ইলিয়াস সাহেব নবীজীর (সাঃ) রওজা শরীফ থেকে যে গায়েবী নির্দেশ পেয়েছিলেন বলে দাবী করেন এটা ডাহা মিথ্যে। কারণ আল্লাহ ছাড়া ও তার মনোনীত রাসুল ছাড়া কেউ গায়েবের খবর জানেনা। আল্লাহতায়ালা বলেন,
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ
عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا
“তিনিই (আল্লাহ) গায়েবের অধিকারী, আর তিনি
তার গায়েবের খবর কারো কাছে প্রকাশ করেননা। তবে তার মনোনীত রাসুল ছাড়া” (সুরা
জ্বীন, ২৬)।
আল্লাহপাক আরো বলেন,
قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ ۚ
وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
“বলুন! আল্লাহ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে
কেউ গায়েবের খবর জানেনা এবং তারা জানেনা যে, তারা কখন পূনরোজ্জীবিত হবে” (সুরা
নামল, ৬৫)।
রাসুলও (সাঃ) গায়েবের খবর জানতেন না।
আল্লাহপাক তার রাসুলকে বলেন,
قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي
نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۚ
وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ
السُّوءُ ۚ
إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
“বলুন! আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং
অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে
পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোনো অমঙ্গল কখনো হতে
পারতো না। আমি তো শুধু একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতামাত্র ঈমানদারদের জন্য”
(আল আরাফ, ১৮৮)।
আল্লাহপাক কোর’আনে বলেন,
يَوْمَ يَجْمَعُ اللَّهُ
الرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَا أُجِبْتُمْ ۖ
قَالُوا لَا عِلْمَ لَنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ
عَلَّامُ الْغُيُوبِ
“আল্লাহ যেদিন রাসুলগণকে একত্রিত করবেন আর
তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা উত্তর পেয়েছিলে কি? তারা বলবেন, আমরা তার কিছুই
জানিনা। আপনিই গায়েবের খবর ভালো জানেন” (সুরা মায়েদা, ১০৯)।
এ আয়াতটি গায়েবের ব্যাপারটি আরো সুনিশ্চিত
করে। আল কোর’আনে বলা আছে,
مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا
أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۚ
وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ ۖ
فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنتَ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ ۚ
وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
“(নবী বলবেন) আমি যতোদিন জীবিত ছিলাম,
ততোদিন আমিই তাদের খোঁজখবর নিয়েছি। তারপর যখন আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নিলেন তখন
আপনি (আল্লাহ) তাদের খোঁজখবর রেখেছেন। আপনিই গায়েবের খবর রাখেন” (সুরা মায়েদা,
১১৭)।
পাঠকের কাছে আশাকরি গায়েবীর ব্যাখ্যা হিসেবে
উপরোক্ত আয়াতগুলোই যথেষ্ট।
তাবলীগী জামা’আতের কার্যকলাপে সওয়াবের আশায়
আল্লাহর দ্বীনে অনেককিছুই নতুন সংযোজন। এমনি সংযোজন করেছিলো ইহুদী, খৃষ্টানেরা।
ফলে তারা দ্বীন ইসলাম থেকে বাতিল হয়ে গেছে। আল কোর’আনে তা বহুবার উল্লেখ রয়েছে।
শিয়া মুসলিমরাও তাদের দ্বীনের মধ্যে অতি বাড়াবাড়ির কারণে নামমাত্র মুসলিম হয়ে
পড়েছে। তারা মূল ইসলাম থেকে এখন বহু দূরে।
অনেকে মনে করেন এখানে মাওলানা, মুফতি,
হাফিজ, কারী, মাস্টার, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এরাও তো শামিল। এদের চোখেও কি ভূল ধরা
পড়েনা। অধিকাংশ লোককেই তো এখানে দেখছি। তাছাড়া আমার বাপ দাদাও তো একাজ করেছেন।
তাহলে ভুলটা কোথায়? ইত্যাদি। আসলে এদের সবাই চোখে অন্ধ নয়, মনে অন্ধ। তাই বিদ’আত দিয়ে যে রাস্তাটি শুরু, সেটাকেই ধরতে পারছে না অথবা
তারা বিদ’আতকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা। (বিদ’আতের কুফল অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।
আল্লাহপাক অধিকাংশ লোকের পেছনে ছোটার
ব্যাপারে কোর’আনে বলেন,
وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِي
الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ
إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ
“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা
মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক
কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে” (সুরা আন’আম,
১১৬)।
দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা এবং রাসুল
(সাঃ)-এর দ্বীনকে বিকৃত করাই হলো আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি মিথা আরোপ করা।
আল্লাহতায়ালা তাদের ব্যাপারে জাহান্নামকে নির্ধারিত করে রেখেছেন। আল্লাহপাক
কোর’আনে বলেন,
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى
الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُم مُّسْوَدَّةٌ ۚ
أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِينَ
“যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে,
কিয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কালো দেখবেন। অহংকারীদের আবাসস্থল জাহান্নামে নয় কি?”
