‘ফাজায়েলে আমলে’ নবী প্রেমের বিভিন্ন কাহিনী শিরোনামে একটি অধ্যায় আছে। যেখানে আল্লাহপাক বলেছেন কোর’আন ও হাদিস তাবলীগ করতে, সেখানে তাবলীগ করা হয়েছে বিভিন্ন অবান্তর কেচ্ছাকাহিনী দিয়ে। আর সেসব কেচ্ছাকাহিনী এমন চরম পর্যায়ে কোর’আন হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।
১। শায়েখ আবুল খায়ের বলেন, “একবার মদিনা মোনাওয়ারায়
হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকতে হয়। খাওয়ার জন্য কিছুই না পেয়ে
অবশেষে আমি হুজুর এবং শায়ইখানের করবের মধ্যে সালাম পড়িয়া আরজ করিলাম, ‘হে আল্লাহর
রাসুল! আমি আজ রাতে আপনার মেহমান হইবো। এই কথা আরজ করিয়া মিম্বর শরীফের নিকট গিয়ে
আমি শুইয়া পড়িলাম। স্বপ্নে দেখি, হুজুরপাক (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন। ডানে হজরত আবু বকর
(রাঃ), বাম দিকে হজরত ওমর (রাঃ) এবং সামনে হজরত আলী (রাঃ)। হজরত আলী (রাঃ) আমাকে
ডেকে বলেন, এই দেখ, হুজুর (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন। আমি উঠা মাত্রই মহানবী (সাঃ) আমাকে
একটা রুটি দিলেন। আমি অর্ধেক রুটি খেয়ে ফেলি তারপর যখন আমার চোখ খুলিলো তখন আমার
হাতে বাকি অর্ধেক ছিলো (রুটির অবশিষ্টাংশ)”। (ফাজায়েলে হজ্জ, ২৫৬ পৃষ্ঠা/ কোনো
সংস্করণে ১৫৫-১৫৬ পৃষ্ঠা)
সম্মানীত পাঠক। দেখুন কেমন আল্লাহর রাসুল
(সাঃ) সহ অন্যান্য খোদ খলিফারাই ওনার কাছে ছুটে এসেছেন। আল্লাহকে ছেড়ে নবীজীর
মৃত্যুর পর তার রওজায় গিয়ে খাদ্য প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক নয় কি? মৃত্যুর পর
নবীজী কবরে থেকেও খাওয়াতে পারেন এ আকিদাহ পোষণ করা শিরক নয় কি? এই রকম শিরকী
আকিদাহ মানুষকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়, নাকি জাহান্নামের দিকে? অথচ মহান আল্লাহপাক
তার পবিত্র কোর’আনে বলেন,
أَمَّنْ هَٰذَا الَّذِي
يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُ ۚ
بَل لَّجُّوا فِي عُتُوٍّ وَنُفُورٍ
“তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে,
যে তোমাদেরকে রিযিক দিবে? বরং তারা অবাধ্যতা ও বিমুখতায় ডুবে রয়েছে” (সুরা আল
মুলক, ২১)।
কোর’আনে আরো বলা আছে,
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ
إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ
كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
“আর পৃথিবীতে কোনো বিচরণশীল প্রাণী নেই, তবে
সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন। তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায়
সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে” (সুরা হুদ, ৬)।
আল্লাহপাক আরো বলেন,
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُم
مِّن دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا
“বলুন! আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য
মনে করো, তাদেরকে আহ্বান করো অথচ ওরা তো তোমাদের কষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখেনা এবং
তা পরিবর্তনও করতে পারেনা” (সুরা আল ইসরা, ৫৬)।
রাসুলও (সাঃ) কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করার
ক্ষমতা নেই। আল্লাহপাক বলেন,
قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ
ضَرًّا وَلَا رَشَدًا
“(হে রাসুল) বলুন! আমি তোমাদের কল্যাণ ও
অকল্যাণ করার মালিক নই” (সুরা জ্বীন, ২১)।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “যখন (কিছূ) চাইবে
আল্লাহর কাছেই চাইবে আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে”
(তিরমিজী)।
প্রিয় নবী (সাঃ) তার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে
নিষেধ করে বলেন, “আমার (প্রশংসার) ব্যাপারে তোমরা সিমালংঘন করোনা। যেমন খৃষ্টানরা
ঈসা ইবনে মরিয়ম সম্বন্ধে সীমালংঘন করেছে। আমার পরিচয় আমি বান্দা। তাই বলো, আল্লাহর
বান্দা ও তার রাসুল” (বুখারী)।
২। বিখ্যাত সুফী (?) ও বুজুর্গ হজরত শায়েখ
আহমদ রেফয়ী (রঃ) ৫৫৫ হিজরী সনে হজ্জ সমাপন করিয়া নবীজীর রওজা জিয়ারতের জন্য মদীনায়
হাজির হন। সেখানে তিনি রওজার সামনে দাড়াইয়া নিম্নোক্ত দু’টি বয়াত পড়েন। ‘দূরে থাকা
