Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

বিশ্ব বরেণ্য আলিমগণের দৃষ্টিতে তাবলীগ জামা’আত ও তার নিসাব


সম্মানীত মুসলিম ভ্রাতাগণ! আমি আপনাদের খেদমতে সামান্য একটু আলোচনা করবো বিশ্বের সকল মুসলিমদের নিকট সমাদৃত আলিম উলামদের মতামত, বিশেষ করে আব্রব বিশ্বের আলিমগণের মতামত। কারণ আমি সৌদি আরবের কিছু বই পড়ে জানতে পারি যে, এতদিন ধরে আমরা যে সওয়াবের আশায় প্রচলিত তাবলীগ জামাতে কাজ করছি এবং পিপিলিকার স্রোতের মতো ইজতেমায় জমায়েত হয়ে ফজিলতের বয়ান শুনে কান ঝালাপালা করে সমস্ত পাপমুক্ত হয়ে যে যার ঘরে ফিরছি তা সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং বিদ’আতী কার্যকলাপ। দ্বীনের মধ্যে সওয়াবের আশায় নতুন কোনো পন্থা আবিষ্কার করাই হলো বিদ’আত। আরব বিশ্বের উলামায়ে কিরাম তাবলীগী জামা’আত ও তার নিসাবকে বাতিল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারই প্রমাণ হিসেবে বর্তমান শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কিছু আলিমের মতামত সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
আল্লাহপাক শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ে এসমস্ত আলিমদের অভিমত গ্রহণ করার জন্য আল কোর’আনে বলেন,
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“তোমরা জ্ঞানবানদের জিজ্ঞাসা করো, যদি তোমরা তা না জানো” (সুরা আম্বিয়া, ৭)।

১। শায়খ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আল শায়খ (রহঃ), সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, সৌদী আরবঃ রাজকীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধানকে লেখা পত্রে তাবলীগ জামা’আত সম্পর্কে বলেন, “আমি মহোদয়ের নিকট এ প্রতিবেদন পেশ করছি যে, এই জামা’আতের কোনোই ফায়দা নাই, এটি একটি বিদ’আতী এবং গোমরাহী সংগঠন। তাদের নিসাবগ্রন্থ পড়ে দেখলাম, তাতে গোমরাহী এবং বিদ’আতে ভরপুর। এতে কবর পূজা এবং শিরকের দিকে আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়টি এমনই যে, এ ব্যাপারে চুপ থাকা যায় না। এজন্য অবশ্যই আল্লাহ চাহেন তো আমি এর প্রতিবাদ লিপি পাঠাবো যেনো এর বিভ্রান্তি ও বাতিল প্রকাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহর নিকট দোয়া করি তিনি যেনো তার দ্বীনকে সাহায্য করেন এবং কালিমাকে সুউচ্চে উড্ডীয়মান রাখেন। আমীন!” তারিখঃ ২৯/০১/১৩৮২ হিজরি (তথ্যসূত্রঃ ফতওয়া ও চিঠিপত্র, শায়খ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আল শায়খ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬৭-২৬৮)

২। শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ), সৌদি আরবঃ শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ)-এর নিকট তাবলীগ জামা’আতের সঙ্গে চিল্লাহয় বের হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, “আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। অতঃপর তাবলীগ জামা’আতের নিকট আকিদাহর ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ধারণা নেই। সুতরাং তাদের সাথে বের হওয়া উচিৎ নয়। একমাত্র যার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকিদাহ সম্পর্কে জ্ঞান ও স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে সে বের হতে পারে, এজন্য যে তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিতে এবং প্রয়োজনীয় নসীহত করতে পারে এবং তাদেরকে কল্যাণমূলক কাজে সহায়তা করতে পারে। কেননা, তারা তাদের কাজের ব্যাপারে খুবই তৎপর। কিন্তু তারা আরো অধিক জ্ঞানের মুখাপেক্ষী এবং আলিম উলামায়ে কিরামের প্রতি মুখাপেক্ষী যারা তাদেরকে তাওহীদ ও সুন্নাহর জ্ঞানে আলোকিত করবে। আল্লাহতায়ালা সকলকে দ্বীনের জ্ঞান দান করুন এবং এর উপর সাবেত রাখুন। আমিন!” (তথ্যসূত্রঃ মাযমু ফাতাওয়া আল শাইখ ইবন বায, ৮/৩৩১)।

