Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

মিলাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস



প্রচলিত মিলাদের প্রবর্তক হলেন, ইরাকের মুসল নগরীর শাসনকর্তা মুজাফফর উদ্দিন কুকুবুরী। তিনি ক্রুসেদ যোদ্ধাদের থেকে অনেক এলাকা জয় করে তার শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। সেই খুশিতে তার নির্দেশে আবুল খাত্তাব উমর নামক জনৈক আলেম ৬০৪ হিজরীতে মিলাদ-ঊন-নবী উৎসবের সূচনা করেন। ইনি ইবনে দাহিয়া নামে স্মধিক পরিচিত। এদের চরিত্র তেমন ভালো ছিল না। সুলতান মুজাফফর ছিলেন একজন অপব্যয়ী শাসক। রাষ্ট্রীয় অর্থ তিনি সীমাহীনভাবে খরচ করতেন। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক ও ইমাম যাহাবী (রঃ) বলেন, তার মিলাদ মাহফিল কাহিনী ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। মিলাদ অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চল হথে ও আলজিরিয়া হতে প্রচুর লোকের আগমন ঘটতো। মিলাদের দিন তার ও তার স্ত্রীর জন্য সুরম্য কাঠের গম্বুজাকৃতির তাবু তৈরি করা হতো। সেখানে নবীর গুণগান্সহ গানবাজনা ও বিভিন্ন খেলাধুলার আসর জমতো। মুজাফফর প্রত্যহ সেখানে আসতেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন। অনুষ্ঠান কয়েকদিন যাবত চলতো। অসংখ্য পশু জবাই করে আগত ব্যক্তিদের আহারের ব্যবস্থা করা হতো। তিনি এ উপলক্ষে তিন লাখ দিনার বাজেট পেশ করতেন। ফকির দরবেশদের জন্য দু’ লাখ এবং অতিথিদের জন্য এক লাখ দিনার। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনা করেন, আমি দস্তরখানায় বিশেষ এক প্রজাতির একশত ঘোড়া, পাঁচ হাজার বকরীর মাথা, দশ হাজার মুরগী, এক লাখ গামলা এবং তিন হাজার হালুয়ার পাত্র গণনা করেছি। এরপর ইমাম যাহাবী (রঃ) বলেন বিষয়টি আমার কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। এ ব্যাপারে ইমাম আহমদ বিন মোহাম্মদ মিসরী (রঃ) বলেন, তিনি বাদশাহ ছিলেন। সমকালীন উলামাদেরকে তিনি নিজ নিজ ইজতেহাদ অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দিতেন। চার ইমামদের অনুসরণ করতেও নিষেধ করতেন। ফলে এক শ্রেণীর আলেম তার দিকে ঝুকে পড়ে। তিনি রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদ শরীফের আয়োজন করতেন। তিনিই প্রথম বাদশাহ যিনি মিলাদের প্রবর্তন করেন। পরবর্তিকালে তার অনুসরণ করে অনেকেই মিলাদ-ঊন-নবী উৎসব করা শুরু করলো। আস্তে আস্তে সেটা আমাদের এখনকার মিলাদে পরিণত হয়। আর আমরাও সেটাকে অতিশয় সওয়াবের কাজ মনে করে মিলাদ উৎযাপন করছি। (বিস্তারিত দেখুনঃ আল মিনহাজুল ওয়াজিহ, পৃঃ ১৬২)

অতএব বোঝা গেল, প্রচলিত মিলাদের প্রবর্তক বাদশাহ মুজাফফর ইসলামি বিধিবিধানের গুরুত্ব দিতেন না। এদের চরিত্র তেমন ভালো ছিলো না। গানবাজনায় লিপ্ত হতেন। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে মিলাদের আয়োজন করতেন। আলেমদেরকে চাপ, প্রলোভন দিয়ে ইচ্ছামতো ব্যবহার করতেন।