অবস্থায় আমি আমার রুহকে হুজুর (সাঃ)-এর খেদমতে পাঠাইয়া দিতাম। সে (রূহ) আমার নায়েব
হইয়া আস্তানা শরীফে চুম্বন করিতো। আজ আমি স্বশরীরে দরবারে হাজির হইয়াছি। কাজেই
হুজুর আপন হস্ত বাড়াইয়া দেন যেন আমার ঠোট উহাকে চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাসিল করে।’
বয়াত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে (?) কবর হইতে হাত মোবারক বাহির হইয়া আসে এবং হজরত রেফয়ী
উহাকে চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাসিল করেন।” (ফাজায়েলে হজ্জ, ২৫৮ পৃষ্ঠা, ২৩ তম নবী
প্রেমের কাহিনী)
চিন্তা করুন! রাসুল (সাঃ) তার মৃত্যুর পর
কোনোদিন আবু বকর (রাঃ), ওমর (রাঃ), ওসমান (রাঃ) বা আলী (রাঃ)-এর জন্য হাত বাড়ালেন
না। কখনো নবী পরবর্তী এতো যুদ্ধ হাঙ্গামার সময় বিপদগ্রস্থ তাবড় তাবড় সাহাবী, তাবে
তাবেঈনদের হাত বাড়ালেন না। আর আর কোন জায়গার কোন রেফয়ীর জন্য কবর থেকে হাত
বাড়ালেন। আবার দেখেন রূহকে মেসেজের মতো করে পাঠান আর প্রতিবারই নবীজী (সাঃ) কবর
থেকে চুমা দেন। এইসব কাহিনী একমাত্র সুফীদেরই হয়ে থাকে। যেমন দেওয়ানবাগীর ১৯৯৮ সালের সম্মেলনে নাকি স্বয়ং আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) দেওয়ান শরীফে
এসেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)
আল্লাহপাক পবিত্র কোর’আনে স্পষ্টভাবে
এব্যাপারে বলেন,
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَىٰ
وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ
“আপনি আহ্বান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং
বধিরকেও না” (আন নামল, ৮০)।
রাসুল (সাঃ) বলেন, “যে নবীর নামে মিথ্যা আরোপ
করে সে যেনো জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়” (বুখারী)।
৩। “জনৈক বেদুঈন হুজুর (ছঃ)-এর কবর শরীফের
নিকট দাড়াইয়া আরজ করিলো, ‘হে রব! তুমি গোলাম গোলাম আজাদ করার হুকুম করিয়াছো। ইনি
(নবী সাঃ) তোমার মাহবুব, আমি তোমার গোলাম। আপন মাহবুবের কবরের উপর আমি গোলামকে (জাহান্নামের)
আগুন হইতে আজাদ করিয়া দাও।’ গায়েব হইতে আওয়াজ আসিলো, তুমি একা নিজের জন্য কেন
আজাদী (ক্ষমা) চাহিলে? সমস্ত মানুষের জন্য কেন আজাদী চাহিলে না। আমি তোমাকে
জাহান্নামের আগুন হইতে আজাদ করিয়া দিলাম।” (ফাজায়েলে হজ্জ ২৫৪ পৃষ্ঠার ১ম কাহিনী)
জনৈক বেদুঈন লোকটি কে? কি তার পরিচয়? রাসুলের
(সাঃ) মৃত্যুর পর তার মাজারে গিয়ে প্রার্থনা করা মাজার পূজারীদের সাদৃশ্য নয় কি?
গায়েবী আওয়াজ শুনা তো নবুয়্যতের কাজ। ঐ বেদুঈন তাহলে কি করে গায়েবী আওয়াজ পেলো,
‘আমি তোমাকে জাহান্নামের আগুন হইতে আজাদ করিয়া দিলাম’? কোর’আন ও হাদিস থেকে আমরা
জানতে পারি, আল্লাহ শুধুমাত্র মূসা (আঃ)-এর সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন এবং একটি
বর্ণনায় আছে মানুষের এমন কোনো যোগ্যতা নেই যে সে আল্লাহর সাথে দুনিয়ায় সরাসরি কথা
বলবে। কিন্তু তাবলীগী নিসাব পড়লে বুঝা যায় আল্লাহ গায়েবীভাবে মানুষের সাথেও সরাসরি
কথা বলেন। আমরা বিশ্বাস করিনা আল্লাহপাক নবী রাসুলদের পরেও সাধারণ মানুষের সাথে
কথা বলবেন। এই আকিদাহ একমাত্র দেওয়ানবাগী, সুরেশ্বরী, ভন্ডপীরগণ ও সুফিবাদীরাই
রাখতে পারেন। কারণ তাদের হজ্জ করা লাগেনা। পবিত্র কাবা এবং স্বয়ং আল্লাহ ও রাসুল
তাদের বাসায় আসেন। (নাউযুবিল্লাহ)
আমরা জানি কিয়ামতের দিন কোনো নবীও অনুমতি
ছাড়া আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবেন না, কেবলমাত্র রাসুল (সাঃ) ছাড়া। আর এখানে
জনৈক বেদুঈন নিজেই আল্লাহর সাথে বিনা অনুমতিতে এই দুনিয়াতেই আল্লাহর কাছে সুপারিশ
করছেন। শুধু কি তাই আল্লাহপাক নিজেই তার সাথে কথা বলছেন।
সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হলো উনি নাহয়
জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ‘সার্টিফিকেট’ পেলেন। বর্ণিত কথা হিসেবে
আল্লাহ তাকে বলেছেন যে সমস্ত মানুষের জন্য কেন আজাদী চাইলে না। কথার কথা তিনি যদি
সকলের জন্যই আজাদী চাইতেন তখন বিষয়টা কেমন হতো? তাহলে কি সকলেই আজাদী পেয়ে যেতেন?
তাহলে কি আর কারও কোনো ইবাদত করার প্রয়োজন ছিলো না? যদি আল্লাহ তার কথায় এতই
গুরুত্ব দেন তাহলে তিনি পরে আরো কেন আজাদীর জন্য দোয়া করলেন না?