৩। শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিনঃ শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিনকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো তাবলীগ জামা’আত ও এর সাথে সংশ্রব রাখার ব্যাপারে এবং তাদের নির্দিষ্ট তরীকার যিকির ও ছয় উসুল সম্পর্কে। উত্তরে বলেন, “ইবাদত হলো ‘তাওকিফী’ অর্থাৎ শরীয়ত নির্ধারিত। এজন্য কোনো মুসলিমই এমন কোনো ইবাদত করতে পারবে না যা আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) নির্দিষ্ট করেননি। কেননা আল্লাহতায়ালা অস্বীকার করেছেন তাদেরকে যারা আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) ব্যতীত অন্য কারো তৈরি করা ইবাদত করবে। মহান আল্লাহপাক বলেন,
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“তাদের কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য রয়েছে, তাদের জন্য যারা বিধান তৈরি করছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? যদি চুড়ান্ত ফায়সালা না থাকতো তবে তাদের মাঝে এখনই দফারফা করে দেয়া হতো” (আশ শুরা, ২১)।

ইবাদত হলো, ‘তাওকিফী’ তার ধরণ, পরিমাণ, গুণাবলী, সময় এবং স্থানের দিক দিয়ে। সুতরাং ইবাদত অবশ্যই শরীয়ত মোতাবেক হতে হবে। প্রশ্নকারীরা যা উল্লেখ করেছে, এভাবে ক্রমধারায় বিদ’আতী তরীকায় আল্লাহর যিকির ও তাদের ছয় উসুল দেখতে হবে যে, শরীয়তে এভাবে সাব্যস্ত রয়েছে কিনা? যদি রাসুল (সাঃ) থেকে এভাবে সাব্যস্ত হয়ে থাকে তাহলে মাথা পেতে নিতে হবে। আর যদি সাব্যস্ত না হয়ে থাকে তাহলে যা রাসুল (সাঃ) থেকে সাব্যস্ত রয়েছে তাই যথেষ্ট। আমি জানিনা যে, রাসুল (সা;) থেকে এভাবে যিকির তিলাওয়াত ও উসুল সাব্যস্ত রয়েছে কিনা। এজন্য আমার ভাইদের অনুরোধ করছি, যারা এর সাথে জড়িত তারা যেনো তা পরিত্যাগ করেন এবং রাসুল (সাঃ) থেকে প্রমাণিত ও সাব্যস্ত সে অনুযায়ী আমল করেন। সেটাই তাদের জন্য উত্তম এবং প্রতিফলও ভালো হবে।”

ছয় উসুল সম্পর্কে শায়খকে প্রশ্ন করা হ্য যে, এ উসুল বা মূলনীতি কি দ্বীনের সবকিছুকে শামিল করে নাকি দ্বীনের কিছু ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি থাকলে সেটা কি? উত্তরে শায়খ উসাইমীন বলেন, “এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, সর্বোত্তম বাক্য হলো আল্লাহর কালাম বা কথা। সর্বোত্তম হিদায়াত হলো মুহাম্মাদ’র হিদায়াত। পুর্ণ কালাম, উত্তম কালাম, স্পষ্ট কালাম, ব্যাপ্ত কালাম হলো আল্লাহ এবং তার রাসুলের কালাম। নবী (সাঃ) দ্বীনের পূর্ণ বর্ণনা করেছে যা উমর (রা;) হতে বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়। প্রশ্নকারী যে ছয় উসুলের কথা উল্লেখ করেছেন তা ভালো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা অপূর্ণ। অপূর্ণতার কারণ হলো, রাসুল (সাঃ) যে দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন তা উল্লেখিত হাদিসে জিবরীল বলা হয়েছে। সেখানে রাসুল (সাঃ) বলেছে, ‘তিনি (জিবরীল) তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন” (সহিহ মুসলিম)।

অতএব আমার ভাইদের জন্য নসীহত, যারা এই ছয় উসুলকে নিজের চলার জন্য মূলভিত্তি হিসাব গ্রহণ করেছে, তারা যেনো এ চিন্তাধারা পরিবর্তন করে এ মহান হাদিসে যা এসেছে সেদিকে ফিরে আসে যাকে নবী (সাঃ) দ্বীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতএব প্রথমেই ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ বা আরকানকে ভালোভাবে জানতে হবে। অতঃপর জানতে হবে ঈমানের ছয় আরকানকে। তারপর ইহসানকে, এভাবেই তারা পূর্ণ দ্বীনকে জানতে ও শিখতে পারবে।” (তথ্যসূত্রঃ মুহাম্মদ বিন সালেহ কর্তৃক স্বাক্ষরিত ফতওয়া)।

৪। শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ), সৌদি আরবঃ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করা হয়, তাবলীগ জামা’আত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? এদের সাথে কোনো তালিবে ইলম বা অন্য কেউ আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে বের হতে পারে কি?

