Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

অসীলাহ কি?



অসীলাহ কথাটি বলতে বোঝায় যার মাধ্যমে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছা যায় অর্থাৎ অসীলাহ হচ্ছে সেই উপায় ও মাধ্যম যা লক্ষ্যে পৌছিয়ে দেয়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে অসীলাহ অর্থ নৈকট্য ও মাধ্যম বা যার মাধ্যমেবা যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট বস্তু পর্যন্ত পৌছা বা নিকটবর্তী হওয়া যায়। অর্থাৎ এমন আমল করা যার মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন করা যায়।

আল কোর’আনে অসীলাহর অর্থঃ আল কোর’আনে দু’টি আয়াতে সুরার দু’টি আয়াতে অসীলাহ শব্দটির উল্লেখ এসেছে। উলামায়ে কেরামগণ কোর’আনে অসীলাহ শব্দের অর্থ তাই করেছেন, যা সৎ কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। কোর’আনের আয়াত দু’টি নিম্নরূপঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার নিকট অসীলাহ সন্ধান করো এবং তার পথে জেহাদ করো। অবশ্যই তোমরা মুক্তিপ্রাপ্ত হবে” (সুরা মায়েদা, ৩৫)।

আরেকটি আয়াত হলো,
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا
“তারা (কতিপয় জনসমষ্টি) যাদেরকে যাদেরকে আহ্বান করে তারাই তাদের প্রতিপালকের নিকট অসিলাহ সন্ধান করে। তাদের মধ্যে কে অধিক নিকটবর্তী; আর তারা তার (আল্লাহর) রহমতের আশা করে ও তার আযাবকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের আযাব ভয়াবহ” (আল ইসরা, ৫৭)।

প্রথম আয়াতঃ প্রথম আয়াতের ব্যাখায় ইমামুল মুফাসসিরীন হাফিজ ইবনু জারীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, তোমাদের প্রতি আরোপিত যাবতীয় আদেশ ও নিষেধ মান্য করে আনুগত্যের সাথে আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও। অর্থাৎ আল্লাহর নিকট নৈকট্য তালাশ করো তাকে সন্তুষ্টকারী আমলের মাধ্যমে।

হাফিজ ইবনু কাসীর ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, অসিলাহ অর্থ নৈকট্য। অনুরূপ অর্থ সংকলিত হয়েছে মুজাহিদ, হাসান, আব্দুল্লাহ বিন কাসীর, সুদ্দী, ইবনু যায়েদ ও অপরাপরগণ থেকে। কাতাদাহ থেকেও এরূপ সংকলিত হয়েছে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো তার আনুগত্যের মাধ্যমে মাধ্যমে ও তাকে সন্তুষ্টিকারী আমলের মাধ্যমে। অতঃপর ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ সকল নেতৃস্থানীয় আলেমগণ আয়াতের আয়াতের তাফসীরে যা বলেছেন এতে (নির্ভরযোগ্য) তাফসীরকারদের মাঝে কোনো দ্বিমত নেই। আর তা হচ্ছে এই যে, অসীলাহ হচ্ছে ঐ বিষয় যার মাধ্যমে অভিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্যে পৌছা যায়। (তাফসীর ইবনু কাসির ৫ম খন্ড ৮৫ পৃষ্ঠা)।

দ্বিতীয় আয়াতঃ বিশিষ্ট সাহাবী ইবনু মাসুদ (রাঃ) আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার উপলক্ষ্য সম্পর্কে যা বলেছেন তাতে তার অর্থ স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেছেন, “কিছু সংখ্যক মানুষ কিছু সংখ্যক জ্বীনের পূজা করতো, অতঃপর পূজ্য জ্বিন সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করে, কিন্তু তারা (ঐ মানব সম্প্রদায়) নিজেদের ধর্মে (জ্বীন পূজায়) বহাল থাকে” (বুখারী)।

হাফিজ ইবনে হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, জ্বীনের পূজাকারী মানব সম্প্রদায় জ্বীন পূজায় বহাল থাকে, অথচ এ সকল জ্বীন তা পছন্দ করতো না, যেহেতু তারা ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর নিকট অসিলাহ কামনা করতে শুরু করেছে। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড ৩৯৭ পৃষ্ঠা)।

উক্ত আয়াতের এটাই হচ্ছে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা। যেমনটি ইমাম বুখারী ইবনু মাসুদ থেকে বর্ণনাপূর্বক তার সহিহ বুখারী গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন।

অসিলাহ বলতে, ঐ সকল বিষয় বস্তু উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়, এ ব্যাপারে আয়াতটি অত্যন্ত স্পষ্ট। এজন্য আল্লাহপাক বলেন, তারা সন্ধান করে এমন সৎ আমল যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।

পক্ষান্তরে, যারা এ আয়াত দু’টি থেকে নবীগণ ও নেককারগণের অবয়ব সত্ত্বা আল্লাহর নিকট তাদের অধিকার ও সম্মানের অসিলাহ গ্রহণ করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করে থাকে তাদের ব্যাখা বাতিল এবং বাক্যকে নিজের স্থান থেকে বিকৃতকরণ, শব্দকে তার প্রকাশ্য নির্দেশনা থেকে পরিবর্তনকরণ ও দলীলকে এমন অর্থে ব্যবহার করার শামিল যার সম্ভাবনা রাখেনা। তদুপরি এমন অর্থ কোনো সালাফ তথা সাহাবা, তাবেঈ ও তাদের অনুসারীগণ বা গ্রহণযোগ্য কোনো তাফসীরকারক বলেননি। যখন প্রতিভাত হলো যে, অসীলাহ শব্দের অর্থঃ ঐ সকল কর্ম যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এবার এই সৎকর্মটি শরীয়তসম্মত কিনা জ্ঞাত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

কারণ, আল্লাহ এ সকল আমল নির্বাচন করার দায়িত্ব আমাদের দিকে সোপর্দ করেননি বা সেতা চিহ্নিত করার ভার আমাদের বিবেক ও রুচির উপর ছাড়া হয়নি। কেননা এমনটি হলে আমলে বৈপরিত্র ও বিভিন্নতা সৃষ্টি হতো। তাই আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমলের ক্ষেত্রে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে এবং তার নির্দেশনা ও শিক্ষার অনুসরণ করতেকেননা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা কোন বিষয় তাকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মাধ্যমগুলো জানা। আর তা এভাবে সম্ভব; প্রতিটি মাস’আলার (বিষয়) আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) যা প্রবর্তন ও বর্ণনা করেছেন তার দিকে প্রত্যাবর্তন করা অর্থাৎ কোর’আন ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

আমরা জানি, কোনো আমল সৎ হওয়ার জন্য তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে খাঁটি হতে হবে এবং আল্লাহর দেয়া নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। অসিলাহ তাই দু’ প্রকার হতে পারেঃ ১। শরীয়ত সম্মত অসীলাহ ও ২বিদ’আতী অসীলাহ

Facebook Comment