আল্লাহপাক বলেন, “কে আছো এমন, যে সুপারিশ
করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া?” (আল বাকারা, ২৫৫)।
মৃত মানুষের কাছে দোয়া করলে, তাদের কাছে
প্রয়োজন পূরণের জন্য আবেদন পেশ করলে তারা তা শুনতে পায়না, কোনো উপকারও করতে
পারেনা। তাদের কাছে গিয়ে বিপদাপদ থেকে উদ্ধারও পাওয়া যাবেনা। আল্লাহ বলেন, “আর
তোমরা যাদেরকে আল্লাহ ব্যতীত ডাকো, তারা খেজুরের বিচির উপরে হালকা আবরণেরও মালিক
নয়। যদি তোমরা তাদেরকে ডাকো তারা তোমাদের ডাক শুনবে না” (সুরা ফাতের, ১৩-১৪)।
এটি আল্লাহপাকের নামে একটি জঘন্য মিথ্যাচার।
আল্লাহপাক কোর’আনে বলেন,
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى
الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُم مُّسْوَدَّةٌ ۚ
أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِينَ
“যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে,
কিয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কালো দেখবেন। অহংকারীদের আবাসস্থল জাহান্নামে নয় কি?”
(আয যুমার, ৬০)।
অথচ, রাসুল (সাঃ) নিজেই আল্লাহর কাছে দোয়া
করেছিলেন, “হে আল্লাহ! আমার কবরকে এমন প্রতিমায় পরিণত করো না যার উপাসনা করা হয়”
(মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ)।
মৃত লোকদের নিয়ে বাড়াবাড়িই মানুষের কুফরীর
মূল কারণ এবং ধর্ম পরিত্যাগ করার বড় মাধ্যম। এ বিষয়ে রাসুল (সাঃ) উম্মতকে সতর্ক
করে বলেন, “সাবধান! তোমরা ধর্মের মধ্যে বাড়াবাড়ি করবেনা, কেননা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি
তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে” (নাসাঈ)।
৪। আল্লামা কাস্তালানী (রঃ) বলেন, “আমি
একবার এমন কঠিন রোগে আক্রান্ত হই যে, ডাক্তারগণ পর্যন্ত নিরাশ হইয়া যায়। অবশেষে
আমি মক্কা শরীফ অবস্থানকালে হুজুর (সাঃ)-এর উছিলায় দোয়া করিলাম। রাত্রিবেলায় আমি
স্বপ্নে দেখি, এক ব্যক্তির হাতে একটি কাগজের টুকরা, তাহাতে লেখা রহিয়াছে, ইহা
আহমাদ বিন কাস্তালানীর জন্য ওষুধ। হুজুরে পাক (সাঃ)-এর তরফ থেকে তাহার নির্দেশে
(?) ইহা দান করা হইয়াছে। আমি ঘুম হইতে জাগ্রত হইয়া দেখি আমার মধ্যে রোগের কোনো
চিহ্ন নাই।” (ফাজায়েলে হজ্জ ২৫৫ পৃষ্ঠা, ৬ নং কাহিনী / কোনো সংস্করণে ১৬৭ পৃষ্ঠা)
আল্লাহপাক পবিত্র আল কোর’আনে বলেন,
أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ
إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ
“আল্লাহ ব্যতীত কে এমন আছে যে বিপদগ্রস্থের
ডাকে সারা দিতে পারে?” (সুরা নামল, ৬২)।
জীবিতকালে বিশ্বনবী (সাঃ) যখন অসুস্থ হতেন
বা কোনো অসুস্থ লোককে দেখতে যেতেন তখন এই দোয়া পাঠ করতেন, “হে মানবমন্ডলীর
প্রতিপালক! এই রোগ দূর করে দিন, আরোগ্য দান করুন। একমাত্র আপনিই আরোগ্য দানকারী।
আপনার ফিফা ব্যতীত আর কোনো শিফা নেই” (সহিহ বুখারী; সহিহ মুসলিম; মিশকাত, ১৫৩০; মুসলিমের
দোয়া পৃষ্ঠা ১৩৪)।
মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) অসুস্থ হলে
কি করেছিলেন আল্লাহতায়ালা তা কোর’আনে বর্ণনা করেছেন,
وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ
يَشْفِينِ
“আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন আল্লাহই আমাকে
আরোগ্য দান করেন” (আশ শুয়ারা, ৮০)।
আল্লাহপাক কোর’আনে বলেন,
وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ
أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
“এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি
তার পালনকর্তাকে আহ্বান করে বলেছিলেন, আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি
দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান” (সুরা আল আম্বিয়া, ৮৩)।
আল্লাহ তাদের আরোগ্য দান করেছিলেন। আর এই
কাহিনীতে নবীজীর (সাঃ) নির্দেশে ওষুধ এবং আরোগ্য লাভ। রাসুলের (সাঃ) জীবিতকালীন
সময়েই তিনি একমাত্র আল্লাহর কাছেই আরোগ্যের দোয়া করতেন। আর এখানে নবীজীর (সাঃ)
কাছেই আরোগ্য লাভ করলেন। তাহলে আল্লাহ কোথায়? মৃত্যুর পরও রাসুল (সাঃ) ডাক্তারী
করেন, রোগী আরোগ্য করেন, স্বপ্নযোগে ফী ছাড়া ওষুধ পাঠান, এমন আকিদাহ কি মুসলিমরা
রাখতে পারে?
