Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিদআতী অসীলাহ



এ প্রসঙ্গে প্রথম কথা হল, দোয়া হচ্ছে ইবাদত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'দোয়া হচ্ছে ইবাদত।' (মিশকাতঃ দোয়া অধ্যায়)। তিনি আরো বলেন, 'দোয়া হলো ইবাদতের মস্তিষ্ক' (অর্থাৎ মূল)। (মিশকাত)

সুতরাং যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে, ফরিয়াদ করে এবং যা আল্লাহর কাছে চাওয়ার তা তাদের কাছে চায়, তারা সরাসরি শিরকে লিপ্ত। তারা অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ বানাচ্ছে এবং তাদের ইবাদত করছে।

ওয়াবতাগু ইলাইহিল ওসিলার অর্থ পীর বুযুর্গ ধরতে হবে, এমন কথা যারা বলে, তারা কুর'আন সম্পর্কে অজ্ঞ এবং কুর'আনকে নিজেদের দুনিয়াবি স্বার্থে ব্যবহার করে।

  • উসিলা শব্দটি কুর'আন মাজিদে দুই জায়গায় উল্লেখ আছে। তা হলো,
"হে ঈমানদার লোকেরা ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উসিলা (উপায়) অন্বেষণ করো, আর তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।" (সূরা আল মায়িদা ৩৫)

এ আয়াতে উল্লেখিত 'উসিলা অন্বেষণ করো' অর্থ কি? এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত সাহাবী ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, "উসিলা মানে নৈকট্য"। (তাফসীর ইবনে কাসীর)


প্রখ্যাত তাবেয়ী কাতাদা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, "উসিলা অন্বেষণ করা মানে; আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো তার আনুগত্যের মাধ্যমে এবং এমন উত্তম আমলের মাধ্যমে, যে ধরণের আমল দ্বারা তিনি সন্তুষ্ট হন।" (তাফসীর ইবনে কাসির)

  • উসিলা শব্দটি সূরা বনী ইসরাইলেও এসেছে। সেখানে আল্লাহ পাক বলেন, "হে নবী ! তাদের বলোঃ 'তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর যাদের কাছে (বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্যে) দোয়া প্রার্থনা-ফরিয়াদ করো, দুঃখ কষ্ট ও বিপদ মুসিবত দূর করার কোনো ক্ষমতা তাদের নাই। এরা যাদের কাছে প্রার্থনা করে তারা নিজেরাই তো তাদের প্রভূর নৈকট্য লাভের উসিলা করে, এ উদ্দেশ্যে যে, কে তাঁর কতো নৈকট্যে যেতে পারে, তারাও তাঁরই রহমত প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত থাকে। কারণ তাঁর শাস্তি যে অতিশয় ভয়াবহ।" (সূরা বনী ইসরাইল ৫৬-৫৭)

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যে এবং বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্যে মরা বা জীবিত ব্যক্তিদের উসিলা বানাতে কুর'আন সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছে;
  • ১ তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে আল্লাহর শরিক ও সমকক্ষ বানাচ্ছে
  • ২ তারা যাদেরকে উসিলা বানায়, বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট দূর করতে তারা সম্পূর্ণ অক্ষম ও অসহায়
  • ৩ তারা নিজেরাই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য উসিলা খোঁজে
  • ৪ উসিলা মানে আল্লাহর আনুগত্য ও নেক আমল, যা আল্লাহর নৈকট্য ও দয়া লাভের উপায়


* যে যে অসিলা খোঁজা নিষেধ ও দ্বীনের মধ্যে যার মূল্য নেই- তার শ্রেণী বিভাগঃ
  • ১) মৃতদের মাধ্যমে অসিলা খোঁজাঃ তাদের কাছে কোন প্রয়োজনীয় জিনিস চাওয়া, সাহায্য চাওয়া যেটা আজ দেখা যাচ্ছে। একে মানুষ অসিলা মনে করে, কিন্তু মূলতঃ তা নয়। কারণ, অসিলার অর্থ হল আল্লাহ নিকটবর্তী হওয়া; যা ঈমানের দ্বারা এবং নেক কাজের দ্বারা সম্ভব। অন্যদিকে মৃতদের কাছে দোয়া করা আল্লাহ হতে মুখ ফিরানোর নামান্তর। তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ (সুব) বলেনঃ আল্লাহ ছাড়া এমন অন্যের কাছে দোয়া কর না যারা না পারে তোমার উপকার করতে, আর না পারে তোমার ক্ষতি করতেযদি তা কর তবে নিশ্চয়ই তুমি মোশরেকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউনুস ১০; ১০৬)
  • ২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সম্মানের অসিলা খোঁজাঃ যেমন বলা, হে আমার রব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসিলায় আমাকে রোগমুক্ত কর। এটা বেদআত। কারণ সাহাবীরা কেউ এটা করেন নাই। কারণ খলীফা ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর অসিলায় দোয়া করেছিলেন তার জীবিত অবস্থায় এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর তাঁর অসিলায় বৃষ্টির জন্য দোয়া করেননি। আর যে হাদীসে বলা হয় আমাকে অসিলা করে দোয়া কর সেটা মূলে হাদীসই নয়- যা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন। আর এই বেদআতী অসিলা মানুষকে র্শিকে পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয় যখন এই ধারণা করা হয় যে, আল্লাহ (সুব) কোন মাধ্যম ছাড়া করতে পারেন না। যেমন আমীর ও বিচারকগণ। এতে আল্লাহকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয়। ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি আল্লাহ ছাড়া অন্যের অসিলা করে আল্লাহর কাছে চাওয়াকে, অপছন্দ করি।
  • ৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর তাঁর কাছে দোয়া করাঃ যেমন বলা, হে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দোয়া করুন। এটা জায়েয নয়। কারণ সাহাবীরা এটা কেউ করেননি। কারণ, আ্ললাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমলনামা তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া বন্ধ হয়ে যায়ঃ সাদাকায়ে জারিয়া করে থাকলে এবং ঐ উপকারী ইলম যা সে শিখিয়েছে এবং নেক সন্তান যে পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে। (সহীহ মুসলিম)

Facebook Comment