Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

গজব বা মহামারী কেন আসে এবং করণীয়?

গজব বা মহামারী কেন আসে এবং করণীয়?
(করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ)

সাধারণত মনে করা হয় ভূমিকম্প, ঘুর্ণিঝড়, শীলাবৃষ্টি, মহামারী, কলেরা, প্লেগ, ডেঙ্গু, বন্যা, সুনামী, আইলা, সিডর, অগ্নিকান্ড, দুর্ভীক্ষ, করোনা ভাইরাস, দাবানল, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এ সবই হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রাকৃতিক কারণে সময় সময় এসব হয়ে থাকে। কিন্তু তবুও প্রশ্ন জাগে, এ বিপর্যয় কেন হলো? এমন ভয়াবহ বিপদের কারণ কী? তথাকথিত প্রকৃতিই কি এর জন্য দায়ী? এতে মানুষের অন্যায় অনাচারের কোনো প্রতিক্রিয়া কি নেই?

বিজ্ঞান এ প্রশ্নের জবাবে নীরব। জ্ঞান অর্জনের আর সব সূত্রই এ পর্যায়ে অকেজো। কিন্তু মহাগ্রন্থ আল কোরআন এ সম্পর্কে নীরব নয়। যেহেতু পবিত্র কোরআনই সর্বকালীন মানুষের মুক্তির চিরস্থায়ী মহাসনদ, তাই পবিত্র কোরআনেই রয়েছে এ প্রশ্নের জবাব।

মূলত পৃথিবীর ইতিহাসে রয়েছে এর বহু প্রমাণ যে, আল্লাহতায়ালার নাফরমান জাতিগুলোকে তিনি জগতের বুকে অশান্তি সৃষ্টি করার শাস্তিস্বরূপ ধ্বংস করে দিয়েছেন চিরতরে। কোরআনে পূর্বের ধ্বংসপ্রাপ্ত আদ, সামুদ ইত্যাদি জাতিসমূহের ঘটনাবলির কথা আল্লাহপাক বর্ণনা করেছেন, যেন অনাগত ভবিষ্যতের মানুষ এ ঘটনাবলির দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করে। যারা তাদের অন্যায় আচরণের দরুণ আল্লাহর কোপগ্রস্ত হয়েছে আগামী দিনের মানুষ যেন তাদের অনুসরণ করে এমনিভাবে বিপদগ্রস্ত না হয়।

আল কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, 'অতঃপর এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পাপের কারণে আমি পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারো উপর আমি পাথরকুচির ঝড় পাঠিয়েছি, কাউকে পাকড়াও করেছে বিকট আওয়াজ, কাউকে আবার মাটিতে দাবিয়ে দিয়েছি আর কাউকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলম করবেন বরং তারা নিজেরা নিজেদের ওপর যুল্‌ম করত।' (আল আনকাবূত, ৪০)

পবিত্র কোরআন আমাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় কেন আসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভয়াবহ বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি। কেন বারবার নেমে আসে ধ্বংস মানুষের জীবনে। কোনো জাতির মাঝে আল্লাহর অবাধ্যতা বেড়ে গেলে, অবাধে সবাই পাপাচারে লিপ্ত হলে আল্লাহ নানানভাবে তাদের শাস্তি দেন। কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে মহামারি পৃথিবীতে আল্লাহর একটি শাস্তি এবং কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি। ব্যাপক হারে মানুষ আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হলে, কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার মতো জঘন্য পাপ বেড়ে গেলে, আল্লাহ তাদের মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দেন, পৃথিবীতে গজব নাজিল করেন।

রাসুল (সা:) এরশাদ করেন, ‘'যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।" (ইবনে মাজাহ, ৪০১৯)

কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন আয়াতে দেখা যায় আমাদের নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণে পৃথিবীতে আজাব নেমে আসে। আল্লাহপাক বলেন, আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।' (আশ শুরা, ৩০)

আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, 'তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে।' (আন-নিসা, ৭৯)

আবার আল্লাহ উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'আর কারূন, ফেরাউন ও হামানকে (আমি ধ্বংস করেছি) এবং অবশ্যই তাদের কাছে মূসা গিয়েছিল প্রমানাদিসহ। অতঃপর তারা যমীনে অহংকার করেছিল; এতদসত্বেও তারা (আমার আযাব) এড়াতে পারেনি।' (আল আনকাবূত, ৩৯)

অতীতেও আল্লাহ তায়ালা পাপাচারের শাস্তি হিসেবে মহামারি প্রাদুর্ভাব ঘটান এবং সেসব জাতিকে প্রায় ধ্বংস করে দেন। আল কোরআনে অনেক বর্ণনা থাকলেও এখানে মাত্র কয়েকটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। এগুলো শুধুমাত্র ফেরাঊনী সম্প্রদায়ের উপরে আপতিত গজব সমূহ। জায়গা সংকুলানের জন্য সবগুলো তুলে ধরা হলো না।