একারণে, নবীয়ে করীম (সাঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া
করতেন, “হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তী বানিও না, যার উপাসনা করা হয়” (মুয়াত্তা
মালেক, মুসনাদে আহমাদ)।
৫। “ছাবেত বিন আহমদ বলেন, তিনি একজন
মোয়াজ্জেনকে মসজিদে নববীতে আজান দিতে দেখিয়াছিলেন। মোয়াজ্জেন যখন ‘আচ্ছালাতু
খায়রুম মিনান্নাওম’ বলিলো তখন এক খাদেম আসিয়া তাহাকে একটি থাপ্পড় মারিলো।
মোয়াজ্জেন কাঁদিয়া উঠিয়া আওয়াজ করিলো, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার উপস্থিতিতে আমার সাথে
এইরূপ হইতেছে?’ (মানে বিচার দিলো) সঙ্গে সঙ্গে সেই খাদেমের শরীর অবশ হইয়া গেলো।
লোকজন তাহাকে উঠাইয়া ঘরে লইয়া গেলো এবং তিন দিন পর সে মরিয়া গেলো।” (ফাজায়েলে
হজ্জ, ২৬২ পৃষ্ঠা / কোনো সংস্করণে ১৬২-১৬৩ পৃষ্ঠা)
যখন নবীকে (সাঃ) যুক্ত করা হয়েছে তখনই
আমাদের মুসলিমদের আপত্তি। কারণ নবীর নামে মিথ্যা বলা বা বানিয়ে অবাস্তব বলা,
কোর’আন ও সুন্নাহ বিরোধী কাহিনী বর্ণনা করা, আকিদাহ বিনষ্টকারী কাহিনী প্রচার করা
মুসলিমরা কখনো মেনে নেয়না। এই কাহিনী নিশ্চিতভাবে কবরপূজারী, মাজারপূজারীদের
কর্মকান্ডকে সমর্থন করে। এই কাহিনী নিশ্চিতভাবেই মুসলিমদের কবর পূজায় উৎসাহিত করে।
হাদিসে এসেছে- আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
“রাসুলুল্লাহ (সা;) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। হ্যাঁ
এখন তোমরা কবর যিয়ারত করবে। কারণ কবর (ক) যিয়ারত হৃদয়কে কোমল করে, (খ) নয়নকে অশ্রু
সিক্ত করে এবং (গ) পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে তোমরা শোক ও বেদনা প্রকাশ করতে
সেখানে কিছু বলবে না” (সহিহুল জামে, ৪৫৮৪)।
যেখানে নবী (সা;) বলেছেন, ‘শোক ও বেদনা
প্রকাশ করতে কবরে কিছু বলবে না’ সেখানে নবীকে গিয়ে বিচার দেয়, শরীর অবশ হয়, মারা যায়, চিন্তা করুন। এই কাহিনীকে
কোন ক্যাটাগরীতে ফেলা যাবে বুঝতে পারছিনা।
৬। ইউসুফ বিন আলী বলেন, জনৈক হাশেমী মেয়েলোক
মদীনায় বাস করিতো। তাহার কয়েকজন খাদেম তাহাকে বড় কষ্ট দিতো। সে হুজুরের দরবারে
ফরিয়াদ (বিচার) লইয়া হাজির হইলো। রওজা শরীফ হইতে আওয়াজ আসিলো, তোমার মধ্যে কি আমার
আদর্শের প্রতি আনুগত্যের আগ্রহ নাই। তুমি ছবর করো যেমন আমি ছবর করিয়াছিলাম।
মেয়েলোকটি বলেন, এই শান্তনাবাণী শুনিয়া আমার যাবতীয় দুঃখ মুছিয়া গেলো। ওইদিকে বদ
আখলাক খাদেমগুলো মরিয়া গেলো।” (ফাজায়েলে হজ্জ, ২৫৯ পৃষ্ঠা/ কোনো সংস্করণে ১৫৯
পৃষ্ঠা)
সম্মানীত মুসলিমগণ! উল্লেখিত ঘটনাদ্বয় পড়ুন
আর একটু ভেবে দেখুন। নবী (সাঃ) কবরে থেকেও মানুষের মুসিবত দূর করেন এবং বেয়াদবীর
কারণে মানূষকে মেরেও ফেলেন। জীবদ্দশায় নবীজী ৯সাঃ) কাফিরদের বিরুদ্ধে লরাই করলেন,
দাঁত মোবারক শহীদ হলো, মাথায় হেল্মেট ঢুকে গেলো। তখনতো নবী (সা;) এভাবে কাফিরদের
মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তাতো করেননি। তায়েফের ঘটনা আমরা সবাই জানি। আল্লাহর
হুকুমে ফেরেস্তাগণ এসে পাহাড় দ্বারা কাফেরদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে চেয়েছিলেন তা
সত্বেও দয়ার নবী (সাঃ) ব্দ দোয়া পর্যন্ত দেননি বরং তাদের জন্য হেদায়েতের দোয়া
করেছিলেন। কিন্তু মরার পরে এ জাতীয় ক্ষমতায় বিশ্বাস, বদ দোয়া দিয়ে মেরে ফেলা,
গায়েবী আওয়াজ করে কথা বলা, এগুলো তো মাজার ভক্তরা বিশ্বাস করে থাকে। যা বিবেকেরও
পরিপন্থী। যার সাধারণ জ্ঞান আছে সেও কি এ জাতীয় বিশ্বাস করতে পারে?
