে আমাদের রব! রোজ কিয়ামতে আমাকে, আমার পিতা মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন” (সুরা ইবরাহীম, ৪১)।

এছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পিতা মাতার জন্য দোয়া করার বিশেষ কৌশলও শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন,

“হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং যলিমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন” (সুরা নূহ, ২৮)।

মা বাবা এমন সন্তান রেখে যাবেন যারা তাদের জন্য দোয়া করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিন’টি আমল বন্ধ হয় না। ক) সদকায়ে জারিয়া খ) এমন জ্ঞান যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও গ) এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে” (সহিহ মুসলিম, ৪৩১০)।

মূলতঃ জানাজার নামাজ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া স্বরূপ।

২। দান সদকাহ করাঃ মা বাবা বেঁচে থাকতে দান সদকাহ করে যেতে পারেন নি বা বেঁচে থাকলে হয়তো আরো দান সদকাহ করতেন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে সন্তান্রা দান সদকাহ করতে পারে। হাদিসে এসেছে, “আয়েশা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল আমার মা হঠাত মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই কোনো অসিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারণা তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান সদকাহ করতেন। আমি তার পক্ষ থেকে সদকাহ করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন” (সহিহ মুসলিম, ২৩৭৩)।

দান সদকাহর মধ্যে উত্তম দান হলো সদকায়ে জারিয়া বা চল্মান সদকাহ প্রদান করা। যেমন পানির কূপ খনন করা, দ্বীনি মাদ্রাসার জন্য দান, কোর’আন শিক্ষার জন্য মক্তব ও প্রতিষ্ঠান তৈরি, স্থায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করা ইত্যাদি।

৩। মা বাবার পক্ষ থেকে সিয়াম বা রোজা পালন করাঃ মা বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের কোনো মানতের সিয়াম কাযা থাকে, সন্তান তাদের পক্ষ থেকে সিয়াম পালন করলে মৃত মা বাবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো এমতাবস্থায় যে তার উপর রোজা ওয়াজিব ছিলো। তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিসগণ রোজা রাখবে” (সহিহ বুখারী, ১৯৫২)।

অধিকাংশ আলেমগণ এ হাদিসটি শুধুমাত্র ওয়াজিব রোজা বা মানতের রোজার বিধান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে নফল সিয়াম বা রোজা রাখার পক্ষে দলীল নাই।

৪। হজ্জ বা উমরাহ করাঃ মা বাবার পক্ষ থেকে হজ্জ বা উমরাহ করলে তা আদায় হবে এবং তারা উপকৃত হবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, “জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাঃ০-এর কাছে আগমন করে বললো, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্জ সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন কি আমি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ করো। তোমার কি ধারণা যদি তোমার মা-র উপর ঋণ থাকতোতবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় করো। কেননা আল্লাহর দাবী পরিশোধ করা অধিক উপযোগী” (সহিহ বুখারী, ১৮৫২)।

তবে মা বাবার পক্ষ থেকে যে লোক হজ্জ বা উমরাহ করতে চায় তার জন্য শর্ত হলো সে আগে নিজের হজ্জ বা উমরাহ করতে হবে।

৫। মা বাবার পক্ষ থেকে কোরবানি করাঃ মা বাবার পক্ষ থেকে কোরবানি করলে তার সওয়াব দ্বারা তার মৃত মা বাবা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কোরবানির জন্য আনা হলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আসো, তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো করো। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ করার সময় বললেন, ‘বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মোহাম্মাদ, তার বংশধর এবং সকল উম্মতে মোহাম্মদীর পক্ষ থেকে কবুল করো’। এভাবে তিনি তা দ্বারা কোরবানি করলেন” (সহিহ মুসলিম, ৫২০৩)।

৬। মা বাবার অসিয়ত পূর্ণ করাঃ মা বাবা শরীয়ত সম্মত কোনো অসিয়ত করে গেলে তা পূর্ণ করা সন্তানদের উপর দায়িত্ব। রাশীদ ইবনে সুয়াইদ আসসাকাফী (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা একজন দাস মুক্ত করার জন্য অসিয়ত করে গেছেন। আর আমার নিকট কালো একজন দাসী আছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তাকে ডাকো, সে আসলো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার রব কে? উত্তরে সে বললো, আমার রব আল্লাহ। আবার প্রশ্ন করলেন আমি কে? উত্তরে সে বললো, আপনি আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তাকে মুক্ত করে দাও; কেননা সে মুমিনা” (সহিহ ইবনে হিব্বান, ১৮৯)।

