মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছাবার প্রয়োজনে আলাপ আলোচনা ও মৃদু তর্কানুষ্ঠান কাঙ্খিত পদ্ধতি হিসেবে অনুমোদিত। জ্যোতীর্ময় কুরআন বলছেঃ
আহবান করো (সবাইকে) তোমার প্রভূ-প্রতিপালকের পথে পান্ডিত্যপূর্ণ ও সৌন্দর্যমন্ডিত বাগ্মীতার সাথে এবং বিতর্ক করো তাদের সাথে এমনভাবে যা হৃদ্যতাপূর্ণ ও আকর্ষণীয়। (১৬:১২৫)
‘একজন অমুসলিমের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছানো’– সাধারণত এটাই যথেষ্ট বলে প্রতিয়মান হয় যে, শুধু তার ইতিবাচক দিকগুলোকে সামনে তুলে ধরা। কেননা অধিকাংশ অমুসলিম যুক্তিসংগত ও চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত ইসলামের মহাসত্যের সাথে একাত্ম হয়ে উঠতে পারেনা শুধু এই কারণে যে, এমন কিছু নেতীবাচক প্রশ্ন তাদের মনের গভীরে গেঁথে আছে যা উত্তরহীন হয়েই থেকে যায়। ফলে তাদের বিবেক-বুদ্ধি ইসলামের ‘মানব প্রকৃতি’ সম্মত ইতিবাচক বিষয়গুলোর দিকে প্রচন্ড আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারলেও সেই উত্তরহীন প্রশ্নগুলো পেছনে টেনে ধরে রাখে।
বিতর্কে বসলে ইসলামের জীবনমুখী, মানবতাবাদী, ইতিবাচক প্রকৃতির প্রতি একমত বলে জানিয়ে দেবার সাথে সাথে সেই একই নিঃশ্বাসে বলে ফেলবেঃ কিন্তু “তোমরা তো সেই মুসলমান যারা দুই-তিনটা বিয়ে করো”। “তোমরা তো সেই লোক যারা নারীকে অবরুদ্ধ করে পর্দার নামে ঘরে বন্দী করে রাখো” তোমরা হচ্ছ মৌলবাদী ইত্যাদি।
আমি ব্যক্তিগতভাবে অমুসলিম ভাইদেরকে উদাত্তকণ্ঠে বলতে চাই (ইসলাম সম্পর্কে তাদের ধারণা অত্যন্ত সীমিত তা ভুল হোক বা শুদ্ধ,যেখান থেকেই তারা পেয়ে থাক) তাদের এই অনুভূতি ভুল বা ভ্রান্ত। আমি তাদেরকে উৎসাহিত করি খোলা মন নিয়ে সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে। এবং আশ্বস্ত করি তাদেরকে যে, ইসলাম সম্পর্কে যে কোনো কটাক্ষ আমি খোলা মনে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
দা’ওয়াহর ক্ষেত্রে বিগত কয়েকটি বছরে আমার যে অভিজ্ঞাতা তাতে আমার উপলদ্ধি এখানে এসে দাঁড়িয়েছে যে, সাধারণ একজন অমুসলিম ইসলাম সম্পর্কে খুব বেশি হলে গোটা বিশেক প্রশ্ন করতে পারে। যখনই আপনি কোনো অমুসলিমকে প্রশ্ন করবেন, ইসলামের মধ্যে কি এমন ভুল আছে যা আপনি বোধ করেন? উত্তরে সে গড়গড় করে পাঁচ ছয়টা প্রশ্ন করে ফেলবে। যেকোনো ভাবে এগুলো ঐ কুড়িটা প্রশ্নের মধ্যেই গিয়ে পড়বে।
যুক্তিমসঙ্গত উত্তর অধিকাংশকে আশ্বস্ত করে
সাধারণভাবে ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত কুড়িটি প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত শক্তিশালী যুক্তি সহকারে বিবেক সম্মতভাবে দেয়া যেতে পারে এবং অধিকাংশ অমুসলিম এই সঙ্গত উত্তরের মাধ্যমে আশ্বস্ত হয়ে উঠতে পারেন। একজন মুসলমান যদি এই উত্তরগুলো মুখস্ত করেন অথবা অন্তত মনে রাখার চেষ্টা করেন-ইনশাআল্লাহ যে কোনো বিতর্কে তিনিই সফল হবেন। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ সত্যকে কোনো প্রতিপক্ষ সহসা মেনে না নিলেও অন্তত ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল ধারণাসমূহ দূর করে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক উর্ধ্বমুখী চিন্তাধারাকে নিষ্ক্রীয় করে দেয়া যেতে পারে। অত্যন্ত ব্যতিক্রম কিছু অমুসলিম এসব প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন রাখতে পারে। যার জবাবে হয়তো আরো কিছু তত্ত্ব ও তথ্যের প্রয়োজন পড়তে পারে।
প্রচার মাধ্যম যেসব ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করেছে