রাসুলের (সাঃ) মৃত্যুর পর সাহাবারা কখনো তার
কবর থেকে বিপদের দিনে বা যুদ্ধের সময়ও কোনো ফায়সালা পেলো না (যদিও তারা রাসুলের
কবরে সাহায্য কোনো সময়ও চাননি) আর সাধারণ খাদেমরা গিয়ে বিপদের কথা বললেই রাসুলের
(সাঃ) গায়েবী আওয়াজ আসে। এই ধরণের আকিদাহ কেবলমাত্র সুফীবাদীদেরই হয়ে থাকে।
এমদাদউল্লাহ মক্কী, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীসহ উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ মোটামুটি সবাই
ছিলেন সুফীবাদী। তবে তাদেরও দোষ দেয়া যায়না। কারণ সুফীরা মিথ্যা বলেনা, মিথ্যা
অটোম্যাটিক তাদের মুখ থেকে বের হয়ে যায়। মাত্র একটা কথার উত্তর দিন, বিপদ থেকে
উদ্ধারকারী কে নবীজী (সাঃ) না আল্লাহ? অথচ সুরা ফাতিহাতে আমরা প্রত্যেক নামাজে পাঠ
করি, ‘ইয়াকা না’বুদু ওয়া ইয়াকা নাস’তাঈন’ অর্থঃ “আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি
এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি” (সুরা ফাতিহা, ৫)।
কিন্তু এখানে কবরবাসীর নিকট সাহায্য চাওয়া
হচ্ছে। অদৃশ্য বা গায়েবী কিছু চাইতে হলে সেটা একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইতে হয়।
হ্যাঁ, এমনি সাধারণ বিষয়ে আমরা জীবিত মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে পারি। কিন্তু
‘গায়েবী কিছুর’ সাহায্য একমাত্র আল্লাহর নিকটই চাইতে হবে। আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে
নবীজীকে (সাঃ) বিপদ থেকে রক্ষাকারী, গায়েবী সাহায্যকারী হিসেবে নির্ধারণ করা কি
শিরক? নাকি সওয়াব আছে? আল্লাহপাক বলেন,
وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ
فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يَمْسَسْكَ
بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো কষ্ট দেন, তবে
তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তোমার মঙ্গল করেন, তবে তিনি
সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান” (সুরা আন’আম, ১৭)।
আর এখানে তারা আল্লাহর কাছে নিরাশ হয়ে
নবীজীর (সাঃ) কবরে নালিশ জানান, সাহায্য প্রার্থনা করেন। প্রশ্ন হলো তারা আল্লাহর
কাছে নিরাশই বা হলেন কেন? এজন্যই আল্লাহপাক বলেছেন,
قَالَ وَمَن يَقْنَطُ مِن
رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ
“আল্লাহর করুণা থেকে বিভ্রান্ত (মূল পথ থেকে
বিচ্যুত) লোকেরা ব্যতীত কেউ নিরাশ হয় না” (সুরা হিজর, ৫৬)।
৭। “শায়েখ আহমেদ বলেন, ‘আমি তেরো মাস
পর্যন্ত ময়দানে, জঙ্গলে ঘুরিতে ফিরিতে থাকি। উহাতে আমার চামড়া পর্যন্ত খসিয়া যায়।
অবশেষে হুজুর (সাঃ) ও শায়খাইনের খেদমতে সালাম করিতে যাই। রাত্রিবেলায় স্বপ্নে
হুজুর (সাঃ) আমাকে বলেন, আহমদ তুমি আসিয়াছো? আমি বলিলাম, হুজুর আমি আসিয়াছি। আমি
বড়ো ক্ষুধার্ত, আমি হুজুরের মেহমান। হুজুর বলিলেন, দুই হাত খোলো। আমি দুই হাত
খুলিলে দেরহাম দিয়া দুই হাত ভরিয়া দিলেন। জাগ্রত হইয়া দেখি আমার হাত দেরহাম দিয়া
ভর্তি। আমি উহা দ্বারা কিছু খাইয়া আবার জঙ্গলে ফিরিয়া আসিলাম।” (ফাজায়েলে হজ্জ,
২৬২ পৃষ্ঠা / কোনো সংস্করণে ১৬২-১৬৩ পৃষ্ঠা)
হায়রে গাঁজাখুরী গল্প! সম্মানীয় পাঠক,
উপরোল্লিখিত ঘটনা কি এ শিক্ষা দেয় সব জায়গা থেকে ফিরিয়া গেলেও অলী আউলিয়াগণের কবর
থেকে ফেরার সুযোগ নাই। শায়খ আহমদ কাজ কাম না করে জঙ্গলে জঙ্গলে মোরাকাবা করে ঘুরে
বেড়াইতেছে। পরে নবীর (সাঃ)-এর কবরে গিয়ে দেরহাম নিয়ে আসছে। তাহলে কি নিচের কথাগুলো
সঠিক?
