Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

প্রসঙ্গ: অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব/পূজা-পার্বণে মুসলিমদের যোগদান বা শুভেচ্ছা জ্ঞাপনঃ

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি যে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব-আয়োজনে কিছু মুসলিম অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে অংশগ্রহণ করছে। এমন কি অনেক ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ যথারীতি পোস্টার, ব্যানার, ফেইজবুক ইত্যাদির মাধ্যমে পূজা উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বিনিময় করে নিজেদেরকে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে প্রমাণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসলিমদের জন্য রঙের উৎসব হোলি, আলোর উৎসব দেওয়ালি, কেকের উৎসব ক্রিস্টমাস, বাকি পুজোপার্বন, গুরুপূর্ণিমা, বৌদ্ধপূর্ণিমা, ইস্টার, এই সব হিন্দু, ক্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, ইহুদিদের ধর্মের যে কোনো আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ ভাবে অবৈধ। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে র‍্যাগ ডে, অরিয়েন্টেশন, নবীনবরন গুলোয় আর স্ব স্ব ডিপার্টমেন্টের ফেস্টের দিনগুলোতে কথিত 'কালার ফেস্ট'-এর নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়ছে।  এছাড়াও ওই সব ধর্মের যে কোনো, দেবতা, চিহ্ন, দেব দেবী বা মনীষীদের ছবিতে মাল্যদান ইত্যাদির প্রতি মাথানত করে সম্মান করা সম্পূর্ণ ভাবে অবৈধ ও অধার্মিক নাজায়েজ কাজ।

আরো মারাত্মক বিষয় হচ্ছে, এক শ্রেণীর মানুষ “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এ ধরনের শ্লোগান দিয়ে অমুসলিমদের উৎসবাদির সর্বজনীনতা প্রমাণেও মরিয়া হয়ে উঠেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইসলামের মৌল শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞ অতি উৎসাহীরা এতে মহামারির মত আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি যেহেতু ঈমান-আক্কীদার সাথে সম্পৃক্ত, তাই কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট হওয়া বাঞ্জনীয়। কুরআন-সুন্নাহ গবেষণা করে মুসলিম মনীষীগণ বলেছেন: অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব, পূজা-পার্বণে মুসলিমদের অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

*প্রমাণাদি:*

*প্রথমত: কুরআনের দলীল*

ক. আল্লাহর বাণী: “(আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো) তারা যুর (অসার) কাজে যোগদান করে না”। (সূরা ফুরকান, আয়াত: ৭২)।

এ আয়াতে “যুর” এর ব্যাখ্যায় হযরত ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: ﺃﻧﻪ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ “যুর হচ্ছে, মুশরিকদের উৎসবাদি। অর্থাৎ আল্লাহর সৎ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা জেনে শুনে আজে-বাজে কথা ও কাজ দেখতে বা শুনতে অথবা তাতে অংশ গ্রহণ করে না। আর যদি কখনো তাদের পথে এমন কোন জিনিস এসে যায়, তাহলে তার প্রতি একটা উড়ো নজর না দিয়েও তারা এভাবে সে জায়গা অতিক্রম করে যেমন একজন অত্যন্ত সুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তি কোন ময়লার স্তুপ অতিক্রম করে চলে যায়। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর, কুরতুবী]

খ. আল্লাহর বাণী: “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত”। (আল-ইমরান: ৮৫)

“আর যদি তোমরা কুফরী কর, তবে (জেনে রেখো) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কাফের হয়ে পড়া পছন্দ করেন না”। (আযযুমার: ৭)

কাফিরদের উৎসবে অংশগ্রহণের অর্থ হলো, তাদের কুফর-শিরককে মেনে নেয়া, কিংবা তাতে সন্তোষ প্রকাশ করা। অতএব, তা কিছুতেই বৈধ হতে পারে না।

