Time & Date::
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারী

কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা জঘন্য অপরাধ। আর যদি তা বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ হয় তাহলে অপরাধের মাত্রা আরো বেশি। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে কাবীরা গুনাহ। যা সহজে ক্ষমা হয় না। সম্পদ আত্মসাৎ করার পরিণামও খুব ভয়াবহ। এরূপ খিয়ানতকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসেন না। তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন। এমর্মে এরশাদ হচ্ছে- اِنَّ اللّٰہَ  لَا یُحِبُّ الۡخَآئِنِیۡنَ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা খিয়ানতকারীদেরকে ভালোবাসেন না’ (সূরা আল-আনফাল : ৫৮)। যাকে যে বিষয়ে দায়িত্বশীল নিয়োগ করা হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা উচিত। স্বীয় দায়িত্বে কোন প্রকার গাফিলতি করা উচিত নয়। কেননা ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’। [১]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮; আবুদাউদ, হা/২৯২৮; তিরমিযী, হা/১৭০৫; আহমাদ, হা/৫১৬৭; মিশকাত, হা/৩৬৮৫।

যাকে যে কাজের জন্য দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়েছে সে সম্পর্কে তাকে বিচারের মাঠে জবাবদিহিতা করতে হবে। যেখানে কোন রকম ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই স্ব স্ব দায়িত্ব আমনতদারিতার সাথে সঠিকভাবে পালন করা উচিত। যেন পরকালে জবাব দেয়া সহজ হয়।

*ন্যায়পরায়ণ শাসকের মর্যাদা*

ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়পরায়ণ শাসকের মর্যাদা অনেক বেশি। বর্ণিত হয়েছে- ইয়ায ইবনু হিমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, ‘জান্নাতী তিন প্রকার। (১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, যাকে ভাল কাজ করার তাওফীক্ব দেয়া হয়েছে। (২) ঐ ব্যক্তি যে প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিমের প্রতি দয়ালু ও ন¤্র-হৃদয় এবং¹a (৩) সেই ব্যক্তি যে বহু সন্তানের (গরীব) পিতা হওয়া সত্ত্বেও  হারাম ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকে’। [২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৬৫; আহমাদ, হা/১৮৩৬৬; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭৪৫৩; বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৩৫৯; মিশকাত, হা/৪৯৬০।

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘হাশরের মাঠে আল্লাহ সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে স্বীয় আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন। তন্মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে- ন্যায়পরায়ণ শাসক’। [৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৬০; তিরমিযী, হা/২৩৯১; নাসাঈ, হা/৫৩৮০; আহমাদ, হা/৯৬৬৩; মিশকাত, হা/৭০১।

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ন্যায় বিচারকগণ (ক্বিয়ামতের দিন) আল্লাহর নিকটে নূরের মিম্বারসমূহে মহা মহিমান্বিত দয়াময় প্রভুর ডানপার্শ্বে উপবিষ্ট থাকবেন। তাঁর উভয় হাতই ডান হাত (সমান মহিয়ান)। যারা তাদের শাসনকার্যে তাদের পরিবারের লোকদের ব্যাপারে এবং তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বসমূহের ব্যাপারে সুবিচার করে’। [৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২৭; আহমাদ, হা/৬৪৯২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৪৮৪; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৫১৬৯; মিশকাত, হা/৩৬৯০।

সঠিকভাবে স্বীয় দায়িত্ব পালনকারীর মর্যাদা অনেক বেশি। এমন ন্যায়পরায়ণ শাসক আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তাছাড়া জান্নাত লাভে ধন্য হবে। এমনকি বিচারের মাঠে আল্লাহর পাশে আসন লাভ করবে।

*অত্যাচারী শাসক নিকৃষ্ট ব্যক্তি*

জনগণের উপর অত্যাচরী শাসক খুবই নিকৃষ্ট। তাদের পরকালীন ফলাফলও অত্যন্ত কষ্টদায়ক। এরূপ শাসককে আল্লাহ তা‘আলা ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় নিকৃষ্ট দায়িত্বশীল হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে অধীনস্ত জনগণের প্রতি অত্যাচার করে। [৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩০; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৫১১; মিশকাত, হা/৩৬৮৮।

