Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

শিরক ও বর্তমান সমাজচিত্র



শিরক ও বর্তমান সমাজচিত্রের কথা বলতে গেলে গা শিউরে ঊঠে। কেননা এর মতো এক অমার্জনীয় অপরাধ মানুষ নির্বিঘ্নে করে চলেছে। এটা যেন তেমন কোন অন্যায় নয়, ছোটোখাটো বিষয়, করা না করা সমান। অথচ এর বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। যা খুবই ভয়াবহ। আমরা অনেকেই হয়তো মনে করি, দেবদেবীর পূজা করা বা আল্লাহর সাথে তাদের শরীক না করাই শুধু শিরক। কিন্তু অন্য কিছুও যে শিরক হতে পারে তা জানার চেষ্টাও করি না। বিশেষ করে, আমাদের মুসলিমের মধ্যেই অনেক ভাই আছে যারা অমুসলিমদের বিভিন্ন পূজার সময় চাঁদা দিয়ে থাকেআবার অনেক ভাই আছে যারা অমুসলিমদের পক্ষে হয়ে পূজার জন্য চাঁদা আদায়ও করে থাকে। এরা এটাকে সমাজসেবা মনে করে থাকে। এরা কোর’আন হাদিস থেকে কোনো আদেশ নিষেধ গ্রহণ করে না। ফলে তারা মারাত্মক ধরণের শিরকের সঙ্গে জুড়ে যায়। আমাদের জীবন পরিচালনার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের উপর পবিত্র কোর’আন নাজিল করেছেন। তা হাতে কলমে বাস্তবতার নিরিখে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ)-কে পাঠিয়েছেন। বিধায় সকল সমস্যার সমাধান পবিত্র কোর’আন ও সহিহ হাদিস থেকেই আমাদেরকে নিতে হবে। হজরত মোহাম্মদ (সাঃ)-কে যদি আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের মডেল মনে করি আবার রাষ্ট্রীয় জীবনে লক, হিউম, লিংকন, জেফারসন, লেলিন, মাওসেতুং বা কার্লমার্কসের দেয়া বিধান ও নীতি অধিকতর প্রাসঙ্গিক এবং যুগোপযোগী মনে করি, তবে আল কোর’আন ও রাসুলের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা থাকলো না। আমাদের জীবন সমস্যা সমাধানের জন্য আল কোর’আন হতে কিছু কিছু বিধান গ্রহণ করা এবং রাষ্ট্র ও অর্থনীতি পরিচালনার জন্য অন্য ব্যক্তি ও আদর্শ হতে কিছু কিছু বিধানকে অধিকতর যুগোপযোগী মনে করা শিরক। কিছুটা আল্লাহর বিধান আর কিছুটা মানুষের দেয়া বিধান এটা যে শিরক এতে কোনো সন্দেহ নেই। অথচ বর্তমান সমাজে ঘটছে তাইআল্লাহর বিধান ও মানুষের তৈরি করা বিধানের সংমিশ্রণ জগাখিচুড়ী করে চলছে সমাজ ব্যবস্থা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আইন ও বিধান্ধাতা মনে করা শিরককারণ সৃষ্টির যাবতীয় আইন ও বিধান প্রদানের ক্ষমতা নিরংকুশভাবে আল্লাহর। আল্লাহপাক কোর’আনে বলেন,
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ 

“সাবধান! সৃষ্টি তার এবং হুকুমও তার” (আল আরাফ, ৫৪)।                                                                                                                                                                             কাজেই কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে আইন ও বিধানদাতা মনে করা এবং আইনের উৎস বলে বিশ্বাস করা শিরকআল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সৃষ্টিকর্তা, পালনক্ররতা, রিজিকদাতা, আইনদাতা, সন্তানদাতা, রোগ ও আরোগ্যদাতা হিসেবে বিশ্বাস করাও শিরক। আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে নির্দিষ্ট একস্থানে সংগরিষ্ঠের দোহাই দিয়ে যে অসংখ্য শরীয়তবিরোধী আইন তৈরি করে সমাজে প্রয়োগ করছি, এটা কোন পর্যায়ে যাবে তা বুঝতে আশা করি পাঠক সমাজের বাকি নেই। যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই ভালো জানেন তাদের জন্য কল্যাণকর বিধানের কথা। মানুষ মানুষের জন্য স্বচ্ছ কল্যাণের আইন রচনা করতে পারে না। আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করা শিরকের অন্তর্ভূক্ত। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
“তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তারই ইবাদত করো” (ফুসসিলাত, ৩৭)