 গ. অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা (কখনো) ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। (কেননা) এরা নিজেরা (সব সময়ই) একে অপরের বন্ধু; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এদের কাউকে বন্ধু বানিয়ে নেয়, তাহলে সে অবশ্যই তাদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। আর আল্লাহ কখনো যালিম সম্প্রদায়কে পছন্দ করেন না” (সূরা আল-মাইদাহ: ৫১)।

“হে ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমরা (কখনো) আমার ও তোমাদের  দুশমনদেরকে নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, (এটা কেমন কথা,) তোমরা তাদের প্রতি বন্ধুত্ব দেখাচ্ছ। (অথচ) তোমাদের কাছে যে সত্য (দ্বীন) এসেছে তারা তা অস্বীকার করেছে”। (মুমতাহিনাহ: ১)

এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, কাফিরদের পূজায় অংশগ্রহণ তাদের প্রতি এই নিষিদ্ধ বন্ধুত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। যা একজন মুমিনের জন্য শোভা পায় না।

ঘ. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেন: “তোমরা পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে পরস্পর সাহায্য করো। গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনে কেউ কাউকে সাহায্য করো না”। (আল-মাইদাহ: ২)

মূর্তিপূজায় অংশগ্রহণ বা শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ইত্যাদি নিঃসন্দেহে গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনে সাহায্যের অন্তুর্ভুক্ত।

*দ্বিতীয়ত: হাদীসের দলীল:*

ক. রাসূল (স.) বলেন: “যে যেই জাতির সাথে সামঞ্জস্য রাখবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে” (আবু দাউদ, আহমাদ)। 

এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবাদিতে যোগদান করা প্রকারান্তরে তাদের সাথে ধর্মপালনে, বিশ্বাস-চিন্তায় সামঞ্জস্য রাখারই অন্তর্ভুক্ত। অতএব,তা বৈধ হতে পারে না।

অন্য হাদীসে রয়েছে, “প্রত্যেক জাতিরই ঈদ/উৎসব আছে। এটি (ঈদুল ফিতর/ ঈদুল আদহা) হলো আমাদের ঈদ” (মুসলিম)।

এই হাদীসের মর্মার্থ হলো, পূজা-পার্বণ এগুলো কোন সামাজিক বা জাতীয় রীতি অনুষ্ঠান নয়; এগুলো একান্তই ধর্মীয় উৎসব। বরং এসব আনুষ্ঠানিকতাই হলো তাদের ধর্ম। এখানে ধর্ম থেকে উৎসবকে, কিংবা উৎসব থেকে ধর্মকে আলাদা করার কোন সুযোগ নেই। ইসলামের ঈদ (ঈদুল ফিতর, ঈদুল আদহা)ও ধর্মের অবিচ্ছিন্ন অংশ। এ জন্য তা তাকবীর ও নামায দিয়ে শুরু হয়। অমুসলিমদের তাতে অংশ গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। কারণ, ঈমান ছাড়া নামাযের কোন দাম নেই। এছাড়াও, অমুসলিমরা মুসলিমদের ঈদের মৌলিক আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করে না। যেমন, কুরবানী করা। যেখানে (উদহারণস্বরূপ) হিন্দুধর্মে গরু জবাই করা, গরুর গোশত খাওয়া নিষেধ, সেখানে কিভাবে তাদের অংশগ্রহণ কল্পনা করা যেতে পারে? তদ্রূপ, যেখানে মূর্তি পূজা ইসলামের দৃষ্টিতে মহা অপরাধ, শিরক, সেখানে কিভাবে মুসলিমগণ যোগদান করতে পারে? অতএব, “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এ জাতীয় শ্লোগান সম্পূর্ণরূপে একটি মিথ্যা ও ঈমান বিধ্বংসী কথা।

মূলত বিষয়টি নিছক পার্থিব জাগতিক কোন বিষয় নয়; বিষয়টি হচ্ছে আক্কীদাহগত দ্বীনি বিষয়। তাছাড়া, ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন মনে করাও কুরআন বিরোধী কথা। কারণ, ইসলামই হচ্ছে সকল মানবতার পক্ষ থেকে আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র ধর্ম। সকল বিশ্ববাসির জন্য রহমত ও নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ (স.)। একমাত্র ইসলামের সর্বাত্মক চূড়ান্ত শাশ্বত জীবন ব্যবস্থাই সব মানুষের জন্য সমানভাবে কল্যাণকর। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে সুপ্রমাণিত।

