Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিদ’আতের ভয়াবহ পরিণাম



ব্যক্তি, সমাজ, ধর্মীয় মাস’আলা মাসায়েলের উপর বিদ’আতের কুপ্রভাব অত্যন্ত ভয়ানক। তবে বিদ’আতের স্তর রয়েছে। স্তরভেদে বিদ’আতের ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো প্রযোজ্য। একটি কথা মনে রাখতে হবে ক্ষেত্র বিশেষে বিদ’আতকে যত ছোটই ভাবা হোক, তা রাসুল (সাঃ)-এর “শরীয়তের মাঝে প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয়ই বিদ’আত আর প্রত্যেক বিদ’আত ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম” এ বাণীর আওতা হতে কোনো অবস্থাতেই বের হবে না। অতএব বিদ’আত বিদ’আতই। তাই বিদ’আতের ভয়ানক ক্ষতিকর কুপ্রভাবগুলো আমাদের জানা দরকার। এখানে অতি সংক্ষেপে বিদ’আতের কিছু ভয়াবহ পরিণাম আলোচনা করা হলো।

১। বিদ’আত মানুষকে পথভ্রষ্ট করেঃ নবী করীম (সাঃ) যা উম্মতের জন্য নিয়ে এসেছেন তা হলো হক। এছাড়া যা কিছু ধর্মীয় আচার হিসেবে পালিত হবে তা পথভ্রষ্টতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “হক আসার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কি থাকে?” (সুরা ইউনুস, ৩২)

রাসুলে কারীম (সাঃ) বলেছেন, “সকল ধরনের বিদ’আত পথভ্রষ্টতা” (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো বিদ’আতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহ, ফেরেস্তামন্ডলী ও সকল মানুষের লানত পতিত হয়” (মুত্তাফাক আলাইহে; মিশকাত, ২৭২৮)।

২। বিদ’আত রাসুল (সাঃ)-এর আনুগত্য থেকে মানুষকে বের করে দেয় ও সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটায়ঃ কেননা বিদ’আত অনুযায়ী কেউ আমল করলে অবশ্যই সে এক বা একাধিক সুন্নাত পরিত্যাগ করে। উলামায়ে কেরাম বলেছেনঃ ‘যখন কোনো দল সমাজে একটা বিদ’আতের প্রচলন করে, তখন সমাজ থেকে কম করে হলেও একটি সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়’।

আর এটা অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত যে, যখনোই কোনো বিদ’আত আমলে আনা হয়েছে তখনোই সেই স্থান থেকে একটি সুন্নাত চলে গেছে বা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদ আলফেসানীর (রঃ) মাকতুবাত থেকে উদ্ধৃতি দেয়া যায়। তিনি লিখেছেনঃ এক ব্যক্তি আমাকে প্রশ্ন করলো, ‘আপনারা বলেছেন যে, কোনো বিদ’আত নাকি একটি সুন্নাতকে বিলুপ্ত করে। আচ্ছা, যদি মৃত ব্যক্তিকে কাফনের সাথে একটি পাগড়ী পড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে কোন সুন্নাতটি বিলুপ্ত হয়? কি কারণে এটি বিদ’আত হবে?’ আমি জবাবে লিখলামঃ অবশ্যই একটি সুন্নাত বিলুপ্ত হয় যদি মৃতের কাফনে পাগড়ী দেয়া হয়। কারণ পুরুষের কাফনের সুন্নাত হলো কাপড়ের সংখ্যা হবে তিন। পাগড়ী পড়ালে এ সংখ্যাটি আর ‘তিন’ থাকেনা, সংখ্যাটি দাড়ায় ‘চার’।

উদাহরণ হিসেবে আরো বলা যায়, এক ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লো। ঋণ পরিশোধ করতে পারছেনা। এ সমস্যার জন্য এক পীর সাহেবের কাছে গেল। পীর সাহেব তাকে বললেন, তুমি এক খতম কোর’আন বখশে দাও অথবা নির্দেশ দিলেন একটা মিলাদ দাও বা খতমে ইউনুসের ব্যবস্থা করো। সে তাই করলো। ফলাফল কি দাড়ালো? ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির জন্য একটি দোয়া রয়েছে যা আমল করা সুন্নাত। বিদ’আত অনুযায়ী অন্য আমল করার কারণে সেই সুন্নাতটি পরিত্যাগ করলো। জানার চেষ্টাও করলো না যে, এক্ষেত্রে রাসুল (সাঃ) কি ব্যবস্থা দিয়ে গেছেন। অন্যদিকে সে মিলাদ মাহফিল করার জন্য আরও আর্থিক ঋণভারে জর্জরিত হলো।