অপর এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! কোন ব্যক্তি যদি আমার উম্মতের সামান্য কাজের দায়িত্বশীল হয় তারপর সে অধীনস্ত লোকের প্রতি কঠোরতা করে আপনি তার উপর কঠোর হোন। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের সামান্য কাজের দায়িত্বশীল হয় তাদের উপর নরম হয় আপনি তার উপর নরম হোন’। [৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮২৮; আহমাদ, হা/২৪৬৬৬; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৫৩; ত্বাবারাণী আওসাত, হা/৯৪৪৯; মিশকাত, হা/৩৬৮৯।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির সাথে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হল) বুড়ো ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি’। [৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৭; আহমাদ, হা/১০২৩২; বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান, হা/৮১৫৫; মুসনাদে আবু আওয়ানাহ, হা/১১৪; ছহীহুল জামে‘, হা/৩০৬৯; মিশকাত, হা/৫১০৯।

অধীনস্ত জনগণের উপর অত্যাচারকারী শাসক সর্বাধিক নিকৃষ্ট দায়িত্বশীল। এরূপ শাসকের উপর আল্লাহ তা‘আলা রহম করেন না। তার উপর কঠোরতা আরোপ করেন। তাদের সাথে তিনি বিচার দিবসে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, কথাও বলবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

*আত্মসাৎকৃত বস্তু নিয়েই বিচারের মাঠে উঠবে*

অন্যের জিনিস আত্মসাৎ করা খুবই নোংরা স্বভাব। তারা মানসিকভাবে নীচু শ্রেণীর ব্যক্তির মধ্যে গণ্য। কোন রুচিশীল ভদ্র মানুষ এমন করতে পারে না। তাই তো যে যা আত্মসাৎ করবে, তাই নিয়ে বিচারের মাঠে উপস্থিত হবে।

‘*কোন নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে, তিনি খিয়ানত করবেন। আর যে লোক খিয়ানত করবে সে ক্বিয়ামতের দিন সেই খিয়ানত করা বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোন অন্যায় করা হবে না’ (সূরা আলে ইমরান : ১৬১)।*

হাদীছে এসেছে, আদী ইবনু আমিরা আল-কিন্দী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি যাকে তোমাদের কোন কাজের দায়িত্বশীল করি, অতঃপর সে সূচ পরিমাণ বস্তু বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ আত্মসাৎ করল, সেটাই হবে খিয়ানত। ক্বিয়ামতের দিন সেই বস্তু নিয়ে সে উপস্থিত হবে। [৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৩৩; আহমাদ, হা/১৭৭৫৯; ত্বাবারাণী কাবীর, হা/২৫৬; ছহীহুল জামে‘, হা/৬০২৪; ছহীহ আত-তারগীব, হা/৭৮১; মিশকাত, হা/১৭৮০।

অপর বর্ণনায় রয়েছে- আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ) আমাদের মাঝে বক্তব্য দেয়ার জন্য দাঁড়ালেন, তিনি খিয়ানত সম্পর্কে বক্তব্য দিলেন এবং খিয়ানতের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে পেশ করলেন। তারপর তিনি বললেন, ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে আমি এমন অবস্থায় পাব যে, তার কাঁধের উপর উট চিৎকার করতে থাকবে। সে বলবে, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আমাকে রক্ষা করুন। আমি বলব, আজ আল্লাহ্র সামনে তোমার জন্য সামান্য কিছু করার ক্ষমতা আমি রাখি না যা পূর্বেই বলেছি। ক্বিয়ামতের দিন আমি তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় পাব যে তার কাঁধের উপর ঘোড়া চিৎকার করতে থাকবে। সে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে রক্ষা করুন, আমি বলব, আজ আল্লাহর সামনে তোমার জন্য সামান্য কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই যা আমি পূর্বেই বলেছি। ক্বিয়ামতের দিন আমি যেন তোমাদের কাউকে এই অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে কাঁধের উপর একটি ছাগল বহন করছে এবং আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলব আমি কিছুই করতে পারব না। আমিতো তোমাকে আল্লাহর বিধান পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি।