খ. রাসূল (স.) বলেন: “আমি তোমাদের জন্য হাওদের (হাওযে কাওসার) কাছে অপেক্ষা করতে থাকবো। যে ব্যক্তিই আমার পাশ দিয়ে যাবে, সেই (সেখান থেকে ) পান করবে। আর যে তা পান করবে, কখনোই সে আর পিপাসার্ত হবে না। একটি কওম আমার কাছে আসতে থাকবে, আমি তাদেরকে চিনবো, তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তখন আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা টেনে দেয়া হবে। আমি বলবো, তারাতো আমার (উম্মতের) অন্তর্ভুক্ত। তখন বলা হবে, তুমি জানো না তারা তোমার পরে কী সব ঘটিয়েছে। তখন আমি বলবো, দূর হও, দূর হও তোমরা যারা আমার পরে ইসলামকে বিকৃত করেছিলে।” (বুখারী, মুসলিম)

যারা অমুসলিমদের উৎসবে যোগদান করাকে ইসলামের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশর করছে, তারা মূলত ইসলামকে বরং সত্যকে বিকৃত করছে। তারা পরকালে রাসূলের হাতে হাওদে কাওসারের পানি থেকে বিতাড়িত হবে।

গ. ইমাম আবু দাউদ  সাবিত বিন দাহহাক থেকে বর্ণনা করেছেন: "রাসূল (স.) এর যুগে এক ব্যক্তি বুওয়ানাহ নামক জায়গায় একটি উট জবাই করার জন্য মানত করেছিলো। অতঃপর সে আল্লাহর নবীর কাছে এসে বললো: আমি বুওয়ানাতে একটি উট জবাই করার মানত করেছি। তখন রাসূল (স.) তাকে বললেন: সেখানে কি কোন  জাহিলিয়্যাতের মুর্তির পূজা হয়? সাহাবাগণ বললেন: না। রাসুল (স.) আবার বললেন:  ঐ জায়গায় কি মুশরিকদের কোন উৎসব হয়? সাহাবাগণ বললেন: না। তখন রাসূল (স.) বললেন: তাহলে তোমার নাযর/মানত পূর্ণ করো। (জেনে রেখো) আল্লাহর নাফরমানির ব্যাপারে মানত করলে কিংবা যে মানুষের মালিকানাধীন নয়; এমন ব্যাপারে মানত করলে তা পূর্ণ করা যাবে না”। 

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুশরিকদের মুর্তিপূজার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাতো দূরের কথা, তারা যে দিন ও স্থানকে সম্মান করে সেগুলোকে সম্মান করা, এমনকি সেখানে গিয়ে মানত পূর্ণ করাও মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়।

ঘ. ‘উমার (রা.) বলেছেন: “তোমরা মুশরিক/মূর্তিপূজারীদের উৎসবের দিনে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করবে না; কারণ তখন তাদের উপর আল্লাহ ক্রোধ/গযব নাযিল হতে থাকে। (ইমাম বায়হাকী বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন)। 

ঙ. হযরত আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর বিন ‘আস (রা.) বলেছেন: “যারা মুশরিকদের ভূমিতে নির্মাণ করবে, তাদের মত উৎসব-অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাদের সাথে (ইসলাম পরিপন্থী কাজে) তাদের সাথে সামঞ্জস্য রাখবে, তারাই পরকালে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে”।

চ. হযরত ‘উমার (রা.) সিরিয়ার খ্রীষ্টানদের সাথে যে সন্ধি চুক্তি করেছিলেন, তাতে যে সব শর্ত আরোপ করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে এ কথাও ছিলো: “আহলুযযিম্মাহ (খ্রীষ্টানগণ) মুসলিমদের বাজর-ঘাট অর্থাৎ স্থানে তাদের ক্রশ এবং কোন ধর্মীয় বই-পুস্তক (গীর্জার) বাহিরে আনতে পারবেনা। তারা তাদের ঈদ-উৎসব প্রকাশ্যে সাধারণ জায়গায় পালন করতে পারবে না। (বায়হাকী)।

