কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাবলীগী জামা’আত ইসলামের যে চিত্রটি পেশ করেছে সেটি কি নবীজী (সাঃ)-এর ইসলাম? পবিত্র কোর’আন কি এ শিক্ষা দেয়? যেকোনো মুসলমানের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নবীজী (সাঃ) কিরূপ ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছেন সেটি কোনো বিজ্ঞজনেরই অজানা থাকার কথা নয়। ইসলামের সে পরিচয়টি যেমন সহিহ হাদিসগ্রন্থে পাওয়া যায় তেমনি বিশদভাবে বিদ্যমান ইতিহাসগ্রন্থেও। তাছাড়া আল্লাহতায়ালা কিরূপ ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা চায় সেটিও কারও দৃষ্টির আড়ালে নয়, পবিত্র কোর’আনে আজও সেই ইসলাম বিশুদ্ধভাবে সুরক্ষিত। পবিত্র কোর’আন আজও সেই একই কথা শোনায় যা শুনিয়েছিলো নবীপাক (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরামদের। ইসলামের নামে যতো বিপ্লব, যত আন্দোলন এবং যতো জামা’আতের উদ্ভব হবে তা কতটা সঠিক সেটির যথার্থতা বিচার হবে পবিত্র কোর’আন ও হাদিসের আলোকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাবলীগী জামা’আত নিয়ে সে বিচার কতটা হয়েছে? হয়ে থাকলে কতটা উত্তীর্ণ হয়েছে সে বিচারে? বস্তুত সে বিচার তেমন হয়নি বরং অহরহ যা ঘটছে তা হলো, বিপুল সংখ্যক জনতা এ জামাতে শামিল হচ্ছে কোনোরূপ বিচার বিবেচনা না করেই। অনেকেই মনে করছে এটিই হলো নবীজীর (সাঃ) সময়ের ইসলাম এবং সে চেতনায় তাবলীগী জামা’আতের কাজে এবং ইজতেমায় যোগ দেওয়াকে তারা অতিশয় সওয়াবের কাজ মনে করছে। আর এভাবেই চলছে।
আল কোর’আনের ইসলামই হলো নবী করীম (সাঃ)-এর
ইসলাম। হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, “নবী করীম (সাঃ) ছিলেন আল কোর’আনের জীবন্ত রূপ”
[[[]]] মহান আল্লাহর রাসুল হিসেবে নবিজীর (সাঃ) উপর মূল দায়িত্বটি ছিলো পবিত্র
কোর’আনের সে ইসলামকে মানুষের কাছে অবিকৃত অবস্থায় পৌছে দেওয়া। ইসলামের যে চিত্রকে
আল্লাহতায়ালা দেখতে চান নবীজী (সা;) সে কাজে সফলও হয়েছেন। এদিক দিয়ে নবীজীর (সাঃ)
পূর্ন সফলতার সার্টিফিকেট এসেছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। বিদায় হজ্জে আরাফার
ময়দানে সে সাক্ষ্য দিয়েছেন সমবেত সাহাবাগণও। মহান আল্লাহতায়ালা নবীজীকে (সাঃ)
বলেছেন সমগ্র মানুষজাতির জন্য তিনি ‘উসওয়াতুন হাসানা’ তথা উত্তম আদর্শ। তার চলার
পথটি হলো একমাত্র ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ বা সহজ সরল সোজা পথ।
মুসলমানের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো,
ধর্মের নামে অন্যদের পক্ষ থেকে যা কিছু পেশ করা হয় সেগুলিকে বিনাবিচারে কবুল করে
নেওয়াটা নয় বরং নবীজীর (সাঃ) ইসলামের সাথে সেগুলোকে গভীরভাবে মিলিয়ে দেখা। যা কিছু
নবীজীর (সাঃ) সুন্নাতের বিপরীত সেগুলোকে বর্জন করা এবং যা কিছু সুন্নাতের অনুরূপ
সেগুলোকে কবুল করা। মানুষের বুদ্ধিমত্তার চরম পরিক্ষাটি খাদ্যপানীয়, জীবনসঙ্গী ও
পোষাক পরিচ্ছদ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে ঘটেনা। এমনকি পশুও বোঝে কোনটি তার জন্য সুখাদ্য
এবং কোথায় থাকলে আহারের জোগান ভালো মিলবে। পরিযায়ী পাখিরাও তাই আমাদের দেশে উড়ে
আসে। বরং মানুষের জীবনের সবচেয়ে বর পরীক্ষাটি হয় পথচলার সথিক পথটি বেছে নেয়ার
ক্ষেত্রে। কে পরকালে মহা পুরষ্কারটি পাবে সে পরিক্ষার শুরুটি হয় সথিক পথটি বেছে
নেওয়ার সে সামর্থ থেকে। অথচ এ ক্ষেত্রেই অধিকাংশ মানুষের জীবনে সবচেয়ে বর ভূলটি
হয়। কোনো মানুষই সজ্ঞানে পচা খাদ্য গ্রহণ করেনা। অথচ ধর্মের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত
অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তিকে বহু শিক্ষিত পন্ডিত ও পিএইচডি ধারীও বিনা বিবেচনায় গ্রহণ
করে। চন্দ্র, সূর্য, থেকে শুরু করে গরু, সাপ, শকূন, নদী, পাহাড়, পাথর এমনকি
পুলিঙ্গও আজ যেভাবে কোটি কোটি মানুষের পূজা পায় তাও এই চিন্তাশুন্যতা, অজ্ঞতা ও
বিভ্রান্তির কারণে। একই কারণে সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে যুগে যুগে ভয়ানক বিচ্যুতি
ঘটেছে শুধু অতীতের নবী রাসুলদের উম্মতেদের মাঝেই নয়, আজকের মুসলমানদের মাঝেও।
আল্লাহর দ্বীন এবং তার শরীয়তি বিধান মূলত সে কারণেই আজ মুসলিম দেশসমূহে পরাজিত ও
অবহেলিত।
এমন
এক পরাজিত অবস্থার ময়দানে নেমেছিলো তাবলীগী জামা’আত। কিন্তু নবীজী (সাঃ) এবং তার সাহাবায়ে কেরাম যে সিরাতুল
মুস্তাকিম দিয়ে পথ চলেছেন তাবলীগী জামা’আতের পথ তা থেকে যে বহু দূরে সেটি ইতিহাসের
যেকোনো পাঠকের চোখেই ধরা পড়তে বাধ্য। তারা পথ গড়েছেন নিজেদের মনের মতো করে, কোর’আন
ও সহিহ হাদিসের শিক্ষা এখানে গুরুত্ব পায় না। ফলে রাসুলে পাক (সাঃ) ও সাহাবায়ে
কেরামের জীবনে যেভাবে কোর’আনী জ্ঞান, হিজরত, ইসলামি আন্দোলন, ইসলামি রাষ্ট্র,
শরীয়তের প্রতিষ্ঠা ও শাহাদাৎ এসেছিলো তারা এর ধারে কাছেও নেই।