Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ফাজায়েল আমলে অবান্তর কেচ্ছাকাহিনী



হজরত আলী (রাঃ) বলেছেন, “ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব তার জিহ্ববাতে”। অর্থাৎ তার বিশ্বাসযোগ্যতা তার কথায়। তেমনি একটি বইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা তার তথ্য ও বক্তব্যের বিবরণীতেতাই বক্তাকে যেমন তার কথায় সত্যবাদী হতে হয় তেমনি লেখককে সত্যবাদী হতে হয় তার লেখনীতে। তাই আজগুবি তথ্য দিয়ে একটি বইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো যায়না। এদিক দিয়ে ‘ফাজায়েলে আমল’-এর কিছু বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে বিচার করা যাক।

উক্ত ফাজায়েলে আমল বইতে আছেঃ
১। “শেখ আব্দুল ওয়াহেদ (রঃ) একজন বিখ্যাত সুফী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘একদা রাত্রি বেলায় নিদ্রাবশতঃ আমার রাত্রিকালীন তাছবীহ ও অজিফা পড়তে পারলাম না। স্বপ্নযোগে আমি সবুজ রং-এর রেশমী পোষাক পরিহিতা এক পরমা সুন্দরী বালিকাকে দেখলাম। আপাদমস্তক তার তাসবীহ পাঠে রত ছিলো। সে আমাকে বলিলো আমাকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করো, আমি তোমাকে লাভ করবার চেষ্টায় আছি। অতঃপর সে কয়েকটি হৃদয়গ্রাহী কবিতা পাঠ করলো। তারপর তিনি নিদ্রা হতে উঠে কসম করলেন যে, জীবনে তিনি আর কখনো ঘুমাবেন না। কথিত আছে, চল্লিশ বৎসর যাবৎ তিনি এশার ওজু দ্বারা ফজরের নামাজ পড়েছেন।” (ফাজায়েলে আমল, ১০২ পৃষ্ঠা/ কোনো সংস্করণে ৮৯ পৃষ্ঠা)[এরকম আরো কয়েকটি বর্ণনা ওখানে দেওয়া আছে]

এমন উদ্ধৃতি থেকে কি প্রকাশ পেল? কোনো মুমিনের ইবাদতে এটি কি যথার্থ নিয়্যেত? মুসলমান নামাজ পড়ে, তাসবীহ পাঠ করে কি কোনো রমণীকে খুশী করার জন্য? বা তাকে পাওয়ার জন্য? প্রশ্ন হলো, কোনো মুসলমানের এমন আমল কি কখনো আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে? মুসলমানের নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ, জীবন মরণ সবকিছুর লক্ষ্য তো একমাত্র আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে। ঈমানদারের ইবাদত বন্দেগীর নিয়্যেত কখনোই বেহেশতের কোনো রমণী পাওয়ার জন্য নয়। সেটি লক্ষ্য হলে কি এটি ইবাদত বলে গণ্য হয়? উক্ত সুফী চল্লিশ বছর যাবত এশার ওজু দ্বারা ফজরের নামাজ পড়েছেন। সেটিও কি কোনো সুস্থ্য মানুষের আচরণ? সেটি কি বিশ্বাসযোগ্য? তবে তার কি কোনো বৈবাহিক জীবন ছিলো না? চল্লিশ বছর ধরে কোনো রাতেই কি এশা থেকে ফজর পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়ে পেশাব পায়খানার প্রয়োজন পড়েনি? আর এমন নফল ইবাদতে তিনি দ্বীনের কি মহান কাজটি করেছেন? এটি কার সুন্নাত? নবীজী (সাঃ) কি নিজে কখনো এমনটি করেছেন বা অন্যদের এরূপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন? আরো প্রশ্ন হলো, সারারাত ধরে নফল ইবাদাত করলে তিনি দিনেরবেলা কি করেছেন? দিবাভাগ তিনি নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন? চল্লিশ বছর এভাবে দিনে ঘুমালে তার রুজি রোজগারের কিভাবে ব্যবস্থা হয়েছে? পবিত্র কোর’আন ও হাদিসে আমরা এটাই পাই, রাত হলো বিশ্রামের আর দিন হলো কর্মের। নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) দিবাভাগে যেমন রোজগারে নেমেছেন তেমনি শত শত সৎকর্ম করেছেন, আমলও করেছেন। সারারাত জাগলে দিনে কি কখনো কোনো নেক আমলের ফুরসৎ পেয়েছিলেন?