এর থেকে প্রমাণিত হয়, অমুসলিমগণ ইসলামী রাষ্ট্রে তাদের ঈদ-উৎসব ও একন্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিগুলো তাদের উপসনালয়ে পালন করতে পারবে। সাধারণ সব জায়গায় পারবে না। যাতে করে তাদের কুফরির নাপাকি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

ছ. তাছাড়া, মদীনায় ইয়াহুদীরা বসবাস করতো। তারা তাদের উৎসাবাদিও পালন করতো। কিন্তু কোন সাহাবী তাতে অংশ গ্রহণ করেছেন, এ রকম একটি বর্ণনাও নেই। বরং তাঁরা তাদের এই সব শিরকমূলক কর্মকান্ড ঘৃণা করতেন।

জ. আমাদের উচিত, আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়াহ করা। তিনি দয়া করে আমাদেরকে মুসলিম বানিয়েছেন। হিদায়াত দান করেছেন। আমরা ঘোষণা করেছি: “আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ (স.) কে নবী হিসেবে পেয়ে আমরা খুশী হয়েছি।” সুতরাং আমরা কী করে শিরকের অভিশাপের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারি? যে শিরক থেকে মাবতাকে মুক্তি দিতেই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। যে শিরকের প্রতি ঘৃণা ব্যক্ত করে স্বয়ং আল্লাহ বলছেন: “ওরা কি আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে শরীক স্থাপন করছে, যা কিছু সৃষ্টি করতে পারে না; ওদেরকেই বরং সৃষ্টি করা হয়েছে”। (আল-‘আরাফ: ১৯১)

“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোন জায়গায় নিক্ষেপ করল”। (সূরা আল-হাজ্জ: ৩১)

মূর্তিপূজা মূলত শয়তানের পূজা। এ জন্যই ইব্রাহীম (আ.) তাঁর বাবাকে বলেছিলেন: “হে বাবা! তুমি শয়তানের পূজা করো না”। [সূরা মারইয়াম: ৪৪]

মনে রাখতে হবে: আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন কাফিরদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তাদের মত না হয়ে যাই। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, “আহলে কিতাবের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর কাফির অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর তাদের পক্ষ থেকে হিংসাবশত (তারা) এরূপ করে থাকে। (সূরা আল-বাকারাহ:১০৯)

প্রখ্যাত মনীষী ইবনুল কায়্যীম (র.) বলেন: “কুফরীর সাথে একান্তভাবে সম্পৃক্ত কাফিরদের পরিচয়দায়ক বিষয়ে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে হারাম”।

*তৃতীয়ত: বুদ্ধিবৃত্তিক দলীল:*

অমুসলিমদের জীবনাচার ও বিশ্বাসের প্রতি আসক্তি ও সামঞ্জস্য  মুসলিমদেরকে ধ্বংস করে দেয়। পরিণামে মুসলিম উম্মাহ তার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, মৌলবিশ্বাস, জীবনাচার ও আত্মবোধের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ে। এর আধুনিক নাম “বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ”। এই যুদ্ধে পরাজিত হলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। এইতো সে দিন একজন এম পি স্কুলের কোমলমতি হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের কে দিয়ে সংবর্ধনার নামে এক প্রকার হিন্দুধর্মীয় পূজার মহড়া করালেন। চেতনার এই বিকৃতিবোধ এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। অমুসলিমদের জীবনাচার ও বিশ্বাস যেন মুসলিমদের মাঝে কোনভাবেই অনুপ্রবেশ করছে না সে জন্য তিন সময় নামায পড়া হারাম করা হয়েছে। জাহেলীযুগের দুই দিন পরিবর্তন করে অন্য দুই দিনে মুসলমানদের জন্য ঈদের প্রবর্তন করা হয়েছে। যাতে করে সময়গত সামঞ্জস্যও না পাওয়া যায়। সেথায় মূর্তিপুজার আয়োজনে মুসলিমরা যোগ দেবে ! এটা কি কল্পনা করা যায়?

অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে তাদের ধর্মীয় চালচলনের মধ্যে একাকার হয়ে যাওয়ার নাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নয়; বরং এর নাম হচ্ছে আত্মহনন। এটা কিন্তু মুসলিম নামধারী কিছু তথাকথিত পরজীবি বুদ্ধিজীবি ছাড়া অন্য কেউ বলে না। 
“ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এ কথা স্বয়ং অমুসলিমরাও বলে না। কারণ, তাহলে তাদেরকে আমাদের সাথে কুরবানীর গরু জবাই করতে হবে। ইসলাম অমুসলিমদের ধর্মগুলোকে সত্য মনে করে না। তবুও তাদেরকে দিয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতা। তাদেরকে জোরপূর্বক মুসলিম বানাবার অনুমতি দেয়নি। এমন কি তাদের দেবদেবীকে গালি দিতেও নিষেধ করেছে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার শিক্ষা দিয়েছে। তাদের জান-মালের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে নিবিঘ্নে তাদের ধর্মচর্চার জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে। নিম্নোক্ত আয়াত এবং হাদীসুগলোই এই সত্য অনুধাবনের জন্য যথেষ্ট:

ক. “(আল্লাহর) দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর জবরদস্তি নেই। (অর্থাৎ জোর করে কোন অমুসলিমকে মুসলিম বানানোা যাবে না)। (আল্-বাকারাহ:২৫৬)।
.
“হে রাসূল তুমি বলে দাও, সত্য তোমাদের রবের কাছ থেকে সমাগত। অতএব, যার ইচ্ছা সে ঈমান গ্রহণ করুক। যার ইচ্ছা সে অস্বীকার/কুফরা করুক। “ (আল- কাহফ: ২৯)

“তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে পৃথিবীর সবাই ঈমানদার হয়ে যেত। তুমি কি লোকদের জোর জবরদস্তি করবে যাতে তারা সবাই মুমিন হয়ে যায়”? (ইউনূস: ৯৯)।

“যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে কখনো ) করছে, তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, তাহলে তারা অজ্ঞতা বশত শত্রুতামূলক ভাবে আল্লাহকে  গালি দিবে”। (আল আন‘আম: ১০৮)

“যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে কখনো যুদ্ধ করেনি এবং কখনো তোমাদের নিজেদের বাড়িঘর থেকেও বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি দয়া দেখাতে ও তাদের সাথে ন্যায় আচরণ করতে আল্লাহ কখনো নিষেধ করেন না। অবশ্যিই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন”। (আল মুমতাহিনা: ৯)

“হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স.) যখন ইন্তেকাল করেছিলেন, তখন তাঁর বর্মটি ত্রিশ সা‘ যব ঋণ নেয়ার কারণে এক ইয়াহুদীর কাছে  বন্ধক ছিলো”।

“হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স.) কে এক ইয়াহুদী যুবক খিদমাত করতো। যুবকটি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাসূল (স.) তাকে দেখতে যান এবং তার শিওরের পাশে বসেন। তারপর বলেন, হে যুবক ইসলাম গ্রহণ করো। যুবক তখন তার বাবার দিকে তাকাতে লাগলো। সে তার মাথার পাশেই ছিল। বাবা তখন তাকে বললেন, বৎস, তুমি আবুল কাসিম (রাসূল) যা বলছেন, তা ই করো। অতঃপর ছেলেটি ইসলাম গ্রহণ করে। নবী (স.) তারপর চলে যান এবং বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি ছেলেটিকে জাহান্নামের আগুন থেকে উদ্ধার করেছেন” (বুখারী)।