৭। মা বাবার বন্ধুদের সম্মান করাঃ মা বাবার বন্ধুদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, সম্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া, খোঁজখবর নেওয়া, তাদেরকে হাদিয়া দেওয়া। এ বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, “একবার মক্কার পথে চলার সময় আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর এক বেদুঈনের সাথে দেখা হলে তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং তাকে সে গাধায় চড়ালেন যে গাধায় আব্দুল্লাহ (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন এবং তার (আব্দুল্লাহ) মাথায় যে পাগড়ীটি পরা ছিলো তা তাকে প্রদান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার (রাঃ) বললেন, তখন আমরা আব্দুল্লাহকে বললাম, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক! এরা গ্রাম্য মানুষ, সামান্য কিছু পেলেই এরা সন্তুষ্ট হয়ে যায় (এতসব করার কি প্রয়োজন ছিলো?) উত্তরে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তার পিতা, (আমার পিতা) উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-এর বন্ধু ছিলেন। আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “পুত্রের জন্য পিতার বন্ধু বান্ধবের সাথে ভালো ব্যবহার করা সবচেয়ে বড় সওয়াবের কাজ” (সহিহ মুসলিম, ৬৬৭৭)।

মৃতদের বন্ধুদের সাথে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর আমলও আমাদেরকে উৎসাহিত করে। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখনই কোনো বকরী যবেহ করতেন তখনই তিনি বলতেন, এর কিছু অংশ খাদিজার বান্ধবীদের নিকট পাঠিয়ে দাও” (সহিহ মুসলিম, ৬৪৩১)।

মা বাবার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখাঃ সন্তান তার মা বাবার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালোবাসে, সে যেন তার পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সুসম্পর্ক রাখে” (সহিহ ইবনে হিব্বান, ৪৩২)।

৯। ঋণ পরিশোধ করাঃ মা বাবার কোনো ঋণ থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করা সন্তানদের উপর বিশেষভাবে কর্তব্য। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঋণের পরিশোধ করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ না তা তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়” (সুনান ইবনে মাজাহ, ২৪১৩)।

ঋণ পরিশোধ না করার কারণে জান্নাতে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়; এমনকি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয়। হাদিসে আরও এসেছে, “যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার ঋণ পরিশোধ না করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না” (নাসাঈ, ৭/৩১৪; তাবরানী ফিল কাবীর, ১৯/২৪৮; মুস্তাদারাকে হাকিম, ২/২৯)।

১০। কাফফারা আদায় করাঃ মা বাবার কোনো শফথের কাফফারা, ভূলকৃত হত্যাসহ কোনো কাফফারা বাকি থাকলে সন্তান তা পূরণ করবে। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন, “যে ব্যক্তি ভূলক্রমে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং রক্তপণ দিতে হবে তার পরিজনদের; তবে তারা যদি ক্ষমা করে দেয় (তাহলে সেটা ভিন্ন কথা)” (সুরা নিসা, ৯২)।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কসম খেয়ে শপথ করার পর তার থেকে উত্তম কিছু করলেও তার কাফফারা আদায় করবে” (সহিহ মুসলিম, ৪৩৬০)।

এ বিধান জীবিত ও মৃত সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। দুনিয়ার বুকে কেউ অন্যায় করলে তার কাফফারা দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ অন্যায় করে মারা গেলে তার পরিবার পরিজন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাফফারা প্রদান করবেন।

১। ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ মা বাবার জন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় আল্লাহতায়ালা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মৃত্যুর পর কোনো বান্দাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে আমার রব! আমি তো এত মর্যাদার আমল করিনি, কিভাবে এ আমল আসলো? তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো” (আল আদাবুল মুফরাদ, ৩৬)।

মা বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার বিষয়ে উসমান (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, “উসমান (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কোনো এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পার্শ্বে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার জন্য ঈমানের উপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা করো, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে” (মুসনাদুল বাজ্জার, ৪৪৫)।