২। “হজরত ওসমান (রাঃ) কোনো কোনো সময় বিতরের একটি রাকাতে পূরো কোর’আন শরীফ শেষ করিয়া ফেলিতেন।” (ফাজায়েলে আমল, ১৭৭ পৃষ্ঠা)

এটা অতিভক্তির একটি বর্ণনা। সহিহ হাদিসে তার বর্ণনা কোথায়? হজরত ওসমান (রাঃ) কখনোই এরকম করে কোর’আন পাঠ করবেন না। কেননা, তিনি রাসুলের (সাঃ) একান্ত অনুসারী ছিলেন। রাসুল (সা;) এভাবে কোনোদিন কোর’আন পাঠ করেননি বা করতে বলেননি। তাই তিনিও করার কথাই না।

৩। “বাকী বিন মোখাল্লেদ (রঃ) তাহাজ্জদ ও বিতরের তেরো রাকাত নামাজে কোর’আন শরীফ খতম করতেন।” (ফাজায়েলে আমল, ১০৭ পৃষ্ঠা/কোনো সংস্করণে ৯৬ পৃষ্ঠা)

৪। “জনৈক শায়েখ হানায়ী বলেন, “আমি একরাতে দুই খতম আরো দশপারা কোর’আন পড়েছি। যদি আরো ইচ্ছা করতাম তৃতীয় খতমও শেষ করতে পারতাম” মাঞ্ছুর বিন জাযান চাশতের নামাজে এক খতম এবং জোহর হইতে আছর পর্যন্ত অন্য এক খতম করিতেন। বলা হয়েছে, “এবনুল কাতেব (রঃ) দৈনিক আটবার কোর’আন খতম করতেন।” (ফাজায়েলে আমল, ১৭৭ পৃষ্ঠা)

এখানে ৩ ও ৪ নং কাহিনীর ক্ষেত্রে, এমন দাবী কি বিশ্বাসযোগ্য? কোনো সুস্থ্য মানুষ কি এমন কথা বিশ্বাস করতে পারে? আর যদি এরূপ অসম্ভব কর্মও সম্ভব হয় তবুও কি সেটি প্রশংসাযোগ্য? দৈনিক দুই খতম, আট খতম কোর’আন পাঠ করলে তিনি অন্য এবাদত কখন করেছেন? তাবলীগই বা কখন করেছেন? আর এটাই কি ইসলামের পথ?

৫। “ইমাম শাফেয়ী (রঃ)-এর অভ্যাস ছিলো, রমজান শরীফে নামাজের মধ্যে কোর’আন শরীফ এক খতম ও ত্রিশ রোজায় দিবা রাত্রিতে প্রতিদিন দুই খতম করিয়া মোট ৬১ টী খতম করিতেন।” (ফাজায়েলে আমল, ৯৭ পৃষ্ঠা)

সহিহ হাদিসে বা তার লেখা হাদিসগ্রন্থে তার বর্ণনা কোথায়? তার জীবনীতেও এসব পাওয়া যায়না। তিনি ছিলেন বিখ্যাত একজন হাদিস গবেষক এবং তখনকার যুগের একজন ইসলামের নেতা (ইমাম)। তিনি অন্য কাজকর্ম না করে কি কোর’আনই পাঠ করেছেন? খোদ উক্ত ‘ফাজায়েলে আমল’ বইয়েরই ১৭৭-১৭৮ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, “হুজুরপাক (সাঃ) বলেছেন, তিন দিনের কম সময়ে কোর’আন খতম করলে চিন্তা ফিকির করে পড়া যায়না।”

এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, ইমাম শাফেয়ী (রঃ) একজন ইসলামের বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ছিলেন। তিনি কি এটা জানতেন না? নবীজীর (সাঃ) কথার উপর উনি কখনোই এমন কাজ করবেন না। তাছাড়া এভাবে কোর’আন পড়া কোনো বিদ্বানের কাজ নয়।

৬। “বাহাজাতুন্নুফুছ গ্রন্থে বর্ণিত আছে, জনৈক বুজুর্গের সহিত এক ব্যক্তি সাক্ষাৎ করতে গেলো। বুজুর্গ নামাজ শেষ করে নফলে লিপ্ত হলেন এবং আছর পর্যন্ত নফল পড়তে থাকেন। তারপর আছর পড়ে আবার যিকিরে মশগুল হলেন। আগন্তুক বসে এন্তেজার করতে থাকে। তিনি মাগরিব পর্যন্ত যিকিরে মশগুল হন। তারপর এশা পড়িয়া ফজর পর্যন্ত যিকিরে কাটান। ফজরের নামাজান্তে যিকির ও অজিফা আদায় করিতে করিতে তাহার চোখে একটু তন্দ্রা আসিলো। ক্ষণেক পরেই চক্ষু মলতে মলতে উঠে বসলেন এবং তাওবা এস্তেগফার করিতে করিতে এ দোয়া পড়লেনঃ (অর্থ) “আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি ঐ চক্ষু হতে যা ঘুমিয়ে তৃপ্ত হয়না।” (ফাজায়েলে আমল, ১২৪ পৃষ্ঠা/ কোনো সংস্করণে ১২১-১২২ পৃষ্ঠা)

এখানে জনৈক বুজুর্গ ব্যক্তিটা কে? কোন হাদিসে এরকম ইবাদত করার কথা বলা আছে? আগন্তুক এসে তার জন্য সারারাত অপেক্ষা করলেও তিনি ইবাদত ছাড়েননি। মেহমানের সাথে এরূপ আচরণ করার জন্য কি আল্লাহপাক খুশি হন? রাসুল (সাঃ) কি এমন করতেন? তিনি যদি দিনরাত এমনভাবে ইবাদত করেন তাহলে তাবলীগ কখন করতেন? অন্য কাজকর্মও বা কখন করতেন? আপনারাই চিন্তা করুন!

৭। “হজরত ওয়ায়েছ করনী (রঃ) বিখ্যাত বুজুর্গ ও তাবেয়ী ছিলেন। কোনো কোনো সময় সারা রাত্রি রুকুর হালাতে আবার কোনো কোনো সময় সিজদার অবস্থায় কাটাইয়া দিতেন।” (ফাজায়েলে আমল, ১২২ পৃষ্ঠা/ কোনো সংস্করণে ১১৮ পৃষ্ঠা)

কথা হলো, সারারাত রুকু বা সিজদার হালতে থাকা কি আদৌ সম্ভব? আর সম্ভব হলেও রাসুল (সাঃ) কি আমাদের এভাবে ইবাদাওত করার কথা বলেছেন? অথচ আল্লাহপাক কোর’আনে বলেন, আল্লাহপাক কারো সঙ্গে জুলুম করেন না ইবাদত করার জন্য।

৮। “শেখ আব্দুল ওয়াহেদ (রঃ) একজন বিখ্যাত সুফী ছিলেন। কথিত আছে তিনি চল্লিশ বৎসর যাবত এশার ওজু দ্বারা ফজরের নামাজ পড়েছেন।” (ফাজায়েলে আমল, ১০২ পৃষ্ঠা)

৯। “ছায়ীদ বিন মাছাইয়েব (রঃ) পঞ্চাশ বৎসর যাবত এবং আবুল মোতামের (রঃ) চল্লিশ বৎসর যাবত একই ওজু দ্বারা এশা ও ফজরের নামাজ পড়েছেন।” (ফাজায়েলে আমল, ১০৭ পৃষ্ঠা/ কোনো সংস্করণে ৯৭ পৃষ্ঠা)