মহানবী (সাঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তি বানিও না, যেখানে উপাসনা করা হয়” (মুয়াত্তা; মিশকাত, ৭৫০)। যে জাতি তাদের নবী রাসুলদের কবরকে সিজদার স্থানে পরিওণত করেছে, তাদের উপর আল্লাহর গজব তীব্র হয়ে উঠছে।

তাই যদি কেউ কোনো নবী, ফেরেস্তা, ওলী, জ্বীন পরীকে, কবরকে, পশু প্রাণিকে, নিশাণাকে, কোন পবিত্র বস্তুকে, পীরকে সিজদা করে, রুকু করে, তার জন্য সাওম রাখে, হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে নৈকট্য প্রার্থনা করে, তার নামে ছরি দাড় করায়, ফেরার সময় উল্টোভাবে ফিরে, কবরকে চুম্বন করে, কবরে বাতি জ্বালায়, কবর জিয়ারতের জন্য দূরান্ত থেকে আসে, কবরে আলোর ব্যবস্থা করে, কবরে গিলাফ দ্বারা আবৃত করে, কবরের উপর চাদর টাঙ্গিয়ে দেয়, সামিয়ানা টাঙ্গায়, কবরের চৌকাঠে চুম্বন করে, কবরে সমাধিস্থ বুজুর্গ ব্যক্তির নিকটে হাত তুলে কিছু প্রার্থনা করে, কবরের খেদমত করে, কবরের পার্শ্ববর্তী গাছপালাকে সম্মান করে, কবরকে তাওয়াফ করে, কবরকে হাত বুলায়, লালশালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে থাকে, কবরের মাটি গায়ে মাখে, তার সামনে মিনতী করে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও অভাবের কথা তুলে ধরে, সুস্থতা কামনা করে ও সন্তান চায়। মোটকথা এ ধরণের কাজ করলে নিঃসন্দেহে সে শিরক করলো। এসব শিরক হওয়া সত্বেও আমাদের সমাজে এর সবগুলোই ব্যাপকভাবে চালু রয়েছে।

“খলীফা ওমর (রাঃ)-এর সময় তাকে সংবাদ দেয়া হলো যে, কতিপয় মানুষ ঐ বৃক্ষের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে যে বৃক্ষের নিচে সাহাবীগণ নবী করীম (সাঃ)-এর হাতে বায়’আত করেছিলেন। অতঃপর তিনি [ওমর (রাঃ)] সাথে সাথে ঐ বৃক্ষকে কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন” (ফাতহুল বারী, ৭/৪৪৮)