(আয যুমার, ৬০)।
এ ব্যাপারে রাসুলও (সাঃ) জাহান্নামের কথা
শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেনো তার
অবস্থান জাহান্নামে করে নেয়” (বুখারী, ১০৭)।
দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি নিষেধ করে রাসুল
(সাঃ) বলেন, “আমার (প্রশংসার) ব্যাপারে তোমরা সীমালংঘন করো না। যেমন খৃষ্টানরা ঈসা
ইবনে মারিয়াম সম্বন্ধে সীমালংঘন করেছে। আমার পরিচয় আমি বান্দা। তাই বলো, আল্লাহর
বান্দা ও তার রাসুল” (বুখারী)।
নবীজী (সাঃ) আরো বলেন, “খবরদার! তোমরা
দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত বিষয় থেকে সতর্ক থাকো। কারণ প্রত্যেক নতুন আবিষ্কৃত
বিষয়ই বিদ’আত, আর প্রত্যেক বিদ’আতই গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা” (আবু দাঊদ, ৩৯৯৩)।
অন্যত্র রাসুল (সাঃ) আরো বলেন, “যে আমাদের
এই দ্বিনে এমন কিছু নতুন আবিষ্কার করলো, যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, তা পরিত্যাজ্য”
(বুখারী, ২৫১২; মুসলিম, ৩২৪৮)
বিভিন্ন মতের কারণে আজ আমাদের ইসলাম শতদলে
বিভক্ত। মতপার্থক্যেও অনেক। তাই সঠিক সিরাতুল মুস্তাকিম চেনার জন্য রাসুল (সাঃ)
তার ও তার খুলাফায়ে রাশেদিনের অনুসরন করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, “তোমাদের মধ্য থেকে
যারা জীবিত থাকবে, তারা অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। অতএব (মতভেদের সময়) আমার
সুন্নাত এবং আমার হিদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতের অনুসরণ করা হবে
তোমাদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। এ সুন্নাতকে খুব মজবুতভাবে মাড়ির দাঁত দিয়ে আঁকড়ে
ধরে থাকো। আর সমস্ত বিদ’আত থেকে বিরত থাকো। কেননা প্রত্যেকটি বিদ’আতই গুমরাহী”
(আবু দাঊদ, ৪৬০৭; তিরমিজী, ২৬৭৬; ইবনে মাজাহ, ৪২৪৪; আহমাদ, ১৬৬৯৪; ইবনে খুযায়মা,
‘জুম’আ অধ্যায় ১৭৮৫; মিশকাত, ১৬৫; রিয়াদুস সালেহীন, ১৫৭)।
অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণনা আছে, রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেন, “ইসলাম শুরু হয়েছিলো অপরিচিতর মতো এবং আবার ফিরে আসবে অপরিচিতর মতো
যেমন শুরুতে ছিলো। সেই অপরিচিতদের জন্যই রয়েছে সুসংবাদ” (মুসলিম, ১৪৫)।
এখানে ‘অপরিচিত’ বলতে ইসলামের শুরুতে নবীজী
(সাঃ) ও সাহাবাগণকে প্রথম প্রথম মানুষ তেমন পাত্তাই দিতো না। অথচ তারাই ছিলো
মুক্তিপ্রাপ্ত দল কিন্তু সকলের কাছে তারা ‘অপরিচিত’ ছিলো যদিও পরে সেটা প্রকাশ
পায়। তেমনি এখানে ‘অপরিচিত’ বলতে ইসলামের সঠিক অনুসারী মুক্তিপ্রাপ্ত দলের লোকেরা
এমনভাবে ইসলাম প্রচার করবে, যাদেরকে অন্যান্য দলগুলো তেমন গুরুত্ব দেবেনা। তারা
উলটো বেশিরভাগ লোকই ‘মুক্তিপ্রাপ্ত’ দলের লোকগুলোকেই বাতিল মনে করবে। আর নিজেরা
ভাববে, আমরাই সঠিকপথে আছি। অথচ তারা ঠিক পথে নেই। এভাবেই হকদলের লোকেরা অন্যদের
কাছে ‘অপরিচিত’ হয়ে পড়বে। এরাই ‘মুক্তিপ্রাপ্ত দল’। নবীজী (সাঃ) সেই অপরিচিতদের
জন্যই সুসংবাদ দিয়েছেন। আজকের দিনে এই মতবিরোধপূর্ণ সমাজে যদি আমরা রাসুল (সাঃ)-এর
অনুসারী হতে পারি এবং সাহাবাগণ যেভাবে কোর’আন ও হাদিসকে বুঝেছেন ও আমল করেছেন
সেভাবে বুঝতে ও আমল করতে পারি, তাহলেই আমাদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব।
বর্তমান শতধাবিভক্ত সমাজে আমাদেরকে সিরাতুল
মুস্তাকিম ও সঠিক দল খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে পবিত্র কোর’আন ও সহিহ হাদিসের আশ্রয়
নিতে হবে। বিদ’আত পরিত্যাগ করতে হবে এবং রাসুল (সাঃ) ও তার যোগ্য উত্তরসূরীরা যেভাবে
তাবলীগ করেছেন সেভাবে আমাদেরও করতে হবে। কোর’আন ও হাদিসের
আলোকে যারা হক তাদেরকেই সঠিক জানতে হবে। অনেকেই নিজেদেরকে কোর’আন ও সহিহ হাদিসের
অনুসারী বলে থাকেন। অথচ তাদের কাজগুলি সহিহ হাদিস বিরোধী। সুন্নাত বিরোধী, শিরক
বিদ’আতী আমল করে কে মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অনুসারীর অন্তর্ভূক্ত হওয়া যায়?
অতএব, আমরা কার স্বার্থ রক্ষার্থে তথাকথিত
হুজুরদের ধোঁকায় পড়ে রাসুল (সাঃ) হতে সহিহ সনদে বর্ণিত হাদিসগুলো ছেড়ে দিয়ে
নিজেদেরকে বিপথগামী করবো? আর কেনইবা নবীজীর (সাঃ) দেখানো পথ বাদ দিয়ে অন্য কারো
সৃষ্ট পথে চলবো?