অতএব, তাদের পূজায় না গেলেই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়ে যাবে কিংবা গেলেই তা বেড়ে যাবে, এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক চিন্তা। বরং এ জাতীয় কর্ম একদিকে যেমন আমাদের ঈমান ধ্বংস করে আমাদের কে মুশরিক বানিয়ে দেয়, কারণ, যেমন ধরুন, দূর্গা পূজার উৎসবে যোগদান মানেই হলো, দূর্গার প্রতি বিশ্বাস করা। প্রত্যক্ষভাবে হোক বা পরোক্ষভাবে হোক। এই পরোক্ষ ফল হয়ত বিলম্বেও হতে পারে। অন্যদিকে, এর মাধ্যমে সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। আর যেখানে সম্প্রদায়ই থাকে না, সেখানে সম্প্রীতি কোথায় থাকে?

বাস্তবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অর্থ হলো:

প্রত্যেক সম্প্রদায় ও ধর্মাবলম্বীগণ কর্তৃক নিজ নিজ বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠানে স্বাতন্ত্র্য লালন করা এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। পক্ষান্তরে, পরস্পর ধর্মীয় বিশ্বাস-আক্কীদায় হারিয়ে যাওয়াটা হবে এ রকম: “বিয়ে যার যার, বৌ সবার”। হ্যা, যদি কেউ নিজ ধর্ম ছেড়ে ইসলামে আসতে চায়, ইসলাম তাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু আসতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। ইসলাম থেকে কিছু আবার শিরক থেকে, কিছু কিংবা মানুষের বানানো আইন থেকে, কিছু এ জাতীয় খিচুরী মার্কা আকবরের দ্বীনে ইলাহীর স্থান ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের ডিকশোনারিতে থাকতে পারে, ইসলামে নেই। মক্কার মুশরিকরাও এটা চেয়েছিল। বলেছিল, মুহাম্মাদ! এসো আমরা মিলে মিশে (আধুনকি ভাষায়: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে) সহাবস্থান করি। কিছুদিন তুমি আমাদের মূর্তির পূজা করবে, আর কিছু দিন আমরা তোমার ইলাহের পূজা করবো!! কিন্তু এই প্রেক্ষিতে তাওহীদ এবং শিরক কখনো একত্রিত হতে পারে না, এই মহাসত্য নিয়ে নাযিল হলো সূরা কাফিরুন। মনে রাখতে হবে, ইসলামে প্রবেশের দুয়ার সকলের জন্য উম্মুক্ত। কিন্তু ইসলাম থেকে চলে যাওয়ার পথ চিররুদ্ধ। এটাই ইসলামে ধর্মীয় স্বাধীনতা। 

*উপসংহার:*

হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।" (সুনানে আবু দাউদ, ৪০৩১)

অন্য একটি বর্ণনায় খলীফা হযরত উমর রা. বলেছেন,  "তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাক।" (আসসুনানুল কুবরা, ১৮৮৬২)

অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ‘কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়ে থাকে।’ আরেকটি বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেছেন, "যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে।" (আসসুনানুল কুবরা, ১৫৫৬৩)

তবে এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘ্নে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। ইসলাম এতে পূর্ণ সমর্থন দেয় ও দায়িত্ব গ্রহণ করে।

ইসলামের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে তার ধর্ম পালন করুক। নিজস্ব পরিধির মধ্যে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা তার রয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং তাদের নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে থেকে এগুলো পালন করার জন্য ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেয়া হয়েছে ইসলামী খেলাফতের সময়গুলোতে। হযরত উমর রা. তাঁর শাসনামলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের كنيسة (কানীসা) বানানোর সুযোগও দিয়েছেন। সুতরাং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার এবং ধর্মীয় আচার-আচরণকে এক করে দেখার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব। এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব ও আনন্দও তাদের নিজস্ব। কিন্তু, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যদের ধর্মীয় কাজে যোগ দেওয়া, সেগুলোকে পছন্দ করা, সে উৎসবকে নিজের উৎসব মনে করার কোনো একটি বিষয়ই শরীয়ত কর্তৃক সমর্থিত নয়। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝার এবং সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

Facebook Comment