ক্বিয়ামতের দিন আমি যেন তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে নিজের কাঁধের উপর চিৎকাররত একটি মানুষ বহন করে নিয়ে আসবে আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলব, আজ আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। আমি আল্লাহর বিধান তোমাকে পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি। ক্বিয়ামতের দিন আমি যেন তোমাদের কাউকে এ অবস্থায় দেখতে না পাই যে, সে নিজের কাঁধের উপর কাপড় ইত্যাদির এক খন্ড বহন করে নিয়ে আসছে। আর উহা ভীষণভাবে তার কাঁধের উপর দুলছে, তখন সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে সাহায্য করুন, আর আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। ক্বিয়ামতে আমি যেন তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় না দেখতে পাই যে, সে নিজের কাঁধের উপর অচেতন সম্পদ (সোনা চাঁদি) বহন করে নিয়ে আসছে। আর আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলব, আজ আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারব না। আমি তো তোমাকে আল্লাহর বিধান পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি। [৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০৭৩; আহমাদ, হা/৯৪৯৯; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৮৪৭; বায়হাক্বী, হা/৪৩৩০; মিশকাত, হা/৩৯৯৬।

*যে ব্যক্তি অন্যের বা রাষ্ট্রীয় সম্পদ হতে যে বস্তু আত্মসাৎ করবে হাশরের ময়দানে সেদিন তাই নিয়ে হাযির হবে। সেটা কোন প্রাণী হোক, স্থাবর সম্পদ হোক অথবা কোন বস্তু। যারা অন্যয়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগ করছে বা রাষ্ট্রের সম্পদ অত্মসাৎ করছে তাদের সেদিন অবস্থা হবে খুবই লজ্জাকর। যারা সরকারী ত্রাণ চুরি করছে তাদের এ বিষয়ে ভাবা উচিত। যারা ত্রাণের টাকা, চাল, ডাল, তেল প্রভৃতি জিনিস আত্মসাৎ করছে তাদেরকে এসব জিনিসি নিয়েই বিচারের মাঠে উপস্থিত হতে হবে। সেদিন সারা পৃথিবীর মানুষ দেখে আত্মসাৎকারীকে চিনতে পারবে। গোটা জাহানের মানুষের সামনে অপমান হতে বাঁচতে চাইলে এসব ফেরত দিয়ে তওবা করা উচিত।*

*আত্মসাতকারীর জন্য জান্নাত হারাম*

আত্মসাৎকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করা হয়েছে। তারা জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে- মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তি মুসলিমের দায়িত্ব গ্রহণের পর খিয়ানত অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। [১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৮০; আহমাদ, হা/২০৩০৬; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৪৯৫; দারেমী, হা/২৭৯৬; মিশকাত, হা/৩৬৮৬।

মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যার প্রতি আল্লাহ কোন দায়িত্ব অর্পণ করেন, অতঃপর সে সুষ্ঠুভাবে তা পালন করে না, সে জান্নাতের গন্ধ পাবে না। [১১]. ছহীহ বুখারী, হা/৭১৫০; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২২০৪; মিশকাত, হা/৩৬৮৭।

মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে কোন আমীর (শাসক) মুসলিমদের দেখাশুনার দায়িত্ব নিল, অতঃপর সে তাদের (সমস্যা দূর করার) চেষ্টা করল না এবং তাদের হিতাকাক্সক্ষী না, সে তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। [১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪২; ত্বাবারাণী কাবীর, হা/৫২৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৯৭৮; মুসনাদে আবী আওয়ানাহ, হা/৭০৪৩; ছহীহুল জামে‘, হা/৫৬৯৭।

কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি খিয়ানত বা আত্মসাৎ করা অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। দায়িত্বে নিযুক্ত হওয়ার পর সঠিকভাবে স্বীয় দায়িত্ব পালন না করলে জান্নাতের সুগন্ধিও লাভ করতে পারবে না। দায়িত্বশীলকে সদা-সর্বদা জনগণের সমস্যাবলী দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। নিজ দায়িত্বে কোন অবহেলা করা যাবে না। মানুষের সাথে মিশুক হতে হবে। তাদের পাশে থাকতে হবে। অন্যথা এই দায়িত্বই তার জন্য ভয়াবহতায় রূপ নিবে।

*আত্মসাৎকারীর বাসস্থান হবে জাহান্নাম*

আত্মসাৎকারী ব্যক্তির জান্নাতে ঠায় হবে না। বিধায় তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নামে। আত্মসাতের সম্পদ দিয়ে দুনিয়ায় কিছুটা সুখ ভোগ করেছে। পরকালে তাকে এই সুখের মাসুল পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বুঝিয়ে দিতে হবে।

খাওয়ালা আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় কিছু লোক আল্লাহর সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করবে। আর ক্বিয়ামতের দিন তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। [১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৩১১৮; আহমাদ, হা/২৭৩৫৯; বুলুগুল মারাম, হা/১৪৯৩; ছহীহুল জামে‘, হা/২০৭৩; কানযুল উম্মাল, হা/১৬৭৫৭; মিশকাত, হা/৩৯৯৫।

ওবাদাহ ইবনু ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গনীমতের এক ক্ষুদ্র কণা পরিমাণ জিনিস হাতে করে বললেন, ‘হে উপস্থিত জনগণ! আমার হাতের এই ক্ষুদ্র অংশ তোমাদের গনীমতের মালের অন্তর্ভুক্ত। সূঁচ পরিমাণ বা তার চেয়ে কম-বেশি সম্পদ কারো নিকট থাকলে তা পেশ কর। নিশ্চয় খিয়ানত (আত্মসাৎ) ক্বিয়ামাতের দিন খিয়ানতকারীর জন্য অপমান-অপদস্ত ও জাহান্নামের কারণ হবে’। [১৪]. ইবনু মাজাহ, হা/২৮৫০; মুসনাদে বাযযার, হা/২৭১৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯৮৫, হাদীছ ছহীহ।

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে বললেন, খায়বারের যুদ্ধের দিন ছাহাবীগণের একটি দল বাড়ী ফিরে আসছিলেন। ঐ সময় ছাহাবীগণ বললেন, অমুক অমুক শহীদ, শেষ পর্যন্ত এমন এক ব্যক্তিকে ছাহাবীগণ শহীদ বললেন, যার ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) বললেন, কখনো নয়, আমি তাকে জাহান্নামে দেখছি সে একটি চাদর অথবা আবায়া (এক ধরনের পোশাক) আত্মসাৎ করেছে’। [১৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৪; আহমাদ, হা/২০৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৮৫৭; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪০২২; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৩৪৬; মিশকাত, হা/৪০৩৪।

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী করীম (ﷺ)-এর গনীমতের মালের এক ব্যক্তি দায়িত্বশীল ছিল, যে কারকারা নামে পরিচিত। সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা করেন। ছাহাবীগণ তার নিকট গিয়ে দেখলেন সে একটি চাদর আত্মসাৎ করেছিল’। [১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০৭৪; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৪৯; আহমাদ, হা/৬৪৯৩; বায়হাক্বী কুবরা, হা/১৭৯৮২; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৩৪৪; মিশকাত, হা/৩৯৯৮।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, মিদ‘আম নামে একটি গোলাম রাসূল (ﷺ)-কে হাদিয়া দিয়েছিল। মিদ‘আম এক সময় রাসূল (ﷺ)-এর উটের পিঠের হাওদা নামাচ্ছিল এমতাবস্থায় একটি তীর এসে তাকে লাগে এবং সে মারা যায়। ছাহাবীগণ বলেন, তার জন্য জান্নাত। রাসূল (ﷺ) বললেন, কখনই নয়। আল্লাহ্র কসম, নিশ্চয় ঐ চাদরটি যেটি সে খায়বারের গনীমত বণ্টন করার পূর্বে আত্মসাৎ করেছিল সে চাদরটি জাহান্নামের আগুন তার উপর উত্তেজিত করছে। এ কথা শুনে একজন লোক একটি জুতার ফিতা বা দু’টি জুতার ফিতা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট নিয়ে আসল। রাসূল (ﷺ) বললেন, একটি বা দু’টি জুতার ফিতা আত্মসাৎ করলেও জাহান্নামে যাবে। [১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭০৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৮৫১; ছহীহ আত-তারগীব, হা/১৩৪৯; মিশকাত, হা/৩৯৯৭।

