প্রশ্ন হলো বর্তমান দেশের অবস্থা ও ইসলামের পরাজয় নিয়ে তাবলীগী জামা’আতের নেতাকর্মীদের কি কোনো দুঃখবোধ আছে? যে দস্যুদের হাতে আজ দেশ অধিকৃত এবং সর্বক্ষেত্রে ইসলাম আজ লাঞ্চিত সে আগ্রাসী দস্যুদের বিরূদ্ধে কি তাদের কোনো প্রতিবাদ আছে? মুসলমানদের আজকের বিশ্বজোড়া পরাজয়ই একমাত্র গ্নানী নয়, মুসলমানরা আজ লাশ হচ্ছে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, মায়ানমার কাশ্মীরসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে। দেশে দেশে মুসলিম রমনীরা ধর্ষিতাও হচ্ছে। ইসলামি শরীয়তের উপর কুঠারাঘাত করছে। এমন পরাজয় ও অপমানের মাঝে তারা কেচ্ছা শোনাচ্ছেন কোন সুফি কতো রাকাত নফল নামাজ পড়েছেন বা কতরাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন সেটির। অথচ ইসলামের উপর কুঠারাঘাত করা হলে সকলের উচিৎ সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করায়। ঈমানদারি শুধু আল্লাহর উপর বিশ্বাস নয়, তার কোর’আনী বিধানের ন্যায্যতা ও শ্রেষ্ঠতার উপর বিশ্বাসও। অপ্রদিকে কুফরি শুধু মূর্তিপূজা নয়, সেটি বিদ্রোহী শয়তানের আনুগত্যও নয়, বরং সেটি আল্লাহর বিরূদ্ধে বিদ্রোহের উপর প্রতিষ্ঠিত সকল নেতৃত্ব, শাসনতন্ত্র, আইন আদালত, ব্যাঙ্ক বীমা এবং শিক্ষা সংস্কৃতিকে মেনে নেয়াও। নবীজীর (সাঃ) আমলে ঈমানদারগণ শুধু কাফেরদেরই নির্মূল করেনি, বর্জন করেছিলো তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রথাকেও। সেযুগে তারা শুধু আল্লাহতায়ালা ও তার কিতাব ও রাসুলকেই মেনে নেয়নি, মেনে নিয়েছিলো আল্লাহর দেয়া শরীয়তি বিধানকেও। সে বিধানের প্রতিষ্ঠায় তাদেরকে জানমালের বিপুল কোরবানিও দিতে হয়েছিলো।
নবীজী (সাঃ) শুধু কোর’আন পাঠ, নামাজ, রোজা,
যাকাত, হজ্জ, দান-খয়রাত ও নফল ইবাদতের সুন্নাতই রেখে যাননি। রেখে গেছে রাষ্ট্র
পরিচালনা, শরীয়তের প্রতিষ্ঠা, বিচার কাজ, সংগ্রাম আন্দোলনসহ শত্রুনিধনের সুন্নাতও।
সাহাবায়ে কিরামগণ তো সেগুলোকেও আঁকড়ে ধরেছিলেন। নানা বিভ্রান্তির মাঝে সে
সুন্নাতগুলো আজও সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ দেখায়। কিন্তু তাবলীগী জামা’আতের নেতাকর্মীগণের
মাঝে সে সুন্নাতগুলো নিয়ে চিন্তাফিকির কই? চিন্তাফিকির যে নাইই সেটি ধরা পড়ে যেমন
তাদের বক্তব্যে, তেমনি কর্মে। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে তাদের সামান্যতম আগ্রহ
নেই। আগ্রহ নেই ইসলামের শত্রুপক্ষের দাদাগিরি থেকে দখলমুক্তির। তাদের দাবী,
আন্দোলন সংগ্রাম না করেই তারা রাষ্ট্রে পরিবর্তন আনবেন। আর সেটি আনবেন জনগোনের
ঈমান এক্বীন ঠিক করে। কথা হলো, এমন কান্ড কি মানব ইতিহাসের কোথাও ঘটেছে? রাষ্ট্র
পরিচালনা হলো নবীজীর (সাঃ) জীবনে সবচেয়ে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সুন্নাত। এ সুন্নাত
সামান্যক্ষণের খুশবু মাখা, মেছওয়াক করা বা কুলুফ লাগানোর নয়। মুসলমানদের সর্বাধিক অর্থক্ষয়, রক্তক্ষয় ও
জীবনক্ষয় হয়েছে এ সুন্নাতকে ধরে রাখতে। সে সুন্নাত ধরে রেখেছিলেন খুলাফায়ে
রাশেদীন। ইসলামের শত্রুদের সাথে মুসলমানদের মূল সংগ্রামটি এখানেই। আজও মুসলিম
বিশ্বের কোণে কোণে যে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন চলছে সেটি তো দেশি বিদেশী দুশমন দ্বারা
অধিকৃত নিজ ভূমিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে।। অথচ তাবলীগী জামা’আতের নীতি অনুসৃত হলে
বিলুপ্ত হবে ইসলামের বিজয়, বিলুপ্ত হবে সেই সুন্নাতগুলি। নেমে আসবে ইসলামের প্রতি
আরো বড় বিপর্যয়। তখন শুধু বেঁচে থাকবে গাশত, চিল্লাহ, ইজতেমা এবং ফাজায়েলে আমলের
কেচ্ছাপাঠ। ইসলামের শত্রুদের তখন আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই থাকবেনা। এতে বিজয় ও
প্রচন্ড উল্লাস বাড়বে শত্রু শিবিরে। মুসলমানদের আজ যে পরাজিত অবস্থা তখন সেটি আরো
তীব্রতর, গভীরতর ও দীর্ঘতর হবে। এজন্যই কি ফ্যাসিষ্ট, সেক্যুলারিষ্ট, সোস্যালিষ্ট,
ন্যাশনালিষ্ট, ইজরাঈল ও পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী মহলসহ তাবত ইসলামবিরোধী মহল
তাদের ইসলাম নিয়ে এত খুশি?