অধিকাংশ অমুসলিমদের মনে ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ যে ভ্রান্ত ধারণাগুলো বদ্ধমূল হয়েছে তার কারণ ইসলামের বিরুদ্ধে ওদের ভূল ও মিথ্যা ইতিহাস এবং তথ্যের নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ‘তথ্য-বোমা’ বিস্ফোরণ। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম প্রধানত ক্ষমতার মদো-মত্ত পশ্চিমা বিশ্বের নিয়ন্ত্রণে। হোক তা আন্তর্জাতিক উপগ্রহ চ্যানেল, বেতার কেন্দ্র, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন অথবা বই-পুস্তক। সাম্প্রতিক কালে ইন্টারনেট অত্যন্ত শক্তিশালী তথ্য-মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যমটি যদিও বিশেষ কারো নিয়ন্ত্রনে নয়। কিন্তু তবু, যে কেউ এর মধ্যে ইসলামের জঘন্য প্রচারণার পর্বত সমান আয়োজন দেখতে পাবে।
নিঃসন্দেহে অনেক সচেতন মুসলমান এ হাতিয়ারটি ইসলামের আসল চেহারা তুলে ধরার নিরন্তর চেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু বিরোধী প্রচারণার তুলনায় তা জোযন জোযন মাইল পেছনে পড়ে আছে। আমার বুক ভরা আশা যে, মুসলমানদের এই চেষ্টা দিন দিন আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে এবং তার ধারাবাহিকতা একদিন এমন অবস্থানে পৌঁছাবে যেখানে ওরা আজ অবস্থান করছে।
ভ্রান্ত ধারণাগুলো সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়
ইসলাম সম্পর্কে সাধারন প্রশ্নগুলো বিভিন্ন সময় ও যুগের প্রেক্ষিতে ভিন্ন। আমাদের নির্ধারিত কুড়িটি প্রশ্ন বর্তমান যুগ ও প্রেক্ষিতের ওপর। এক দশক আগে এই প্রশ্নমালা ছিল এর রকম এবং একদশক পরেই এই প্রশ্ন-মালা হয়তো পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এটা নির্ভর করে শুধুমাত্র প্রচার মাধ্যমের ওপর-কিভাবে সে তা প্রকাশ করছে।
ভুল ধারণাগুলো সারা বিশ্বে প্রায় একই রকম
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মানুষের সাথে মতবিনিময় করে দেখেছে- ইসলাম সম্পর্কে সাধারনভাবে এই কুড়িটি প্রশ্নই সব পায়গায় একই রকম। সমাজ সভ্যতা ও সংস্কৃতি ভেদে হয়ত দু’-একটি প্রশ্ন এর সাথে যুক্ত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকায় এর সাথে যুক্ত হবে ‘সুদের লেনদেনকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে কেন’?
এভাবে ভারতীয় সামাজিকতার প্রেক্ষিতে আমি এই কুড়িটির সাথে আরো একটি যোগ করেছি। যেমন ভারতীয় অমুসলিমদের প্রশ্ন-মুসলমানরা কেন এত আমিষ খাদ্য খায় বা তারা নিরামিষভোজী নয় কেন? এ প্রশ্নটি অন্তর্ভুক্তির বিশেষ কারণ হলো, বিশ্ব জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ ভারতীয়। অন্যকথায় পৃথিবীর শতকরা ২০% ভাগ মানুষ ভারতীয় বংশদ্ভুত এবং পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই তারা বসবাস করছে। তাই তাদের প্রশ্নগুলো বিশ্বব্যাপী অমুসলিদের প্রশ্নগুলোর মতোই সাধারণ পর্যায়ে উঠে এসেছে।
অসংখ্য অমুসলিম রয়েছে যারা ইসলামকে জানার জন্য অধ্যয়ন করছে
অসংখ্য অমুসলিম রয়েছে যারা ইসলামকে জানার জন্য অধ্যয়ন করে- এবং যারা করছে তাদের অধিকাংশই যেসব বই-পুস্তক পড়ছে তার লেখক পক্ষপাতদুষ্ট-ইসলামের সমালোচক। এদের বাড়তি সংজোযন হলো কুরআনে তারা পরস্পর বিরোধী কথা-বার্তা দেখতে পেয়েছে এবং কুরআন অবৈজ্ঞানিক ইত্যাদি।
ইসলাম সম্পর্কে কিছু ধারনা রাখেন এমন অমুসলিমদের সাধারণ কিছু প্রশ্নের জবাব এই শিরোনামে আমার ভাষণ, বই, ক্যাসেট ও সিডি আকারে সুরক্ষিত আছে। আগ্রহী ব্যক্তি তার যেকোন একটি সংগ্রহ করে, পড়ে বা শুনে নিতে পারেন।
ডাঃ জাকির নায়েক
সুত্রঃ কুরানের আলো