Time & Date:: 10:14:24 PM Sunday 27-04-2025
আসসালামু আলাইকুম। ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।। এই ওয়েব ব্লগটি সকল মুসলিম ভাইবোনদের জন্য উৎসর্গ করা হলো আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে নিয়মিত চোখ রাখুন।। কারও কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে অনুগ্রহ করে নিচে 'যোগাযোগ' লিংকে ক্লিক করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

কন্যা সন্তান আল্লাহর দেয়া বিশেষ নেয়ামত


কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট না হওয়া কারণ তাও আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। তাছাড়া কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট হওয়া যেমন ভাগ্যের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া তেমন জাহেলী যুগের লোকদের প্রথা সমর্থন করা। কারণ তারা মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে মন্দ মনে করতো। আল্লাহ বলেন, তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায়।" [ সুরা নাহল, ৫৮]
কন্যা সন্তান মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মাতা-পিতার জন্য একটি বিশেষ শ্রেষ্ট নেয়ামত। কন্যা সন্তানকে অশুভ মনে করা কাফিরদের বদস্বভাব। কন্যা সন্তানকে অপছন্দ করা খাটি মুমিনের পরিচায়ক নয়। কন্যা সন্তান অশুভ নয়, অকল্যানকর নয়। বরং কন্যা সন্তান জন্ম নেয়া খোশ কিসমতী ও সৌভাগ্যের নিদর্শন। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, "রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ঐ স্ত্রী স্বামীর জন্য অধিক বরকতময়, যার দেন-মোহরের পরিমান কম হয় এবং যার প্রথম সন্তান হয় মেয়ে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করল, অতঃপর সে তাকে (কন্যাকে) কষ্টও দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্ট ও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।” (মুসনাদে আহমদ, ১:২২৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান হবে, এবং সে তাদেরকে এলেম-কালাম, আদব-কায়দা শিক্ষা দিবে, এবং যত্নের সাথে প্রতিপালন করবে ও তাদের উপর অনুগ্রহ করবে, সে ব্যক্তির উপর অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেনঃ তোমরা কন্যা সন্তানকে গালী দিও না কারণ আমি নিজেই কন্যা সন্তানের পিতা।

উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা প্রমানিত হয় যে, কন্যা সন্তান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। সুতারাং কন্যা সন্তানকে বেশী করে ভালবাসুন। আদর-সোহাগ করুন আর মায়া-মমতা দিয়ে লালন-পালন করুন। সে তো আপনার কলিজার টুকরার টুকরো, দেহের এক বিশেষ অংশ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অসীম বানীর প্রতি লক্ষ্য রেখে কন্যা সন্তানকে পুত্রের চাইতে ও বেশী আদর যত্ন করুন। এখানে একটি বিষয় আলোচ্য হলো, কন্যা সন্তান আল্লাহ মহান প্রদত্ত নেয়ামত ঠিক কিন্তু পুত্র সন্তানও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। এই আলাচেনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কন্যা সন্তানের প্রতি বিরুপ মানসিকতা পরিহার করা। একমাত্র ছেলে সন্তানের কামনায় কন্যা সন্তানকে অবহেলার পাত্র না বনানো।

কন্যা সন্তানের প্রতি আদর যত্ন
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স) কন্যা সন্তানকে মানবীয় মর্যাদায় সমাসীন করেছেন এবং তার মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন। তার মেহনতী প্রচেষ্টায় বন্ধ হল কন্যা সন্তান হত্যা, তিনি দিলেন তাদের সম্মান বাড়িয়ে। যে সমাজে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো, সেই সমাজে নারীরা পেল মুক্তির দিশা। রাসুল (স) বললেন, কন্যা সন্তান যে ঘরে প্রথমে জন্মগ্রহণ করবে সেই ঘরে আল্লাহ তায়ালা রহমত নাজিল করবেন। ঘোষণা করে দিলেন যার একটি কন্যা সন্তান আছে সে একটি জান্নাতের মালিক। তিনি নিজে তার কন্যা সন্তানকে ভালবেসে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন কিভাবে ভালবাসতে হয় তাদের। কোথাও গেলে মেয়ে ফাতিমাকে বলে যেতেন, ফিরে আসলে প্রথমে মেয়ের সাথে দেখা করতেন। মেয়েকে না দেখলে তার মনটা ছটফট করত। তাই আলী (রা) কে উদ্দেশ্য করে দয়াল নবী (স) বললেন, "হে আলী, ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা, কখনো ফাতিমাকে কষ্ট দিবা না। কন্যা সন্তানই বিচার দিবসের জাহান্নামের অগুনের অন্তরায় হবে। হজরত আয়েশা (রা) বলেছেনযে বাবা-মা কন্যাদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে বিচারের দিবসে এই কন্যাগণই তার জন্য জাহান্নামের আগুনের অন্তরায় হবে।" (মিশকাত-৪৯৪৯)

কন্যা সন্তান জন্ম হওয়াটাকে আমাদের সমাজে জরিমানা মনে করা হয়। অযত্নে-অবহেলায় রাখা হয় কন্যা সন্তানকে। খাবার সহ জামাকাপড়ে দেওয়া হয় তাকে কষ্ট অথচ কন্যার কারণে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত দিবেন পিতামাতাকে। হজরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেন, এমন স্ত্রী উত্তম ও বরকতময় যার মোহরের পরিমাণ কম। এমন স্ত্রী উত্তম ও বরকতময় যার প্রথম সন্তান কন্যা। রাসুল (স) বলেন, ‘যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে, অতপর সে তাকে কষ্ট দেয়নি, তার উপর অসন্তুষ্ট  হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে প্রধান্য দেয়নি, তাহলে ঐ কন্যার কারণে আল্লাহ তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। (মুসনাদে আহমদ, ১:২২৩)

কোরআন শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পুত্র সন্তান দান করেন। কাউকে দান করেন কন্যা সন্তান। আবার কাউকে কোনো সন্তানই দেন না। এটা তাঁর ইখতিয়ার। অতএব, কারোর সন্তান জন্ম হলে আমাদের উচিত আনন্দের সাথে তাকে বরণ করে নিয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। হজরত জাবের (রা) বলেন, রাসুল (স) বলেছেন যার তিনটি কন্যা সন্তান হয়  আর সে তাদের লালন পালন করে তাদের প্রতি মমতা দেখায় এবং তাদের ভার বহন করে তাহলে তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত। প্রশ্ন করা হল যদি দুই জন  হয়? রাসুল (স) বললেন, দুই জন হলেও। হজরত জাবের (রা) বলেন, ধারনা করা হয় কেউ যদি নবীজিকে বলতেন যদি একজন হয় তাহলে নবীজি (স) বলতেন একজন হলেও।

অতএব, আসুন ভালবাসি কন্যা সন্তানকে, আদর যত্ন করি কন্যা সন্তানকে। রাসুল (স) বলেন, "যে পিতামাতা কন্যা সন্তানকে ভালভাবে লালন পালন করবে সে আর আমি এভাবে পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করব- এইবলে তিনি দুইটি আঙ্গুল ইশারা করে দেখালেন।" (তিরমিজি, ১৯২০)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কোরান ও হাদিসের বর্ণনা মেনে কন্যা সন্তানকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রদত্ত নেয়ামত করার এবং কন্যা সন্তানের সাথে ব্যবহার করার, নায্য প্রাপ্ত প্রদান করার ব্যাপারে কন্যা সন্তানকে উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করার তাওফিক দান করুন। সুম্মাআমীন।

Facebook Comment