দুর্ভিক্ষ:
মূসা (আঃ)-এর দো‘আ কবুল হওয়ার পর ফেরাঊনী সম্প্রদায়ের উপরে প্রথম নিদর্শন হিসাবে দুর্ভিক্ষের গজব নেমে আসে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তারপর আমি পাকড়াও করলাম ফেরাঊনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে, যাতে তারা উপদেশ হাছিল করে’ (আ‘রাফ ৭/১৩০)।

তূফান:
দুর্ভিক্ষের পরে একসময় ভরা মাঠ ও ভরা ফসল পেয়ে ফেরাঊনী সম্প্রদায় পিছনের সব কথা ভুলে যায় ও পুনরায় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে থাকে। ফলে তাদের উপরে গজব আকারে প্লাবন ও জলোচ্ছ্বাস নেমে আসে। যা তাদের মাঠ-ঘাট, বাগান-ফসল, ঘর-বাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা অহংকারে মত্ত হয়ে আবার শুরু করল বনী ইস্রাঈলদের উপরে যুলুম-অত্যাচার। ফলে নেমে এল তৃতীয় গজব।

পঙ্গপাল:
একদিন হঠাৎ হাজার হাজার পঙ্গপাল কোত্থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে ফেরাঊনীদের সব ফসল খেয়ে সাফ করে গেল। তারা তাদের বাগ-বাগিচার ফল-ফলাদি খেয়ে সাবাড় করে ফেলল। এমনকি কাঠের দরজা-জানালা, আসবাব-পত্র পর্যন্ত খেয়ে শেষ করল। অথচ পাশাপাশি বনু ইস্রাঈলদের ঘরবাড়ি, শস্যভূমি ও বাগ-বাগিচা সবই সুরক্ষিত থাকে। তারা কিছুদিন পর পূর্বের ন্যায় আবার ঔদ্ধত্য প্রদর্শন শুরু করল। ফলে নেমে এল পরবর্তী গযব ‘উকুন’।

উকুন:
‘উকুন’ সাধারণতঃ মানুষের মাথার চুলে জন্মে থাকে। তবে এখানে ব্যাপক অর্থে ঘুণ পোকা ও কেড়ি পোকাকেও গণ্য করা হয়েছে। যা ফেরাঊনীদের সকল প্রকার কাঠের খুঁটি, দরজা-জানালা, খাট-পালংক ও আসবাব-পত্রে এবং খাদ্য-শস্যে লেগেছিল। তাছাড়া দেহের সর্বত্র সর্বদা উকুনের কামড়ে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। এভাবে উকুন ও ঘুণপোকার অত্যাচারে দিশেহারা হয়েছিল।

ব্যাঙ:
বারবার বিদ্রোহ করা সত্ত্বেও দয়ালু আল্লাহ তাদের সাবধান করার জন্য ও আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য পুনরায় গজব পাঠালেন। এবার এল ব্যাঙ। ব্যাঙে ব্যাঙে ভরে গেল তাদের ঘর-বাড়ি, হাড়ি-পাতিল, জামা-কাপড়, বিছানা-পত্তর সবকিছু। বসতে ব্যাঙ, খেতে ব্যাঙ, চলতে ব্যাঙ, গায়ে-মাথায় সর্বত্র ব্যাঙের লাফালাফি। কোন জায়গায় বসা মাত্র শত শত ব্যাঙের নীচে তলিয়ে যেতে হত। এই নরম জীবটির সরস অত্যাচারে পাগলপারা হয়ে উঠল পুরা ফেরাঊনী জনপদ।

রক্ত:
তাদের অহংকার ও ঔদ্ধত্য চরমে উঠলে হঠাৎ একদিন দেখা গেল ‘রক্ত’। খাদ্য ও পানপাত্রে রক্ত, কূয়া ও পুকুরে রক্ত, তরি-তরকারিতে রক্ত, কলসি-বালতিতে রক্ত। একই সাথে খেতে বসে বনু ইস্রাঈলের থালা-বাটি স্বাভাবিক। কিন্তু ফেরাঊনীদের থালা-বাটি রক্তে ভরা। জল মুখে নেওয়া মাত্র গ্লাসভর্তি রক্ত। অহংকারী নেতারা বাধ্য হয়ে বনু ইস্রাঈলী মজলূমদের বাড়ীতে এসে খাদ্য ও পানি ভিক্ষা চাইত। কিন্তু যেমনি তাদের হাতে তা পৌঁছত, অমনি সেগুলো রক্তে পরিবর্তিত হয়ে যেত। ফলে তাদের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। না খেয়ে তাদের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেল।