এখানে ৮ ও ৯ নং কাহিনীর ব্যক্তিরা যদি হক্কানী হন, নিশচয়ই তারা খুশু খুজুর প্রতিও ধ্যান দিতেন। ওজু করা পবিত্র কাজ। তাই আলেম ওলামারা মাঝে মাঝেই ওজু করে থাকেন। আর তিনি চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর ধরে এভাবে করে আসছেন। তাদের একদিনও কি পেশাব পায়খানার প্রয়োজন পড়েনি? তবে তাদের কি কোনো বৈবাহিক জীবন ছিলো না? আর কিছুক্ষণের জন্য ঘুম আসলেও তো ওজু নষ্ট হবার কথা, সেটাও কি হয়নি?

তাবলীগী জামা’আতের ‘ফাজায়েলে আমল” বইতে অবান্তর ও উদ্ভট বক্তব্যের চর্চা যে কতটা প্রকট তার আরো কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।

১০। “এক সৈয়দ সাহেব সম্বন্ধে বর্ণিত আছে, বারো দিন পর্যন্ত একই ওজুতে সমস্ত নামাজ আদায় করিয়াছেন এবং ক্রমাগত পনেরো বৎসর যাবত শোবার সুযোগ হয় নাই।” (ফাজায়েলে আমল, ১০৫ পৃষ্ঠা / কোনো সংস্করণে ৯৪ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন হলো, বারো দিন একই ওজুতে নামাজ!!! গাঁজাতে দম দিলেও মানুষ পুরোপুরি জ্ঞানশুন্য হয়না। কিন্তু এখানে তো পুরোপুরি জ্ঞানশুন্য! ধর্মশুন্যতাও কি কম? বারো দিন ধরে ঐ ব্যক্তির একবারো পায়খানা প্রশ্রাবের প্রয়োজন পরেনি? আবার পনেরো বৎসর যাবত শুতে যায়নি। হায়রে বুজুর্গ তুমি তো দেখি সাহাবীদের থেকেও উপরে উঠতে চাও। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো, বছরের পর বছর ধরে মসজিদের মেঝেতে বহু মানুষের সামনে ‘ফাজায়েলে আমল’ বইটি পাঠ করা হয়। এত বড়ো অবান্তর কথা কি কারো নজরে পড়েনি? এখানে অন্ধত্ব চোখের নয় বরং অন্ধত্ব মনের। তাই বারবার পড়ার পরেও তাদের অন্ধ মন তা দেখতে পায়নি।

১১। “হজরত জয়নুল আবেদীন (রঃ) দৈনিক এক হাজার রাকাত নামাজ পড়তেন। বাড়িতে বা ছফরে কোনো অবস্থায় তাহার ব্যতিক্রম হইতো না।” (ফাজায়েলে আমল, ১২১ পৃষ্ঠা / কোনো সংস্করণে ১১৭ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন হলো, প্রতি রাকাতে কমপক্ষে এক মিনিট সময় লাগলে এক হাজার রাকাত নামাজ পড়তে হলে ১৬ ঘন্টার বেশি সময় লাগার কথা। তার মধ্যে ওজু করা, একটু বিশ্রাম নেয়া ইত্যাদি তো আছেই। তিনি ফরজ ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়লেও তো আরও কিছু সময় লাগবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ ঘন্টা নামাজে কাটালে বাকি কাজকর্ম কখন করেছেন?

উদ্ভট কথাবার্তার আরো কয়েকটি ফিরিস্তি বর্ণিত আছে উক্ত ‘ফাজায়েলে আমলে’।
১২। “আমের বিন আব্দুল্লাহ বলেন, নামাজ পড়াকালে কথাবার্তা তো দূরের কথা ঢোলের শব্দও শুনিতে পাইনা। কেহ জিজ্ঞাসা করিলো, নামাজে আপনি কোনোকিছুই শুনিতে পাননা? শুধু একটা জিনিসের টের পাই তাহা এই যে, আমাকে একদিন আল্লাহর দরবারে দাড়াইতে হইবে। বেহেশত ও দোযখ এই দুইটির একটিতে আমাকে যাইতে হইবে। লোকটি বলিলো, প্রশ্ন হইলো আমাদের কোনো কথাবার্তা শুনিতে পান কিনা? তিনি উত্তর করিলেন, নামাজে তোমাদের কথাবার্তা শুনা অপেক্ষা বর্শা বিদ্ধ হওয়া আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়........। (ফাজায়েলে আমল, ১২১ পৃষ্ঠা)

