Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

পাপ ও তাওবাঃ একটি আশার বাণী


ইসলামে পাপ আর প্রায়শ্চিত্তের ধারণা সবসময়ই আকর্ষণীয় মনে হয়। তাওবা সংক্রান্ত আয়াত আর হাদীসগুলো এত ইতিবাচক যে, সেটা যেকোন পাপী হৃদয়ে আশা জাগায়: ক্ষমার আশা, করুণার প্রত্যাশা। আল কোর'আনে বলা হয়েছে,

"আমার বান্দারা—যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ—আল্লাহর করুণা থেকে নিরাশ হয়োনা! নিঃসন্দেহে আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেন!” (আয যুমার, ৫৩)

অথবা যখন পড়ি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা, "মরুভূমিতে তোমাদের হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে তোমরা যতটা খুশি হও, আল্লাহ তার চেয়েও বেশি খুশি হন, যখন তাঁর বান্দা তাঁর দিকে তাওবা করে ফিরে আসে।" (সহীহ বুখারী ৭৪০৫, মুসলিম ২৬৭৫, তিরমিযী ২৩৮৮)

এত সহজে কি আর কোথাও ক্ষমা পাওয়া যায়? মা বাবাও তো এত তাড়াতাড়ি মাফ করেন না। তারাও তো জুড়ে দেন নানান শর্ত। তাওবা করে ফিরে আসায় আমাদের চেয়েও আল্লাহ বেশি খুশি হন! তিনিই যে আর-রাহমান, পরম করুণাময়।

কাফিরঃ কাফির শব্দটি কুফর থেকে উৎকলিত। 'কুফর' শব্দের অর্থ হলো অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা বা গোপন করা। বাংলাতে কাফের শব্দের অর্থ করা হয় অবিশ্বাসী। যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত দ্বীন ইসলাম বা ইসলামের কোনো অংশকে, কোর'আনুল কারীম বা এর কোনো আয়াতকে, নবী করীম (সা:) বা অন্য কোনো নবী রাসুলকে অস্বীকার করে বা ইসলামের মৌলিক কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস বা বিধিবিধানকে অবিশ্বাস, অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করে, নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি একজন কাফের। তাই কাফের একজন মুসলিম বা অমুসলিম যে কেউ হতে পারে।

কোর'আনে বলা আছে, "নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছেন। তথায় তারা অনন্তকাল থাকবে এবং কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। যেদিন অগ্নিতে তাদের মুখমন্ডল ওলট পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতাম।" (আল আহযাব, ৬৪-৬৬)

তাওবাঃ তাওবার আক্ষরিক অর্থ ফিরে আসা। ইসলামী শরীয়তে এর অর্থ অতীত পাপকাজ থেকে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ় সংকল্প করা। সুতরাং তাওবার প্রকৃত তাৎপর্য হল আন্তরিক অনুশোচনা। তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

যে ব্যক্তি তাওবা করতে চায়, তার জন্য তাওবার দরজা খোলা রয়েছে। সুতরাং অতীতের পাপের প্রতি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহ তা'আলার নিকট তাওবা করা এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যে, আমি আর পাপের কাজে যাবনা এবং খুব বেশি বেশি সৎকাজ করবো; আল্লাহ তা'আলা  কোর'আনে বলেছেন,

"কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে তো সম্পুর্ণরুপে আল্লাহর দিকেই ফিরে আসে।" (আল ফুরকান, ৭০-৭১)

আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "নিশ্চয় বামের ফিরিশতা পাপী বা অপরাধী মুসলিমের উপর থেকে ছয় ঘন্টা কলম তুলে রাখেন। অতঃপর সে যদি পাপে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তাহলে তা উপেক্ষা করেন। নচেৎ একটি পাপ লেখা হয়।" (ত্বাবারানীর কাবীর ৭৬৬৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৭০৫১, সহীহুল জামে’ হা/ ২০৯৭, সিঃ সহীহাহ ১২০৯)

আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "মু’মিন যখন কোন পাপ করে, তখন তার হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। অতঃপর সে যদি তওবা করে, পাপ থেকে বিরত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে তার হৃদয় পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যদি আরো বেশি পাপ করে, তাহলে সেই দাগ তার হৃদয়কে গ্রাস করে নেয়। এই হল সেই জং, যার কথা আল্লাহ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন।"(আহমাদ ৭৮৯২, তিরমিযী ৩৩৩৪, সহীহ ইবনে মাজাহ ৩৪২২)

মহান আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে তাওবা করার যোগ্যতা দান করেন আর আমাদেরকে সঠিক ও সোজা পথ প্রদর্শন করেন; তাদের পথ যাদের প্রতি আল্লাহ রহমত দান করেছেন, তারা হচ্ছেন নবীগণ এবং সিদ্দীক (সত্যবাদী), শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ; যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট, তাদের পথে নয়। (আমীন)।।

Facebook Comment