রমজানের শেষ দশ দিনের রাতসমূহে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু শবেবরাতের রাতে রাত জাগাকে যেমন গুরুত্ব দেয়া হয় তেমনভাবে শবেক্কদরকে অনেকে কম গুরুত্ব দেয়। অর্থাৎ শবেক্কদরের মুল্যায়ণ শবেবরাতকে করা হচ্ছে। ফরজ সালাত আদায়ের পর সর্বদা জামা’আতবদ্ধ হয়ে মুনাজাত করা একটি বিদ’আত। এটা আমল করার কারণে ফরজ সালাত আদায়ের পর যেসকল যিকির আযকার সুন্নাত হিসেবে বর্ণিত আছে তা পরিত্যাগ করা করা হয়। আপনি হিসেব করে দেখবেন এভাবে প্রতিটি বিদ’আত একটি সুন্নাতকে অপসারিত করে উহার স্থান দখল করে নিয়েছে।

৩। বিদ’আত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করেঃ এর জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের খৃষ্টান ধর্ম। তারা ধর্মের মধ্যে বিদ’আত প্রচলন করতে করতে উহার মূল কাঠামো পরিবর্তন করে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট হিসেবে অভিহিত হয়েছে। তাদের বিদ’আত প্রচলনের কথা আল কোর’আনে উল্লেখ করা হয়েছে, “আর সন্যাসবাদ! ইহাতো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রচলন করেছিলো। আমি তাদের এ বিধান দেইনি” (সুরা হাদীদ, ২৭)।

সন্যাসবাদ তথা বৈরাগ্যবাদের বিদ’আত খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে প্রবর্তন করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিলো; উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো যেকোনো কাজ করলেই তা গ্রহণযোগ্য হয়না। এ জন্য আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ)-এর অনুমোদন প্রয়োজন। এভাবে যারা ধর্মের বিদ’আতের প্রচলন করে তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভালো থাকে। কিন্তু তাতে নাজাত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইহুদী ও খৃষ্টানেরা তাদের ধর্মে অন্য জাতির রসম রেওয়াজ ও বিদ’আত প্রচলন ধর্মকে এমন বিকৃত করেছে যে, তাদের নবীগণ যদি আবার পৃথীবিতে ফিরে আসেন তাহলে তাদের রেখে যাওয়া ধর্ম তারা নিজেরাই চিনতে পারবেন না। আমাদের মুসলিম সমাজে শিয়া সম্প্রদায় বিদ’আতের প্রচলন করে দ্বীন ইসলামকে কিভাবে বিকৃত করেছে তা নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই।

৪। বিদ’আত ইসলামের উপর একটি আঘাতঃ যে ইসলামে কোনো বিদ’আত প্রচলন করলো সে মূলতঃ অজ্ঞ লোকদের মতো এ কথা স্বীকার করে নিলো যে, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান নয়। তাতে সংযোজনের প্রয়োজন আছে। যদিও সে মুখে এ ধরণের বক্তব্য দেয় না, কিন্তু তার কাজ এ কথার স্বাক্ষীদেয়। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম” (সুরা মায়েদা, ৩)।

৫। বিদ’আত রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে খিয়ানতের এক ধরণের অভিযোগঃ যে ব্যক্তি কোনো বিদ’আতের প্রচলন করলো বা আমল করলো আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন ‘এ কথা বা কাজটি যে ইসলাম ধর্মের পছন্দের বিষয় এটা কি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জানতেন?’ তিনি উত্তরে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলবেন। যদি ‘না’ বলেন তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, ইসলাম সম্পর্কে আল্লহর রাসুল (সাঃ) কম জানতেন। আর যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন তাহলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বিষয়টি জানতেন, কিন্তু তিনি তা উম্মতের মধ্যে ঠিকমতো প্রচার করেননি। এ অবস্থায় তিনি তাবলীগে শিথিলতা করেছিলেন। (নাউ’যুবিল্লাহ)।