‘কেউ ফিরেনা খালি হাতে, খাজা বাবার দরবার
হতে,
আল্লাহর ধন রসুলকে দিয়ে, আল্লাহ গেছেন খালি
হয়ে।’ (নাউযুবিল্লাহ)
রাসুল (সাঃ) জীবিত থাকাকালিন নিজে না খেয়ে
থাকলেও কোনো খাবার বা অর্থকরি সৃষ্টি করে খাওয়ার ক্ষমতা ছিলো না। কেননা তার রিযিক
তৈরি করার কোনো ক্ষমতাই নেই এবং সেটি তিনি ভালো করেই জানেন যে রিযিকের মালিক
একমাত্র আল্লাহ। আর তিনি ইন্তেকালের পরেও শায়েখ আহমেদ সাহেবকে দেরহাম দেন, তবুও
সেটি স্বপ্নে এইরকম ধারণা করা কি শিরকী নয়? এগুলো রাসুলের (সাঃ) নামে মিথ্যাচার
ছাড়া কিছুই নয়।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
বলেন, “আল্লাহতায়ালা গর্ভাশয়ে একজন ফেরেস্তা নিযুক্ত করে রেখেছেন, পর্যায়ক্রমে সে
বলতে থাকে, হে প্রভূ জমাট রক্ত, হে প্রভূ মাংস পিন্ড। যখন আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করার
ইচ্ছা করেন, ফেরেস্তা তখন বলে, হে প্রভূ পুংলিঙ্গ না স্ত্রীলিঙ্গ? ভাগ্যবান বা
হতভাগা? রিযিক কতটুকু? উত্তর অনুযায়ী পূর্ণ বিবরণ মায়ের পেটেই লিপিবদ্ধ করে দেয়া
হয়” (বুখারী, ৬১০৬; মুসলিম, ৪৭৮৫)।
আল্লাহ ছাড়া কেউ রিযিকের মালিক নন। এমনকি নবী
রাসুলরাও নন। আল্লাহপাক বলেন,
أَمَّنْ هَٰذَا الَّذِي
يَرْزُقُكُمْ إِنْ أَمْسَكَ رِزْقَهُ ۚ
بَل لَّجُّوا فِي عُتُوٍّ وَنُفُورٍ
“তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে,
যে তোমাদেরকে রিযিক দেবে? বরং তারা অবাধ্যতা ও বিমুখতায় ডুবে রয়েছে” (সুরা আল
মুলক, ২১)।
আল্লাহপাক আরো বলেন,
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ
يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
“তারা কি দেখেনা যে, আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা
রিযিক বর্ধিত করেন এবং হ্রাস করেন। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে
নিদর্শনাবলী রয়েছে” (সুরা রূম, ৩৭)।
রাসুলও (সাঃ) কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করার
ক্ষমতা নেই। আল্লাহপাক বলেন,
قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ
ضَرًّا وَلَا رَشَدًا
“(হে রাসুল) বলুন! আমি তোমাদের কল্যাণ ও
অকল্যাণ করার মালিক নই” (সুরা জ্বীন, ২১)।
নবীয়ে করীম (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার
প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেনো তার অবস্থান জাহান্নামে করে নেয়” (বুখারী, ১০৭)।
রাসুল (সাঃ) আরো বলেন, “নেতা, উপনেতা বা
দাম্ভিক ধোঁকাবাজ লোক ছাড়া আর কেউ কেচ্ছাকাহিনী বর্ণনা করেনা” (আবু দাঊদ, ৩৬২৪)।
‘ফাজায়েলে আমল’ বইটিতে অবশ্য কিছু বিশুদ্ধ
হাদিসও রয়েছে যার জন্য সাধারণ মানুষ বইটিকে সঠিক মনে করে। আর সাধারণ মানুষগুলোরই
বা কি দোষ, কেননা মূল দোষ হলো তো বইটির লেখকের। এমনকি যে সমস্ত বুজুর্গদের কথা
নিয়ে কেচ্ছাকাহিনী লেখা হয়েছে তাদেরও দোষ নেই। তাদের অনেকের নামে যেমন মিথ্যাচার
করা হয়েছে তেমনি স্বয়ং আল্লাহ ও তার রাসুলের নামেও মিথ্যাচার করা হয়েছে। তাছাড়া
সাধারণ মানুষের তো ক্ষমতা নেই যে, তারা দুর্বল ও জাল হাদিস বাছাই করবে বা অনেক বই
ঘাটাঘাটি করে ভূল ত্রুটি ধরবে। যাইহোক, আরও এরকম জাল যঈফ হাদিস বা কেছাকাহিনী আছে
যেগুলোর উপর আমল করা কারোই উচিৎ নয়। তা নাহলে সব আমলই নষ্ট হয়ে যাবে। ইমাম মুসলিম
(রঃ)-এর ভাষায়, “যারা যঈফ ও জাল হাদিস জেনেশুনে (সতর্কীকরণ ছাড়াই) বলে বেড়ান তারা
আলেম উপাধি পাবার চেয়ে জাহেল উপাধি পাবার অধিক হক্বদার এবং তারা সাধারণ মুসলিম
সমাজকে ধোঁকাদানকারী বলে গণ্য হবে।” (সহিহ মুসলিম শরীফের ভূমিকা দ্রষ্টব্য)।
৮। “আবু আলী রোদবারি (রঃ) বলেন, ঈদের দিন
একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিলো যে এখানে কি কোনো পরিষ্কার জায়গা আছে যেখানে একজন
ফকির মরিতে পারে? আমি ইহা বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম, ভিতরে এখানে এসে মরো। সে
ভিতরে আসিয়া ওজু করিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়িলো ও মারা গেলো। আমি তাহার কাফন দাফনের
ব্যবস্থা করার পরে দেখিবার জন্য কাফন হটাইয়া দেখিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিলো। আমি
তাকে বলিলাম, মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিলো, আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই
জীবিত থাকেন। আমি তোমায় কাল কিয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে সাহায্য করিবো।” (ফাজায়েলে
সাদাকাত, ২য় খন্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা)
চিন্তা করুন! মারা যাওয়ার আগে ফকির জানতেন
সে কোথায় মারা যাবে এবং মৃত ব্যক্তির সাথে কথা বললো। এখন দেখা যাক আল্লাহপাক
কোর’আনে কি বলেছেন,
وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا
تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي
نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ
عَلِيمٌ خَبِيرٌ
“কেউ জানেনা আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে
এবং কেউ জানেনা কোন দেশে কোথায় সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে
সম্যক জ্ঞাত” (সুরা লুকমান, ৩৪)।
এই আয়াতের ব্যাখায় রাসুল (সা;) বলেন, “এগুলো
গায়েবের কথা এবং এগুলো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা” (সহিহ বুখারী)।
অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন,
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَىٰ
وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ
“আপনি আহ্বান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং
বধিরকেও না” (আন নামল, ৮০)।
আল্লাহপাক আরো বলেন,
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ
عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا
“তিনিই (আল্লাহ) গায়েবের অধিকারী, আর তিনি
তার গায়েবের খবর কারো কাছে প্রকাশ করেন না।” (সুরা জ্বীন, ২৬)।
মৃতদেরকে কিছু শোনানো যায়না এই মর্মে
আল্লাহপাক বলেন,
وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَاءُ
وَلَا الْأَمْوَاتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ
يُسْمِعُ مَن يَشَاءُ ۖ وَمَا أَنتَ
بِمُسْمِعٍ مَّن فِي الْقُبُورِ
“আর সমান নয় জীবিত ও মৃত। আল্লাহ শ্রবণ
করান যাকে ইচ্ছা। আপনি মৃতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন” (আল ফাতির, ২২)।
তাহলে কিভাবে ঐ ব্যক্তি মৃত ফকিরকে প্রশ্ন
করলো, ফকির শুনলো এবং উত্তরও দিলো? অর্থাৎ গল্পে জীবিত ও মৃত উভয়েই কথা বলছে
অর্থাৎ উভয়েই সমান। আল কোর’আনে ও হাদিসে এক কথা আর উক্ত বর্ণনায় আরেক কথা, যা
সাংঘর্ষিক ও আল্লাহর কথার বিরোধী। সুতরাং এটি আজগুবী ও বানোয়াট গল্প ছাড়া কিছুই
নয়।
৯। বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লিখে দিলামঃ নামাজের
হেফাজত করিলে পাঁচটি পুরষ্কার লাভ করিবে। “একটি হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি এহতেমামের
সহিত ও গুরুত্ব সহকারে নামাজ আদায় করিবে আল্লাহ তায়ালা তাহাকে পাঁচ প্রকারে
সম্মানীত করিবে .............। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাজে শৈথিল্য প্রদর্শন করে,
আল্লাহপাক তাহাকে পনেরো প্রকার শাস্তি প্রদান করিবেন। .....................
তন্মধ্যে ১৫ নম্বরটি ভূলবশতঃ বাকিই রহিয়া গিয়াছে।” (ফাজায়েলে নামাজ ৩৬ পৃষ্ঠা
/বাংলা অনুবাদ ৪৫ পৃষ্ঠা)
সিয়াসিত্তাহ সহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে
যতোপ্রকার হাদিস গ্রন্থ আছে তার কোথাও কি এমন বর্ননা দেয়া আছে? এখানে আরো প্রশ্ন,
হাদিসটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা, ‘তন্মধ্যে ১৫ নম্বরটি ভূলবশতঃ বাকিই রহিয়া গিয়াছে।’
হাদিসটি কোন গ্রন্থের? পূর্ণাঙ্গ দলিলসহ জানাতে পারবেন কি?
আল্লাহপাক কোর’আনে উল্লেখ করেছেন,
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى
الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ وُجُوهُهُم مُّسْوَدَّةٌ ۚ
أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِينَ
“যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে,
কিয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কালো দেখবেন। অহংকারীদের আবাসস্থল জাহান্নামে নয় কি?”
(আয যুমার, ৬০)।
১০। সালাতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে জনাব
শায়খুল হাদিস সাহেব তার ফাজায়েলে আমল বইতে লিখেছেন, “উম্মে কুলসুমের স্বামী আব্দুর
রহমান অসুস্থ ছিলেন। একবার তিনি এমন অচেতন অবস্থায় পতিত হলেন যে, সকলেই তাকে মৃত
বলে সাব্যস্ত করলো। উম্মে কুলসুম তাড়াতাড়ি নামাজে দাঁড়ালেন, নামাজ শেষ করা মাত্রই
আব্দুর রহমান জ্ঞান লাভ করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার অবস্থা কি মৃত্যুর অনুরূপ
হয়েছিলো? লোকজন বলিলো, জী হ্যাঁ। তখন তিনি বলিলেন, আমি দেখলাম দু’জন ফেরেস্তা এসে
বললো, চলো আল্লাহর দরবারে তোমার ফয়সালা হবে। এই বলে তারা আমাকে নিয়ে যেতে উদ্যত
হলো। ইত্যবসরে তৃতীয় এক ফেরেস্তা এসে তাদেরকে বাঁধা প্রদান করে বললো, তোমরা চলে
যাও ইনি এমন এক ব্যক্তি যিনি মাতৃগর্ভেই সৌভাগ্যবান বলে সাব্যস্ত হয়েছেন। তার
সন্তান সন্ততিগণ আরও কিছুদিন তার কাছ থেকে অনুগ্রহ লাভের সুযোগ পাবে। তারপর তিনি
আরো একমাস জিবিত ছিলেন।” (ফাজায়েলে নামাজ, ৫৫ পৃষ্ঠা/ বাংলা অনুবাদ ১৭ পৃষ্ঠা)
শায়েখ উক্ত ঘটনার মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন,
মানুষরাই শুধু ভূল করেনা বরং ফেরেস্তা এবং স্বয়ং আল্লাহতায়ালাও ভূলের উর্ধে নন
(নাউযুবিল্লাহ)। নাহলে শায়খের দ্বারা এমন বর্ণনা কিভাবে লেখা সম্ভব হলো যে, দু’জন
ফেরেস্তা ঐ ব্যক্তির জান কবজ করার জন্য যখন উদ্যত হলেন তখন অপর ফেরেস্তা এসে বাঁধা
প্রদান করে তাকে মৃত্যু থেকে এক মাসের জন্য অব্যাহতি দিতে পারলেন। এ থেকে কি
প্রমাণিত হয়না যে, প্রথম দু’জন
ফেরেস্তা ভূল করে এসেছিলেন। তাহলে ব্যাপারটি কি আল্লাহতায়ালার অগোচরেই ঘটেছিলো?