প্লেগ:
রক্তের আজাব উঠিয়ে নেবার পরও যখন ওরা ঈমান আনলো না, তখন আল্লাহ ওদের উপরে প্লেগ মহামারী প্রেরণ করেন (আ‘রাফ ৭/১৩৪)। অনেকে এটাকে ‘বসন্ত’ রোগ বলেছেন। তাতে অল্প দিনেই তাদের সত্তর হাজার লোক মারা যায়। অথচ বনু ইস্রাঈলরা ভাল থাকে।

উপরোক্ত আজাব গুলো নাহয় অনেক আগের। প্রতি বছর আসে যায় বিভিন্ন নতুন নতুন নামে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এবারের আজাব বা গজব আসলো সামান্য একটি ভাইরাস দিয়ে। যার নাম করোনা ভাইরাস। যে ভাইরাস একটি ধুলিকণার চেয়েও অতি ক্ষুদ্র। যাকে খালি চোখেও দেখা যায়না। কেবলমাত্র অনুবিক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমেই দেখতে হয়। আর এই ভাইরাসের ভয়ে আজ সৃষ্টির সেরা কোটি কোটি মানুষ ভয়ে অস্থির। একটি দুটি দেশ নয় পৃথিবীর প্রায় শতাধিক দেশ আজ এই ভাইরাসের ভয়ে দিশেহারা। একবার মন থেকে চিন্তা করে দেখুন যে, সামান্য একটি ভাইরাসের যদি এত ক্ষমতা থাকে তাহলে তার সৃষ্টিকর্তার কি ক্ষমতা আছে যিনি এই আকাশ জমিনের যা কিছু আছে সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক। 

আর সাধারণ কারণে আল্লাহপাক আজাব দেন না। সাধারণ প্রজাদের কারণেও বড় আজাব আল্লাহপাক দেন না। আজাব দেন নেতৃত্বদের কৃতকর্মের জন্য। আল্লাহ বলেন, 'আর যখন আমি কোন জনপদ ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন তার সমৃদ্ধশালীদেরকে (সৎকাজের) আদেশ করি। অতঃপর তারা তাতে সীমালঙ্ঘন করে। তখন তাদের উপর নির্দেশটি সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি।' (আল ইসরা, ১৬)

দেশের নেতৃত্ব, সচ্ছল ও ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিরা আল্লাহর আদেশ লংঘন ও নির্দেশাবলী অমান্য করতে আরম্ভ করে এবং এদের দেখাদেখি অন্যরাও তাই করতে শুরু করে দেয়, আর এইভাবে জাতির মধ্যে আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যাপক হয়ে যায়। ফলে তারা শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত বিবেচিত হয়।

ইসলামের ভাষ্যমতে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে যায়, বেপরোয়া হয়ে ওঠে তখনই আল্লাহর গজব নেমে আসে শান্তির পৃথিবীতে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।' (আর রুম, ৪১)

বর্তমানে পাপ ও পতনের চরমে পৌঁছেও মানব সভ্যতা প্রতি মুহূর্তে নানান বিপর্যয়ের মুখোমুখী। এইডস, ডেঙ্গু, ইবোলা, নিপা, জিকা, কতো নাম-জাতের রোগেই না আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কোরআনে বলা হয়েছে, 'বড় শাস্তির পূর্বে তাদেরকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে।' (আস সাজদাহ, ২১)

আল্লাহর অবাধ্যতা, সীমালঙ্ঘন ও অবাধ পাপাচার মহামারির অন্যতম প্রধান কারণ হলেও শুধু পাপীরাই তাতে আক্রান্ত হয় না; বরং সৎ ও নেককার মানুষও তাতে আক্রান্ত হয়। মানুষের অন্যায় আচরণের কারণে আল্লাহর অবাধ্যতা এবং নাফরমানির কারণেই আজ পৃথিবীর সর্বত্র অশান্তি বিরাজ করছে এবং চতুর্দিকে বিপদের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে। বস্তুত আমাদের জন্য এ বিপদও কল্যাণকর হতে পারে, যদি আমরা এর দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করি এবং আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করি বা নিজেকে সংশোধন করতে পারি।

মহামারীতে আমাদের করণীয়ঃ

মহামারীতে আক্রান্ত এলাকা হতে পালানো নিষেধ। মহামারী প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'যে গজব বা শাস্তি বানী ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর উপর এসেছিলো, তার বাকী অংশই হচ্ছে মহামারী। অতএব, কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা হতে পালিয়ে এসো না। অপরদিকে কোন এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গাতে যেও না। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি)

তাই আমাদের উচিৎ যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারি ভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে। যেহেতু চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত সর্দি কাশি বা ঠান্ডার মতো তীব্র নিউমোনিয়া সিন্ড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়।

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদঃ মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো। (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