৬। বিদ’আত মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে ও ঐক্য সংহতিতে আঘাত করেঃ বিদ’আত মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ-বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, একদল লোক মিলাদ বা মিলাদ-ঊন-নবী পালন করলো। আরেক দল সেটা বিদ’আত হওয়ায় তা বর্জন করলো বা বিরোধিতা করলো যারা এটা পালন করলো তারা প্রচার করতে লাগলো যে, অমুক দল আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর জন্মদিনে আনন্দ হওয়া পছন্দ করেনা, তার গুণগান করা তাদের কাছে ভালো লাগেনা, তাদের অন্তরে রাসুলুল্লাহ্র (সা;) মহব্বত নেই, তারা বেঈমান, তারা রাসুল (সাঃ)-এর দুশমন। আর এ ধরণের প্রচারণায় তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের দুশমনে পরিণত হলো এবং হানাহানি মারামারিতে লিপ্ত হয়ে পড়লো। এভাবে ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই বিদ’আতকে গ্রহণ ও বর্জনের প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহ শিয়া ও সুন্নি এবং পরবর্তীতে আরো শতাধিক দলে বিভক্ত হয়ে গেলো। কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো, রক্তপাত হলো। তাই মুসলিম উম্মাহকে আবার একত্র করতে হলে সকলকে কোর’আন ও সুন্নাহর দিকে আহ্বান এবং বিদ’আত বর্জনের জন্য অহিংস ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় পরম ধৈর্যের সাথে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে সকল মানুষ ও মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে। কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন আচরণ করা যাবে না। এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যা হক ও সত্য তাই শুধু টিকে থাকবে। আর যা বাতিল তা দেরীতে হলেও বিলুপ্ত হবে।

৭। বিদ’আত আমলকারীর তাওবা করার সুযোগ হয়নাঃ বিদ’আত যিনি প্রচলন করেন বা যে সেই অনুযায়ী আমল করেন তিনি এটাকে এক মহৎ কাজ বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন এ কাজে আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্ট হবেন। যেমন আল্লাহ খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলেছেন তারা ধর্মের বৈরাগ্যবাদের বিদ’আত চালু করেছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। যেহেতু বিদ’আতে লিপ্ত ব্যক্তি বিদ’আতকে পাপের কাজ মনে করেন না, তাই তিনি একাজ থেকে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করেন না এবং তাওবা করার সুযোগও হয়না। অন্যান্য পাপের বেলেয় কমপক্ষে যিনি পাপে লিপ্ত হন তিনি এটাকে অন্যায় মনে করেই করেন। পরবর্তীকালে তার অনুশোচনা আসে, এক সময় তাওবা করে আল্লাহতায়ালার ক্ষমা লাভ করেন। কিন্তু বিদ’আতে লিপ্ত ব্যক্তির এ অবস্থা কখনো হয়না। তাই শয়তানও মানুষের দ্বারা কবীরা গোনাহ করার চেয়ে বিদ’আতী কার্যকলাপ করায় বেশি উৎসাহিত করে।

৮। বিদ’আত প্রচলনকারি রাসুল (সাঃ)-এর শাফায়াত পাবে নাঃ রাহমাতুল্লিল আলামীন হুজুরপাক (সাঃ) তার গুনাহগার উম্মতের শাফায়াতের ব্যাপারে হাশরের ময়দানে খুব আগ্রহী হবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে অনুমতি লাভ করার পর তিনি বহু গুনাহগার বান্দার জন্য শাফায়াত করবেন। কিন্তু বিদ’আত প্রচলনকারির জন্য তিনি শাফায়াত করবেন না।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “শুনে রেখো! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করবো। সেইদিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রেখো! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাবো। কিন্তু তাদের অনেককে আমার মুখ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো, হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী সঙ্গী, আমার অনুসারী। কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে? তিনি উত্তর দেবেন, আপনি জানেন না যে, আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে। (অন্য এক বর্ণনায় আছে) এরপর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাদের উদ্দেশ্যে বলবেন, দূর হও! দূর হও!!” (ইবনে মাজাহ)।

৯। বিদ’আত মুসলিম সমাজে কোর’আন ও হাদিসের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ঃ কোর’আন ও সুন্নাহ হলো মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের রক্ষা কবচ। ইসলাম ধর্মের অস্তিত্বের একমাত্র উপাদান। তাইতো বিদায় হজ্বেও নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতক্ষণ তোমরা তা আঁকড়ে রাখবে ততক্ষণ বিভ্রান্ত হবেনা” (হাকেম, ৩১৯)।

বিদ’আত অনুযায়ী আমল করলে কোর’আন ও সুন্নাহর মর্যাদা মানুষের অন্তর থেকে কমে যায়। ‘যেকোনো নেক আমল কোর’আন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে’ এ অনুভূতি মানুষের অন্তর থেকে ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। তারা কোর’আন ও হাদিসের উদ্ধৃতি বাদ দিয়ে বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তি, পীর, মাশায়েখ, ইমাম ও আমীরসাহেবের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে।