আত্মসাৎকারীর শেষ পরিণতি হবে জাহান্নাম। রাষ্ট্রে বা জনগণের সামান্য কোন জিনিস আত্মসাৎ করলেও পরিণাম একই। সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের জন্য হাদীছগুলো দিক নির্দেশক। আত্মসাৎ হলেই পরিণতি খুব ভয়ঙ্কর।

*হাশরের মাঠে আত্মসাৎকারীকে দৃষ্টান্ত স্বরূপ উপস্থাপন করা হবে*

আত্মসাৎ, খিয়ানত এবং বিশ্বাসঘাতকতা ভয়ঙ্কর অপরাধ। যারা দুনিয়ায় এগুলোর সাথে জাড়িত হবে, তাদেরকে বিচারের মাঠে সকলের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এমর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে- ইবনু উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য এক একটি পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং বলা হবে, ইহা উমুকের পুত্র উমুকের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক। [১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৭৮; আবুদাউদ, হা/২৭৫৬; তিরমিযী, হা/১৫৮১; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৭২; আহমাদ, হা/৫০৮৮; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭৩৪৩; বায়হাক্বী কুবরা, হা/১৮৬২৬; মিশকাত, হা/৩৭২৫।

আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের নিতম্ভের (পিছনে) নিকট তার বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা স্থাপন করা হবে’। [১৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৮; ছহীহুল জামে‘, হা/৫১৬৭; মিশকাত, হা/৩৭২৭।

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী পতাকা উত্তোলন করা হবে। সাবধান! প্রধান শাসকের বিশ্বাসঘাতকতার পতাকাই হবে সবচেয়ে বড়’। [২০]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৩৮; কানযুল উম্মাল, হা/৪৬৮৪; মিশকাত, হা/৩৭২৭।

ক্বিয়ামত দিবসে হাশরের মাঠে প্রত্যেক আত্মসাৎকারী ও বিশ্বাসঘাতকের অবস্থা হবে খুবই লজ্জাকর। তাদের আত্মসাতের পরিমাণ অনুযায়ী পিছনে পতাকা উড়তে থাকবে। যেখানে তাদের প্রত্যেকের পরিচয় উল্লেখ করা হবে। বিষয়টি কতটা নোংরা ও অপমানজনক তা আত্মসাৎকারীদের অনুধাবন করা প্রয়োজন। বিচারের মাঠে অপমান থেকে বাঁচতে চাইলে সকল প্রকার খিয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা বর্জন করা অপরিহার্য কর্তব্য।

সুধী পাঠক! যারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছি তাদের বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। জনগণের জিনিসি অন্যায়ভাবে ভোগ করতে তাদের বিবেকে বাধা দেয় না। গভীরভাবে এ হাদীছগুলো তাদের ভাবা প্রয়োজন। সামান্য সুখ যেন আজীবনের কান্নায় রূপ না নেয়। সকলে সময় থাকতে সাবধান হই।