আল্লাহর কাছে দোয়া ও তাওবা করাঃ
মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো নিজের ভুল ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা, পাপ থেকে ফিরে আসা, নিজেদের কৃতকর্ম থেকে তাওবা করা। এই মুহূর্তে আমাদের সবার উচিত, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা। সর্বদা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকা। যেকোনো বিপদে বান্দার আল্লাহমুখী হওয়া এবং তাঁর কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় চাওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।' (আল-মুমিন : ৬০)

এ আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দুআ অন্যতম ইবাদত। আর এটা পরিহার করা আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করার নামান্তর। এ অহংকারের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো অহংকার হতে পারে না। কিভাবে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করতে পারে যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সব ধরনের জীবনোপকরণ দিয়েছেন, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং ভাল-মন্দের প্রতিদান দিয়ে থাকেন? (তুহফাতুয যাকিরীন, আশ-শাওকানী)

বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাইতে তাই দোয়াটি পড়া উচিৎ। 

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ

উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন সাইয়্যিল আসকাম'।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’ (আঃ দাঃ ২/৯৩ সঃ তিঃ ৩/১৮৪, সঃ নাঃ ৩/১১ ১৬)

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাঃ
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেন, ‘পবিত্র ঈমানের অংশ।’ হাত সর্বদা পরিষ্কার রাখুন। বাহিরে বের হলে মুখে বা নাকে হাত দেবেন না। বাসায় ফিরে হাত ধৌত করে খাবার স্পর্শ করবেন। রাস্তার পশু-পাখি ধরা থেকে বিরত থাকুন।

মুখ ঢেকে হাঁচি দেওয়াঃ
আল্লাহর রাসূল যখন হাঁচি দিতেন, হাত দিয়ে অথবা এক টুকরো কাপড় দিয়ে মুখ চেপে ধরতেন। (তিরমিযী)। এই ছোট্ট কাজটি যদি আমরা সচেতনভাবে পালন করি, তাহলে ধ্বংসাত্মক অনেক সংক্রামক ভাইরাসই প্রতিহত করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ!

ভীড় এড়িয়ে চলুনঃ
জনসমাগমস্থল (বাজার-রেস্টুরেন্ট-উপসনালয়-জনসভা ইত্যাদি) যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। ধর্মীয় আচার-আচরণ নিজের বাড়িতে পালন করুন। অনেক ইসলামি রাষ্ট্র ও কিন্তু এখন মানুষকে মসজিদে যেতে নিষেধ করছে। কাবা শরিফের ছবিটা দেখুন। যেখানে মানুষের জন্য দিনরাত ২৪ ঘণ্টার কোনো সময়ই ঠিকমতো হাঁটা যেত না, সেখানে কর্তৃপক্ষ এখন মানুষের প্রবেশ সীমিত করে দিয়েছে। মন্দির-গির্জা ইত্যাদিতে যেতে ও মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। করোনার প্রভাবে অনেক জায়গাতেই মসজিদে নামাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খোদ সৌদিতেও মসজিদে নববী ও মসজিদুল হারাম ব্যতীত সকল মসজিদে নামাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারটি অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। কেউ কেউ মনে করছেন এ সময় আরও বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে যাওয়া উচিত। তাই মসজিদ বন্ধ হওয়া একটি চক্রান্ত। আসলে সব সময়ই ব্যাপারটা ঠিক এরকম তা ভাবার কোনো কারণ নেই। এমনকি খোদ রাসূল (সা:) এর সময় ও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বৃষ্টি, ঝড় কিংবা প্রাকৃতিক বড় দুর্যোগের সময় মানুষ যেন বাড়িতে বসেই নামাজ আদায় করে সে ব্যাপারে বুখারীর স্পষ্ট হাদিস ও রয়েছে। আর এ সময় আজানে একটি বিশেষ অংশের পরিবর্তন করা হয় যা ইতোমধ্যে অনেক দেশেই শুরু হয়ে গিয়েছে। কাজেই যতকিছুই হোক মসজিদে নামায পড়তেই হবে এ ধারণা থেকে দ্রুত বের হয়ে আসা দরকার।

সঠিক চিকিৎসা করাঃ
যদি রোগের প্রকোপ বেশি বলে মনে হয় এবং সন্দেহ হয় যে আপনি আক্রান্ত হয়েছেন তাহলে দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।।

তাই আসুন সকলেই সেই সৃষ্টিকর্তাকে ভালোভাবে চেনার ও জানার চেষ্টা করি এবং তিনি আমাদের কাছে কি চান তা বোঝার চেষ্টা করি এবং তার আদেশ মতো নাফরমানি ও অবাধ্যতা, নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ছেড়ে দিয়ে সঠিক ও সোজা পথে চলার চেষ্টা করি। আল্লাহপাক আমাদেরকে ক্ষমা ও কবুল করুন। (আমীন)

© এম. রৌশন আলী 📝
📃 কোচবিহার।। 🙏


Facebook Comment