১০। বিদ’আত প্রচলনকারী অহংকারের দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে ও নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে দ্বীনকে ব্যবহার ও বিকৃত করতে চেষ্টা করেঃ বিদ’আত প্রচলনকারি তার নিজ দলের একটি আলাদা কাঠামো দাঁড় করিয়ে ব্যবসায়িক বা আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য এমন কাজের প্রচলন করে থাকে যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয়রূপ লাভ করলেও কোর’আন ও সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত হয়না। কারণ সেই কাজটা যদি কোর’আন ও সুন্নাহ দ্বারা সমর্থিত হয় তাহলে তার দলের আলাদা কোনো বৈশিষ্ট থাকে না। কেননা কোর’আন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত আমল সকল মুসলিমের জন্যই প্রযোজ্য। তাই সে এমন কিছু আবিষ্কার করতে চায় যার মাধ্যমে তার দলের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠা করা যায়। বিশেষ করে আমাদের সমাজে এমন অনেক ইমাম বা আলেম ব্যক্তি আছেন যারা বিদ’আত সম্পর্কে পুরোপুরি জানার পরেও তা না জানার ভান করে থাকেন। কেননা, তাতে তাদের রোজগার কমে যাবে বলে মনে করেন

এ অবস্থায় যখন হক্কানী উলামায়ে কিরামগণ এর প্রতিবাদ করেন বা এ কাজটি চ্যালেঞ্জ করেন তখন বিদ’আতীদের ঔদ্ধত্য বেড়ে যায়। নিজেকে তারা তখন কুতুবুল আলম, ইমাম সম্রাট, হাদীয়ে উম্মাত, রাহবারে মিল্লাত, যিল্লুর রাহমান, আমীরসাহেব বলে নিজেকে দাবী করতে থাকে। প্রচার করতে থাকে এ দুনিয়ায় তারাই একমাত্র হক পথে আছে, বাকিরা সবাই ভ্রান্ত।

মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বানী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মোহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্র্যত্যেক বিষয় বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত হলো ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম” (মুসলিম, ১৫৩৫; সুনান আন নাসায়ী, ১৫৬০)।

পাঠক ভাই ও বোনেরা! যে ব্যক্তি উপরোক্ত আলোচনা বুঝতে সক্ষম হবেন, সে ব্যক্তি নিজেকে বিদ’আত ও তার ভয়াবহতা হতে রক্ষার্থে এখন থেকেই যাচাই বাছাই করে পথ চলবেন। যাতে করে অসতর্কতা বশঃত বিদ’আতের মধ্যে জড়িয়ে না যান। যে আমলই আমরা করিনা কেন তা যাচাই বাছাই করেই করা উচিৎ। কারণ হতে পারে বহু আমল আমার আপনার জিবনের সাথে জড়িয়ে আছে যেগুলো দূর্বল বা বানোয়াট হাদিসের উপর নির্ভরশীল।

ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর ভাষায়, “যারা যঈফ ও জাল হাদিস জেনেশুনে (সতর্কীকরণ ছাড়াই) বলে বেড়ান তারা আলেম উপাধি পাবার চেয়ে জাহেল উপাধি পাবার অধিক হকদার এবং তারা সাধারণ মুসলিম সমাজকে ধোঁকাদানকারী বলে গণ্য হবে” (সহিহ মুসলিম শরীফের ভূমিকা দ্রষ্টব্য)।

রাসুল (সাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণী কোনো ব্যক্তির ভূলে যাওয়া ঠিক হবেনা, “আমার এ নির্দেশের মাঝে যে ব্যক্তি এমন কিছু নব আবিষ্কার করবে যা তার অন্তর্ভূক্ত ছিলো না, তা পরিত্যাজ্য” (বুখারী, ২৬৯৭; মুসলিম, ৩২৪২; আবু দাঊদ, ৩৯৯০; ইবনে মাজাহ, ১৪)।

তথাকথিত হুজুরদের পাল্লায় পড়ে বিদ’আতী আমল করলে কি হবে তা আল্লাহতায়ালা গোপন রাখেননি। আল্লাহ বলেন, “যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসুলের আনুগত্য করতাম। তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিলো। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত করুন” (আল আহযাব, ৬৬-৬৮)।

অতএব আমরা কার স্বার্থ রক্ষারথে তথাকথিত হুজুরদের ধোঁকায় পড়ে নবী (সাঃ) হতে সহিহ সনদে বর্ণিত হাদিসগুলো ছেড়ে দিয়ে নিজেদেরকে বিপথগামী করবো? আর কেনইবা নবীজীর দেওয়া পথ বাদ দিয়ে অন্য কারো সৃষ্ট পথে চলবো?