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘কেউ কারো প্রতি যদি সম্মানের ব্যাপারে বা কোন কিছুর ব্যাপারে অত্যাচার করে থাকে তাহলে আজকেই সে যেন তা সমাধা করে নেয়, ঐ দিন আসার পূর্বে যে দিন তার নিকট কোন অর্থ-সম্পদ থাকবে না। ঐ দিন সৎ আমল থাকলে অন্যায় পরিমাণ নিয়ে নেয়া হবে। আর সৎ আমল না থাকলে তার পাপগুলো নিয়ে অপরাধীর উপর চাপিয়ে দেয়া হবে’। [২১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪৯; আহমাদ, হা/১০৫৮০; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭৩৬১; ছহীহ আত-তারগীব, হা/২২২২; মিশকাত, হা/৫১২৬।

*অনুমতি না নিয়ে সরকারি বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহার করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা করলে বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত কাজ করলে সেটা জায়েজ আছে কিনা?*

এটা পুরোপুরি নাজায়েজ ও হারাম একটি কাজ। কারণ এটা রাষ্ট্রের বা পুরো জাতির সম্পদ। এই সম্পদ অন্যায় ভাবে ব্যবহার করা কোনো ক্রমেই জায়েজ হবে না। এর সাথে সারা দেশের মানুষের হক্ব জড়িত। আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহারের তো কোনো প্রশ্নই আসে না।  

কোনো একজন ব্যক্তির থেকে কোনো সম্পদ অন্যায় ভাবে আত্মসাৎ করলে, ঐ ব্যক্তি যদি কখনো মাফ করে দেয় তাহলে আল্লাহ ঐ আত্মসাৎকারীকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু দেশের বা জাতীয় সম্পদ যদি কেউ জবরদখল করে বা আত্মসাৎ করে তাহলে পুরো দেশবাসীর কাছেই অপরাধী হয়ে থাকতে হবে। এটা অসম্ভব যে দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রত্যেক অপরাধীকে ক্ষমা করে দিবেন। তাই কিয়ামতের দিন পুরো দেশবাসীই ঐ আত্মসাৎকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন।

তাই বান্দার হক্বের ব্যাপারে আমাদের যেমন সচেতন হতে হবে, একই রকম ভাবে আমরা দেশের বা সমাজের কোনো সম্পদ অন্যায় ভাবে ব্যবহার করছি কিনা সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। যারা সরকারি রাস্তা, সরকারি গাছ, সরকারি জমি ইত্যাদি; ছলে, বলে, কৌশলে ভোগ-দখল করেন; কিয়ামতের দিন তাদেরকে কত কোটি মানুষের মুখোমুখি হতে হবে তা চিন্তা করা যায় কি?

এরকম কোনো প্রয়োজনে আমরা নিজেদের বাসা-বাড়ি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করা উচিৎ। অন্যের বাসা বা দোকান থেকে সংযোগ নিলে তাদেরকে কিছু পেমেন্ট উচিৎ। অনুরোধ করে আবদার করে হলেও তাদের অনুমতি ক্রমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা উচিৎ। অন্যথায় লক্ষ-কোটি মানুষের দাবীর নিচে আমাদেরকে থাকতে হবে। কিয়ামতের দিন নিজেদের নেক আমলগুলো ঐসকল দাবীদারকে দিয়ে দিতে হবে।

সরকার তো কোনো একক ব্যাক্তি নয়। অনেকগুলো মানুষ মিলে সরকার গঠন হয়। মোটকথা জনগণই সরকার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত জনগনই সরকারি প্রতিনিধি। এর মধ্যে যারাই জালিম হবে তাদের সবাইকেই কিয়ামতের মাঠে কৈফিয়ত দিতে হবে। এরা জনগনের উপর জুলুম করলে জনগণকে কিয়ামতের দিন সওয়াব দিয়ে দিতে হবে। সওয়াব শেষ হয়ে গেলে গুনাহের বোঝা বইতে হবে। এটা আমাদের সবার জন্যই সমান। সরকারী লোক হই বা আম জনতা হই। ততটুকু পাপই করা উচিত, যতটুকুর শাস্তি ভোগ করতে আমরা রাজি আছি।

আল্লাহ তা‘আলা সকল মুসলিমকে সামান্য থেকে সামান্যতর আত্মসাৎ করার মত জঘন্য অপরাধ থেকে বিরত থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

Facebook Comment