নাকি আল্লাহতায়ালা প্রথমে ভূল করে পাঠিয়ে পরে অন্য ফেরেস্তা দিয়ে সংশোধন করে
নিয়েছেন? (নাউযুবিল্লাহ)। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো জান কবজ করার জন্য নিযুক্ত
ফেরেস্তা আজরাঈল (আঃ) সেসময় কোথায় ছিলেন? এটা কি খৃষ্টানী আকিদাহর বীজবপন নয়?
সুপ্রিয় পাঠকগণ, এ ব্যাপারে আপনাদের যথার্থ
মন্তব্য দিয়ে সত্যাম্বেষী মানুষকে সঠিক পথ দেখাবেন আশা করি।
১১। ‘ফাজায়েলে আমল’-এর ফাজায়েলে যিকিরে
বেশিরভাগ জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর যিকির করিতে থাকে তবে
যিকিরকারীই উত্তম। হাদিসে যিকিরকারীদের জন্য সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে সত্য, কিন্তু এরা
আত বেশি জিকির নির্ভর কেন? অন্য কাজের প্রতিও উৎসাহ থাকা দরকার কিন্তু সেটা
হচ্ছেনা কেন? এ থেকে কি প্রমাণিত হয়নায এরা মানুষকে জিকির নির্ভর করার দিকে নিয়ে
যাচ্ছে। যিকির করার পাশাপাশি ইসলামের অন্য ইবাদতও করা দরকার। সাধারণ মুসলিমদের আল
কোর’আনের মাতৃভাষায় অর্থ, তাফসীর, সহিহ হাদিস, শিরক, বিদ’আত ইত্যাদি শেখার ও আমল
করার জন্য উৎসাহ দিয়েছে কোনোদিন? বরং তাদের কিতাবে অসংখ্য শিরক, বিদ’আত কর্মকান্ডে
ভরপুর।
১২। তাবলীগীরা মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার পর
অর্থাৎ সালাম ফেরানোর পর বিভিন্ন ধরণের কার্যকলাপ করে থাকে। ইবাদতের গুরুত্ব
অনুসারে ঐগুলো কত নম্বরে পড়ে? যেমন ফরজ, ওয়াজীব, সুন্নাত, নফল ইত্যাদি। কোনটার
গুরুত্ব বেশি? আরো সহজভাবে বলি, নামাজের আগে বা পরে এমনকি মুসল্লীদের সুন্নাত
নামাজ চলাকালীন যারা তাবলীগ জামা’আত করেন তারা উচ্চস্বরে কিতাবি তালিম আছে, ঈমান
আমল সম্বন্ধে আলোচনা হবে বা এই জাতীয় কিছু বলে থাকেম যা নামাজরত ব্যক্তিটির বা পরে
আসা নামাজী ব্যক্তির বিঘ্ন গটে। কারো নামাজের ক্ষতি সাধন করে বা কারো নামাজ বিনষ্ট
করে অন্য কোনো আমল করা কি খুবই গুরুত্বপূর্ন? এসব পরে করলে কি অসুবিধা হয়?
একদিন এক মসজিদে দেখলাম জুম্মার ফরজ নামাজের
আগে অনেক মুসল্লীভাই সুন্নাত নামাজ আদায় করছে আর এক আমীরসাহেব দ্বীনের কিছু কথা
রাখার পর বললেন, ‘ভাই কারা কারা চিল্লাহর জন্য নাম লেখাবেন ভাই? ছয় চাকার গাড়িতে
চড়ে কে কে জান্নাতে যেতে চান ভাই? জান্নাতে যাওয়ার টিকিট কাটুন ভাই। যাদের
জান্নাতের টিকিট দরকার নাম লেখাতে পারেন ভাই।’ চিন্তা করুন! একজন আমীরের মুখে এরকম
কথা সেটা ভাবা যায়? জান্নাত কি মামুবাড়ির কলা যে আবদার করলেই পাওয়া যাবে? টিকিট
কাটলেও উনি কি জান্নাত দিতে পারবেন? এটা কি আল্লাহর ক্ষমতার সমতুল্য গণ্য হয়না?
এটা কি শিরক নয়? সেদিন ওনার মুখ থেকে কথাটা শোনার পর আমি ভেবেছিলাম, শিরক কি কি
কারণে হয় সেটা মনে হয় তিনি জানেনই না বরং শিরক কাকে বলে সেটাও মনে হয় জানেন না। আর
ওনাদের যারা শিক্ষা দেয় (তাবলীগের মুরুব্বীরা) তারা কি এই শিক্ষা দেয় যে, লোকদেরকে
দ্বীনের দাওয়াত দেবেন আর অন্যদিকে শিরক করবেন। নাকি তারাও শিরক, বিদ’আত জানেন না।
এখানে তো স্পষ্ট, অন্যকে ইসলামের দিকে ডেকে নিয়ে আসা হচ্ছে আর নিজে ইসলাম থেকে বেড়
হয়ে যাচ্ছে বা বড় শিরক করছে। অথচ টেরও পাচ্ছে না।
আসলে মূল কথা হলো, তাবলীগী জামাতে প্রধান বই
হিসেবে ‘ফাজায়েলে আমল’ রাখার কারণে এসব হচ্ছে। এসব কিতাব বর্জন করে সহিহ হাদিস বা অন্য
কোনো ভালো কিতাব স্থান পেলে এমনটি হয়তো হতো না।