কিন্তু বর্তমানে আমরা সংস্কৃতির নামে, আধুনিকতার নামে অহরহ শিরক করে চলেছি। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবস আসলে আমরা শহীদ মিনারে ও স্মৃতিসৌধে গিয়ে ফুলের মালা দেই, নীরবে এক মিনিট দু’ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকি, শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদেরকে শিরক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। অথচ সবচেয়ে বড় গুনাহ ও শিরক থেকে বেঁচে থাকার যথার্থ শিক্ষা দেয়াই উচিৎ ছিলো দেশের তরুণ প্রজন্মকে। আমাদের হিন্দু ভাইয়েরা মন্দিরে মূর্তিকে সামনে রেখে পূজা অর্চনা করে, সিজদা করে। আর অন্যদিকে মুসলিমরা পীর বুজুর্গদের মাটির নিচে দাফন করে কবর সামনে রেখে একই কায়দায় পূজা করে তথা সিজদা করে, মানত করে, দোয়া করে, সম্মান প্রদর্শন করে, পুষ্পস্তবক অর্পণ, নানা কায়দায় প্রার্থনা, নীরবতা পালনসহ কতকিছু যার শেষ নেই বললেই চলে। এসব কিছুর মধ্যে মূলতঃ মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বরং মূর্তিপূজা, কবর বা মাজার পূজা ও শহীদ মিনার পূজা একই সুত্রে গাঁথা। স্রেফ কিছু নিয়ম নীতির পার্থক্য মাত্র। এছাড়াও ভক্তিভাজন পীর বা নেতা নেত্রীর ছবিতে ফুলের মালা দেয়া, চিত্রের পাদদেশে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করা, নীরবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা, ভাস্কর্যের নামে শিক্ষাঙ্গণ ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে মূর্তি স্থাপন করা ও তাকে সম্মান দেখানো মূর্তিপূজার শামিল, যা শিরক। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানে না। তাই কেউ যদি মনে করে পীর সাহেব, হুজুরে কেওলা গায়েব জানেন তাহলে তা শিরক হবে। জ্যোতিষী বা গণকের নিকটে যাওয়া বা তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করা, তাকে হাত দেখানোও শিরক। আবার অনেকে রোগমুক্তি, সন্তানলাভ, মুশকিলে আসান, মামলা মোকদ্দমায় জয়লাভ, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা কিংবা নানাবিধ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দরগা মাজারে দান খয়রাত, গরু ছাগল, টাকা পয়সা, চাল, মিষ্টি, হাঁস মুরগী, শিরনিসহ বিভিন্ন প্রকার জিনিস দিয়ে থাকেন। এ সবগুলো শিরকের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কোনো পশুপাখি যবেহ করা শিরক। আবার আমরা আল্লাহ ব্যতীত অনেক কিছুর নামে শপথ বা কসম করি সেগুলোও শিরক। যেমন আমরা অনেক সময় মাটি, দানা, চোখ, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, সন্তানের মাথায় হাত রেখে, পেটের সন্তানের সহ আরো অনেক কিছুর শপথ করি, যা শিরকের পর্যায়ভুক্ত। যদি শপথ করতেই হয় তাহলে সরাসরি আল্লাহর নামে শপথ করতে হবে। সৃষ্টি তার স্রষ্টার নামে শপথ করবে, সৃষ্টির নামে নয়। আমরা অনেক সময় বালা মুসিবত দূর করার জন্য রিং, তাগা, কালো সূতা ও তাবীজ ব্যবহার করি যা শিরক। (তিরমিজী; মিশকাত, ৪৫৫৬)স্বামী স্ত্রীর, দুই বন্ধু বা বান্ধবী তথা দু’জন ব্যক্তির মাঝে সুসম্পর্ক গড়ার জন্য যাবতীয় তাবীজ বা ঝাড়ফুঁক জাতীয় যেসব কৌশল অবলম্বন করা হয় তার সবগুলোই শিরক। আমরা অনেকে প্রভাতে দোকান খোলার পর প্রথম খরিদ্দারকে বাকি দিতে চাইনা অমঙ্গলের আশঙ্কায়। এরূপ ধারণা করাও শিরক। অমুক দিন অমুক গাছ বা বাঁশ কাটা যাবে না, ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখলে এই ক্ষতি হয়, এজাতীয় বিশ্বাস শিরকের শামিল। আবার অনেক সময় সন্তানের নাম না বুঝে আব্দুন নবী তথা নবীর বান্দা, নুরুন্নবী তথা নবীর নূর, গোলাম রাসুল তথা রাসুলের গোলাম্বা এরূপ নাম রেখে থাকি এসবও শিরকের অন্তর্ভূক্ত। মোটকথা মাজারকেন্দ্রীক পীর ফকীর গণক, তাবীজ কবজ ইত্যাদি যেসকল কার্যক্রম রয়েছে তার সবই শিরক। আবার শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, মূর্তিসম্বলিত ভাস্কর্য, বিভিন্ন দিবস পালনকেন্দ্রীক যসব কার্য সম্পাদিত হয় এর অধিকাংশের সাথেই শিরক জড়িত। আজকে সারাবিশ্বে ‘দিবস’ পালনের যে প্রতিযোগীতা চলছে তার সাথে ইসলামি জীবন ব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। এভাবে শিরক ও শিরক সম্পর্কিত কার্যাবলী আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তা ভয়াবহ। এভাবে আমরা জ্ঞাতে অজ্ঞাতে প্রতিনিয়ত নির্দ্বিধায় শিরক করে নিজেদেরকে জাহান্নামের খোরাক বানাচ্ছি। তাই আমাদের সকলকে শিরক সম্পর্কে সর্বাধিক সচেতন হতে হবে।

Facebook Comment