আসুন! আমরা রাসুল (সাঃ)-এর শাফায়াত লাভের আশায় নিজেদেরকে তার সহিহ সহিহ সুন্নাহমুখী করি আর অনুধাবন করি নিম্নোক্ত হাদিসটি। কারণ একমাত্র তার সহিহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার বিষয়টি যে কত বড়ো গুরুত্বপূর্ণ নিম্নের হাদিসটি তারই প্রমাণ বহন করছে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার আত্মা, যদি মূসা (আঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তার আর কোনো সুযোগ ছিলো না” (মুসনাদে ইমাম আহমাদ, ১৪৬২৩)।

বিদ’আতের সাথে জড়িত হওয়ার কারণগুলো নিম্নরুপঃ
ক) কোর’আন, সুন্নাহ ও আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা।
খ) অতীতের হকপন্থী বা সত্যানুসারী ব্যক্তিগণের মত ও পথের অনুসরণ না করা।
গ) প্রবৃত্তি বা মনোবৃত্তির অনুসরণ করা।
ঘ) সন্দেহমূলক আমলের সাথে জড়িত থাকা।
ঙ) শুমাত্র স্বীয় বুদ্ধির উপর নির্ভর করা।
চ) বড় বড় আলেমের উদ্ধৃতি দিয়ে তার অন্ধ অনুসরণ করা, যা গোঁড়ামির দিকে নিয়ে যায়। আর তখনই সে কোর’আন ও সুন্নাতের দলীলগুলোকে এড়িয়ে চলে।
ছ) মন্দ লোকদের সংস্পর্শে থাকা ও চলা।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিদায়ি হজ্বের ভাষণের দিনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ পবিত্র এই আয়াত ঘোষণা করে বলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে রাজী হয়ে গেলাম” (সুরা মায়েদা, ৩)।

কোর’আন ও সুন্নাহর বাইরে এমন কিছু নাই যা দ্বীনের পরিপূর্নতার জন্য সহায়ক হতে পারে। মোটকথা ইসলাম এমন এক সুশৃঙ্খল কর্মপন্থা যা ব্যতিরেকে অন্য কোনো পথ অনুকরন ও অবলম্বনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা অসম্ভব। আফসোস! ঐ সমস্ত মানুষের উপর যারা ধর্মে নতুন আবিষ্কারকে ভালো বিষয় মনে করে একে ভালো কাজ মনে করে। আর তারা দ্বীনের পরিপূর্ণতাকে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অন্ধকারময় বিদ’আত কাজের মধ্যে হিদায়াত অনুসন্ধান করে। তাহলে কি নবিজী (সাঃ)-এর সময় আল্লাহর দ্বীন পূর্ণাঙ্গ হয়নি? (নাউ’যুবিল্লাহ)। আর নবীজী (সাঃ) পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি বলেই কি নতুন কিছু সংযোজন করা হচ্ছে তার এই দ্বীনের মধ্য? নাকি আল্লাহপাকের এই ঘোষণা মিথ্যে? (আসতাগ ফিরুল্লাহ)। আর সেটা কখনোই হতে পারেনা।

তাই আমাদের উচিৎ দ্বিনের মধ্যে এরকম জঘন্য নতুন আবিষ্কৃত বিষয়গুলির বিরুদ্ধে রুখে দ্বারা। আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-এর যুগে এরকম অনেক আবিষ্কৃত বিষয়গুলো নির্মূল করার জন্য প্রচুর সংগ্রাম করেছেন এবং তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ একটি অসৎকাজ হতে দেখলে, সে যেন তাকে তার হাত দিয়ে প্রতিহত করে। তবে যদি সে ঐরুপ করতে অক্ষম হয়, তাহলে কথা দ্বারা যেন তাকে প্রতিহত করা হয়। যদি এরপরেও করতে অক্ষম হয়, তাহলে যেন অন্তর দিয়ে তাকে ঘৃণা করা হয়; আর সেটা হবে সবচেয়ে দূর্বলতর ঈমান” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজী)।

অতএব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সার্বিক কল্যাণ একমাত্র রাসুল (সাঃ)-এর আদর্শের মধ্যেই আমাদেরকে খুঁজে নিতে হবে। তাই আমাদের সবার কর্তব্য হলো নিজের ব্যাপারে, নিজেদের সন্তান ও পরিবার সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেস্তাগণ। তারা আল্লাহতায়ালা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে” (আত তাহরীম, ৬)।

আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিকভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

Facebook Comment