১৩। “জনৈক বুজুর্গের পায়ে বিষাক্ত ফোঁড়া হইয়াছিলো। চিকিৎসকগণ পরামর্শ দিলো, পা কাটিয়া না ফেলিলে তাহাত জীবননাশের আশংকা রহিয়াছে। তাহার আম্মা বলিলেন, আপনারা অপেক্ষা করুন নামাজে দাড়াইলে তাহার পা কাটা আছান হইবে। ঐরূপ করা হইলো অথচ সে টেরও পাইলো না।” (ফাজায়েলে আমল, ৯৩ পৃষ্ঠা)

এখানে ১২ ও ১৩ নং কাহিনীর কথা চিন্তা করেন। তিনি নামাজের সময় ঢোলের শব্দও শুনতে পান না আবার কারও পা কাটিয়া ফেলিলেও টের পান না। যেখানে সহিহ হাদিসে বর্ণনা আছে রাসুল (সাঃ) যখন নামাজে দাড়াতেন তখন নামাজের খুশু খুজু ঠিক রেখে আশপাশের পরিস্থিতিও লক্ষ্য করতেন। যেমন এক হাদিসে আছে, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একদিন ফজরের সালাতে কোর’আনের সর্বাপেক্ষা সংক্ষিপ্ত দু’টি সুরা পাঠ করলেন। নামাজ শেষে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এরূপ সংক্ষেপ করলেন? তিনি উত্তরে বললেন, আমি একটি শিশুর কান্না শুনে অনুমান করলাম যে, তার মা হয়তঃ আমার সাথে জামাতে নামাজ আদায় করছে। এজন্য শিশুটির মাকে অবসর দেওয়ার জন্য এরকম সংক্ষিপ্ত করলাম।” (মুসনাদে আহমাদ)

নবীজী (সাঃ) যেখানে নামাজের সময় শিশুর কান্না শুনতে পারেন। সেখানে বুজুর্গদের এসব বানোয়াট কাহিনীর কথা আর কি বলি। উপরোক্ত হাদিসটিই আশাকরি যথেষ্ট।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দ্বীনের যে সিরাতুল মুস্তাকিম দেখিয়ে গেছেন এবং যেপথে তিনি নিজেও চলেছেন, সেপথের কোথাও কি এরকম বর্ণনা আছে? সুফিগণ ধর্মকর্মের নামে এরূপ পথ নিজেরা আবিষ্কার করে নিয়েছেন। আর তাবলীগী জামা’আত সেগুলোকেই তাদের সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ‘ফাজায়েলে আমল’ যেন সে সিলেবাসেরই কিতাব। নবীজী (সাঃ) হাদিস হলো, ‘দ্বীনের ব্যাপারে প্রতিটি আবিষ্কারই হলো বিদ’আত এবং বিদ’আতের পথ হলো মূলতঃ জাহান্নামের পথ।’

নেক আমল দ্বারা শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে এর প্রদিদান করতে হয়। তা দ্বারা দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্য করতে হয়না। যে ব্যক্তি নেক আমলের মাধ্যমে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিলের নিয়্যেত করবে, তার আমল বাতিল হয়ে যাবে, সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহতায়ালা কোর’আনে বলেন, “যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন এবং তার চাকচিক্যই কামনা করে, আমি দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দিবো এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হবেনা। এরাই হলো সেসব লোক আখিরাতে যাদের জন্যে আগুন ছাড়া কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু (ইবাদত) করেছিলো সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিলো, তা সবই বিনষ্ট হলো” (সুরা হুদ, ১৫-১৬)।

Facebook Comment