উত্তরে তিনি বলেন, “তাবলীগ জামা’আত আল্লাহর কোর’আন এবং রাসুলের হাদিসের তরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত নয় এবং আমাদের সালফে সালিহীনের পন্থার উপরও নয়। অবস্থা যখন এই, তখন তাদের সাথে বের হওয়া জায়িয হবেনা। কেননা এটা আমাদের সালফে সালিহীনদের তাবলীগের পন্থার পরিপন্থী। দাওয়াতের কাজে বের হবেন আলিম বা বিদ্বান ব্যক্তিআর এরা যারা বের হচ্ছে তাদের উপর অবশ্য করণীয় হলো নিজের দেশে জ্ঞান শিক্ষা করা, মসজিদে মসজিদে জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা করা, যারা দাওয়াতের কাজ ক্রবে তারা যেনো আলিম তৈরি হয়। এ অবস্থায় তালিবে ইলমদের উচিৎ যেনো এদেরকে তাদের দেশেই কোর’আন হাদিস শিক্ষার জন্য আহ্বান জানায়। মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াতে তাবলীগীরা কোর’আন ও সুন্নাহকে তাদের মূলনীতি হিসাবে গণ্য করেনা। বরং তারা এই দাওয়াতকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এরা যদিও মুখে বলে যে, তাদের দাওয়াত কোর’আন ও সুন্নাহ ভিত্তিক তা নিছক তাদের মুখের কথা, এদের কোনো একক আকিদাহ বিশ্বাস নেই যা তাদেরকে একত্রিত করতে পারে। এজন্যই দেখা যায়, এরা হলো সুফী ও মাতুরিদী, আশাযিরী আর এরা তো কোনো মাযহাবেই নেই। এর কারণ হলো তাদের আকিদাহ বিশ্বাস জটপাকানো। এদের নিকট স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাব। এদের জামা’আত প্রতিষ্ঠার প্রায় অর্ধশত বছর পার হয়ে গেলো কিন্তু এতো লম্বা সময়ের পরও তাদের মাঝে কোনো আলিম তৈরি হলো না। আমরা এজন্যই বলি আগে জ্ঞানার্জন করো এরপর একত্রিত হও, যেনো একত্রিত হওয়া যায় নির্দিষ্ট ভিত্তির উপর, যাতে কোনো মতভেদ থাকবে না।

তাবলীগ জামা’আত বর্তমানে সুফী মতবাদের ধারক বাহক জামা’আতএরা চরিত্র সংশোধনের ডাক দেয় কিন্তু আকিদাহ বিশ্বাসের সংস্কার ও সংশোধনের ডাক দেয়না। এ ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। কেননা তাদের ধারণামতে এর দ্বারা বিভক্তি সৃষ্টি হবে। জনাব সা’দ আল হুসাইন এবং ভারত-পাকিস্তানের তাবলীগের মুরুব্বীদের সাথে বেশ কিছু পত্র যোগাযোগ হয়। এর দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা অসীলাহ, উদ্ধারকারী (ইস্তিগাসা) এবং এ ধরণের অনেক ধারণাই সমর্থন করে। প্রত্যেক তাবলীগীকে এই চার তরীকার ভিত্তিতে বাই’আত গ্রহণ করতে হবে। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন যে এদের প্রচেষ্টায় অনেক মানুষই আল্লাহর পথে ফিরে এসেছে। বরং এদের সাথে বের হবার জন্য কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার জন্য কি এটা যথেষ্ট নয়? এ ব্যাপারে বলছি যে, এটা আমরা অনেক শুনেছি এবং জানি, সুফীদের কাছ থেকে অনেক ঘটনাই জানি। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি শায়খের আকিদাহ ফাসিদ হয়, হাদিস জানেনা বরং লোকজনের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে এতদ্বসত্বেও অনেক ফাসিক লোক তার হাতে তাওবা করে। যে দলই ভালো বা কল্যাণের দিকে ডাকবে অবশ্যই তার অনুসারী পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা দৃষ্টি দিবো যে, সে কিসের দিকে আহ্বান করছে? সে কি কোর’আন হাদিস এবং সালফে সালিহীনের আকিদাহর দিকে ডাকছে এবং কোনো মাযহাবের ব্যাপারে কোনো চরম গোঁড়ামি করেনা এবং যেখানেই পায় সুন্নাতের অনুসরণ করে। তাবলীগ জামা’আতের কোনো ইলমী তরীকা বা পন্থা নেই। তাদের পন্থা হলো স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে তার জন্ম হয়েছে। এরা সব রঙেই রঙীন হয়।” (তথ্যসূত্রঃ আলবানী, ইমারাতী ফাতাওয়া, পৃষ্ঠা ৩৮)

Facebook Comment