তাই সুন্নাত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেয়ার পর তার কবরের পার্শ্বে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য একাকীত্বে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।

১২। মান্নত পুরণ করাঃ মা বাবা কোনো মান্নত করে গেলে সন্তান তার পক্ষ থেকে পূরণ করবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “কোনো মহিলা রোজা রাখার মান্নত করেছিলো কিন্তু সে তা পূরণ করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলো। এরপর তার ভাই বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আসলে তিনি বললেন, তার পক্ষ থেকে রোজা পালন করো” (সহিহ ইবনে হিব্বান, ২৮০)।

১৩। মা বাবার ভাল কাজসমূহ জারি রাখাঃ মা বাবা সেসব ভালো কাজ অর্থাৎ মসজিদ তৈরি করা, মাদ্রাসা তৈরি করা, দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ বাড়ির কাজ বা অন্যান্য শরিয়তসম্মত যে কাজগুলো করে গিয়েছেন সন্তান হিসেবে তা যাতে অব্যাহত থাকে তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব ভালো কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদিসে এসেছে, নবীজী (সাঃ) বলেন, “ভালো কাজের পথ প্রদর্শনকারী একাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সওয়াব পাবে” (সুনান তিরমিজী, ২৬৭০)।

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ইসলামের ভালো কাজ করলো, সে একাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সওয়াব পাবে। অথচ তাদের সওয়াব থেকে কোনো কমতি হবেনা” (সহিহ মুসলিম, ২৩৯৮)।

১৪। কবর যিয়ারত করাঃ সন্তান তার মা বাবার কবর যিয়ারত করবে। এর মাধ্যমে সন্তান এবং মা বাবা উভয়ই উপকৃত হবে। এ বিষয়ে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, অতঃপর মোহাম্মদের মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করো, কেননা তা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়” (তিরমিজী, ১০৫৪)।
কবর যিয়ারত কোনো দিনকে নির্দিষ্ট করা যাবে না। কবর যিয়ারত করার সময় বলবে, “হে কবরবাসি মুমিন মুসলিম আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। নিশ্চয় আমরা আপনাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাদের এবং আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি” (সুনান ইবনে মাজাহ, ১৫৪৭)।

১৫। ওয়াদা করে গেলে তা বাস্তবায়ন করাঃ মা বাবা কারো সাথে কোনো ভালো কাজের ওয়াদা করে গেলে বা এমন ওয়াদা যা তারা বেঁচে থাকলে করে যেতেন, সন্তান যথাসম্ভব তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে। কোর’আন মাজীদে বলা হয়েছে, “আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে” (সুরা বানী ইসরাঈল, ৩৪)।

১৬। কোনো গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করাঃ মা বাবা বেঁচে থাকতে কোনো গুনাহের কাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তা বন্ধ করবে বা শরীয়ত সম্মতভাবে তা সংশোধন করে দেবে। কেওনা আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহ্বান করবে, একাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোনো কমতি হবেনা” (সহিহ মুসলিম, ৬৯৮০)।

১৭। মা বাবার পক্ষ থেকে মাফ চাওয়াঃ মা বাবা বেঁচে থাকতে কারো সাথে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে থাকলে বা কারো উপর যুলুম করে থাকলে বা কাউকে কশট দিয়ে থাকলে মা বাবার পক্ষ থেকে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নিবে অথবা ক্ষতিপুরণ দিবে। কেননা হাদিসে এসেছে, “আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা কি জানো নিঃস্ব ব্যক্তি কে? সাহাবীগণ বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নাই সে হলো নিঃস্ব। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো সবচেয়ে গরীব যে, কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও যাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই সেদিন এসব নির্যাতিত ব্যক্তিদেরকে তার নেক আমলনামা দিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে” (সুনান তিরমিজী, ২৪২৮)।

সুতরাং এধরণের নিঃস্ব ব্যক্তিদের মুক্ত করার জন্য তার হকদারদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া সন্তানদের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মৃত মা বাবার জন্য বিদ’আতী কোনো আমল না করার এবং উপরোক্ত সঠিক আমলগুলো করার জন্য তৌফিক দান করুন। (আমীন)।

Facebook Comment