রাসুল (সাঃ) বা অন্য কারো জন্মোৎসব পালন করা জায়েজ নয় বরং তা বারণ  করা অবশ্য কর্তব্য। কেননা এটি ধর্মে নব প্রবর্তিত একটি বিদ’আত। রাসুল (সাঃ) কখনো এ কাজ করেন নি। তার নিজের বা তার পূর্ববর্তি কোনো নবী বা তার কোনো স্ত্রী, কণ্যা, আত্মীয় অথবা কোনো সাহাবীর জন্মদিন পালনের কোনো নির্দেশ তিনি দেননি। খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম বা তাদের সঠিক অনুসারী তাবেয়ীনদের মধ্যেও কেউই এমন কাজ করেন নি। এমনকি আমাদের পূর্ববর্তি অধিকতর উত্তম যুগে কোনো আলেমও এ কাজ করেন নি। অথচ তারা সুন্নাহ সম্পর্কে আমাদের চেয়ে অধিকতর জ্ঞান রাখতেন এবং আল্লাহর রাসুল ও তার শরীয়ত পালনকে সর্বাধিক ভালোবাসতেন। যদি এ কাজটি এমনই সওয়াবের হতো তাহলে তারা আমাদের আগেই তা করতেন।

এ কথা সকলের জানা যে, আমাদের নবী সকল নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ। তিনি সবার চেয়ে অধিকতর পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের পয়গাম ও উপদেশবার্তা পৌছিয়েছেন। যদি মিলাদ মাহফিল আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত দ্বীনের অংশ হতো তাহলে তিনি নিশ্চয়ই উম্মতের কাছে বর্ণনা করতেন বা তার সাহাবীগণ তা করতেন। যেহেতু এমন কিছু পাওয়া যায় না অতএব প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের সাথে এই মিলাদ মাহফিলের কোনই সম্পর্ক নেই বরং এটা বিদ’আত যা থেকে রাসুল (সাঃ) তার উম্মতকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করলো যার উপর আমার কোনো নির্দেশ নেই সে আমলটি অগ্রহণযোগ্য” (মুত্তাফাকুন আলাইহি, ৩২৪৩)।

আমি একদিন এক মসজিদের ইমামসাহেবের বক্তব্য শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন শবে মিরাজ উপলক্ষে এ রাতে কোনো বিশেষ সালাত, ইবাদত বন্দেগী বা সিয়াম নেই। যদি শবে মিরাজ উপলক্ষে কোণো আমল করা হয় তা বিদ’আত হিসেবেই গণ্য হবে। তার এ বক্তব্য শেষ হতে নাহতেই কয়েকজন শিক্ষিত শ্রেণির মুসল্লী বলে উঠলেন, হুজুর এ কি বলেন! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহাব্বতে এ রাতে কিছু করলে বিদ’আত হবে কেন? প্রশ্নকারী লোকগুলো যে বিভ্রান্ত বা বিদ’আতপন্থী তা কিন্তু নয়। তাদের খারাপ কোনো উদ্দেশ্যও নেই। কিন্তু তারা যা করার ইচ্ছা করেছেন, আসলে তার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে তাদের ধারণাই নেই। অবশ্যই রাসুল (সাঃ)-কে মহব্বত করা ঈমানের অঙ্গ। আর সব ধরণের মহব্বতেই আবেগ থাকে। রাসুলের (সাঃ) মহব্বতেও থাকবে। কিন্তু সেই আবেগ যেন মহব্বতের নীতিমালা লংঘন না করে। সেই আবেগভরা মহাব্বত যেন আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর আদর্শ ও সুন্নাতের বিরুদ্ধে না যায়। যদি এমনটি হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, রাসুল (সাঃ)-কে মহব্বতের নামে শয়তান তাকে ধোঁকায় ফেলেছে। এ কথা মুসলিমদের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, খৃষ্টানরা বিদ’আতী কাজকর্ম করে ও তাদের নবীর মহব্বতে বাড়াবাড়ি করে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। এ কথা আল কোর’আনে যেমন এসেছে তেমনি হাদিসেও আলোচনা করা হয়েছে।

Facebook Comment